০৬:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুরুষদের জন্য লাল ও হলুদ পোশাক পরিধান করার বিধান

 

✍️মাওলানা শেখ মিলাদ হোসাইন সিদ্দিকী হাফিজাহুল্লাহঃ ইসলামী শরীয়তের একটি মূলনীতি হল-যেকোন রঙের পোশাক পরতে শারঈ কোন বাধা নেই, যদি তাতে কোন ধর্ম, জাতি এবং লিঙ্গের সাদৃশ্য না থাকে। রাসূলুল্লাহ (এক্স) বলেন, ‘তোমরা খাও, পরিধান কর এবং দান কর, কিন্তু কোন অপচয় ও অহংকার করোনা।’ (সহীহ বুখারী হা/৫৭৮৩ তরমজাতুল বাব ‘লিবাস’ অধ্যায়-৭৭, অনুচ্ছেদ-১; সহীহ মুসলিম, হা/১০১৫; মিশকাত হা/৪২৮০; ২৭৬০)।

তবে বিভিন্ন কারণে ইসলামে কতিপয় পোশাক নিষিদ্ধ বা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সেগুলো হ’ল-১. পুরুষের জন্য রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ মিশ্রিত পোশাক। ২. পুরুষের জন্য মহিলাদের পোশাক ৩. মহিলাদের জন্য পুরুষদের পোশাক ৪. খ্যাতি ও বড়াই প্রকাশক পোশাক ৫. ভিন্ন ধর্মীয় পোশাক ৬. আঁটসাঁট পোশাক প্রভৃতি।

আলী ইবনু আবু তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাতে রেশম ও বাম হাতে স্বর্ণ নিয়ে বললেন,

إِنَّ هَذَيْنِ حَرَامٌ عَلَى ذكور أُمْتِي

‘এ দু’টি জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম।’ (আবু দাউদ, হা/৪০৫৭, ৪০৪০-৪০৫৩; নাসাঈ, হা/৫১৪৪; ইবনু মাজাহ, হা/৩৫৯৫, সনদ ছহীহ)। উক্ত হাদীসের আলোকে চার মাযহাবের প্রসিদ্ধ ওলামাদের সম্মতিক্রমেও এটা হারাম। (ফাৎহুল কাদীর, ১০ম খণ্ড, পৃ. ১৭; মাওয়াহিবুল জালীল, ২/১৮৯; আল-মুগনী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪২১)

ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, রেশমের বস্ত্র পুরুষের উপর হারাম এবং মহিলাদের জন্য বৈধ, এটাই আমাদের মতামত এবং জমহুর আলেমের মতামত। (শারহুন নববী আলা মুসলিম, ১৪তম খণ্ড, পৃ. ৩২)

★এবার আসুন হাদিসের আলোকে জানার চেষ্টা করি!

عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ نَهَانِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلاَ أَقُولُ نَهَاكُمْ عَنْ تَخَتُّمِ الذَّهَبِ وَعَنْ لُبْسِ الْقَسِّيِّ وَعَنْ لُبْسِ الْمُفَدَّمِ وَالْمُعَصْفَرِ وَعَنِ الْقِرَاءَةِ فِي الرُّكُوعِ .

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিষেধ করেছেন, আর আমি বলি না যে, তোমাদের নিষেধ করেছেন- সোনার আংটি রেশম মিশ্রিত কাপড়, গাঢ় লাল রং-এর কাপড় এবং কুসুম রং-এর কাপড় থেকে নিষেধ করেছেন এবং রুকু অবস্থায় কিরাআত থেকে।(নাসাঈ ১১৪৫)

আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন-

لَا أَرْكَبُ الْأُرْجُوَانَ، وَلَا أَلْبَسُ الْمُعَصْفَرَ، وَلَا أَلْبَسُ الْقَمِيصَ الْمُكَفَّفَ بِالْحَرِيرِ

‘আমি লাল রঙের জিনপোষে সওয়ার হই না, হলুদ (কুসুম) বর্ণের কাপড় পরি না এবং রেশম আটকানো জামা পরিধান করি না।…’ (আবু দাউদ ৪০৪৮)

লাল ও হলুদ রঙের পোশাকহজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَىَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ ‏ إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ فَلاَ تَلْبَسْهَا

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পরনে হলুদ রংয়ের (জাফরান রঙে) দুটি বস্ত্র দেখে বললেন, এগুলো কাফেরদের বস্ত্র। অতএব তুমি এসব পরবে না।’ (মুসলিম ২০৭৭)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

رَأَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَىَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ ‏”‏ أَأُمُّكَ أَمَرَتْكَ بِهَذَا ‏ قُلْتُ أَغْسِلُهُمَا‏ قَالَ ‏ بَلْ أَحْرِقْهُمَا

‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার গায়ে হলুদ রংয়ের দুটি বস্ত্র প্রত্যক্ষ করে বললেন, তোমার মা কি তোমাকে এ কাজে নির্দেশ দিয়েছেন? আমি বললাম, এ দুটি ধুয়ে ফেলি? তিনি বললেন, বরং দুটিকেই পুড়ে ফেল।’ (মুসলিম ২০৭৭)

ফাতওয়ায়ে শামী আদ্দুররুল মুখতার গ্রন্থে এসেছে…

وکرہ لبس المعصفر والمزعفر الأحمر والأصفر للرجال مفادہ أنہ لا یکرہ للنساء – إلی قولہ – ولا بأس بلبس الأثواب الأحمر ومفادہ أن الکراہۃ تنزیہۃ۔ (الدر المختار مع الشامي ۶؍۳۸۵ کراچی، ۹؍۵۱۵ زکریا، الفتاویٰ الہندیۃ ۴؍۱۹۲، فتاویٰ
قاضي خان ۳؍۴۱۲)

যার সারমর্ম হলো এই লাল এবং কাপড় রং এর কাপড় পরিধান করা মাকরুহে তানযিহি।

তবে যদি কোন পোশাকে লাল বা হলুদ রং এর পাশাপাশি যদি অন্য রং থাকে,তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে পুরুষদের জন্য এমন কাপড় পরিধান করা জায়েজ আছে।

সুতরাং যেহেতু পুরুষদের জন্য নিরেট লাল বা হলুদ কাপড় পরিধান করার ব্যাপারে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতভিন্নতা রয়েছে,তাই এজাতীয় পোশাক পরিধান না করাই উত্তম হবে।
(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)।

Tag :
About Author Information

সাভারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুস্থ অসুস্থদের আর্থিক সহায়তা প্রদান

পুরুষদের জন্য লাল ও হলুদ পোশাক পরিধান করার বিধান

প্রকাশের সময়ঃ ০৪:০৯:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

 

✍️মাওলানা শেখ মিলাদ হোসাইন সিদ্দিকী হাফিজাহুল্লাহঃ ইসলামী শরীয়তের একটি মূলনীতি হল-যেকোন রঙের পোশাক পরতে শারঈ কোন বাধা নেই, যদি তাতে কোন ধর্ম, জাতি এবং লিঙ্গের সাদৃশ্য না থাকে। রাসূলুল্লাহ (এক্স) বলেন, ‘তোমরা খাও, পরিধান কর এবং দান কর, কিন্তু কোন অপচয় ও অহংকার করোনা।’ (সহীহ বুখারী হা/৫৭৮৩ তরমজাতুল বাব ‘লিবাস’ অধ্যায়-৭৭, অনুচ্ছেদ-১; সহীহ মুসলিম, হা/১০১৫; মিশকাত হা/৪২৮০; ২৭৬০)।

তবে বিভিন্ন কারণে ইসলামে কতিপয় পোশাক নিষিদ্ধ বা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সেগুলো হ’ল-১. পুরুষের জন্য রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ মিশ্রিত পোশাক। ২. পুরুষের জন্য মহিলাদের পোশাক ৩. মহিলাদের জন্য পুরুষদের পোশাক ৪. খ্যাতি ও বড়াই প্রকাশক পোশাক ৫. ভিন্ন ধর্মীয় পোশাক ৬. আঁটসাঁট পোশাক প্রভৃতি।

আলী ইবনু আবু তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাতে রেশম ও বাম হাতে স্বর্ণ নিয়ে বললেন,

إِنَّ هَذَيْنِ حَرَامٌ عَلَى ذكور أُمْتِي

‘এ দু’টি জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম।’ (আবু দাউদ, হা/৪০৫৭, ৪০৪০-৪০৫৩; নাসাঈ, হা/৫১৪৪; ইবনু মাজাহ, হা/৩৫৯৫, সনদ ছহীহ)। উক্ত হাদীসের আলোকে চার মাযহাবের প্রসিদ্ধ ওলামাদের সম্মতিক্রমেও এটা হারাম। (ফাৎহুল কাদীর, ১০ম খণ্ড, পৃ. ১৭; মাওয়াহিবুল জালীল, ২/১৮৯; আল-মুগনী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪২১)

ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, রেশমের বস্ত্র পুরুষের উপর হারাম এবং মহিলাদের জন্য বৈধ, এটাই আমাদের মতামত এবং জমহুর আলেমের মতামত। (শারহুন নববী আলা মুসলিম, ১৪তম খণ্ড, পৃ. ৩২)

★এবার আসুন হাদিসের আলোকে জানার চেষ্টা করি!

عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ نَهَانِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلاَ أَقُولُ نَهَاكُمْ عَنْ تَخَتُّمِ الذَّهَبِ وَعَنْ لُبْسِ الْقَسِّيِّ وَعَنْ لُبْسِ الْمُفَدَّمِ وَالْمُعَصْفَرِ وَعَنِ الْقِرَاءَةِ فِي الرُّكُوعِ .

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিষেধ করেছেন, আর আমি বলি না যে, তোমাদের নিষেধ করেছেন- সোনার আংটি রেশম মিশ্রিত কাপড়, গাঢ় লাল রং-এর কাপড় এবং কুসুম রং-এর কাপড় থেকে নিষেধ করেছেন এবং রুকু অবস্থায় কিরাআত থেকে।(নাসাঈ ১১৪৫)

আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন-

لَا أَرْكَبُ الْأُرْجُوَانَ، وَلَا أَلْبَسُ الْمُعَصْفَرَ، وَلَا أَلْبَسُ الْقَمِيصَ الْمُكَفَّفَ بِالْحَرِيرِ

‘আমি লাল রঙের জিনপোষে সওয়ার হই না, হলুদ (কুসুম) বর্ণের কাপড় পরি না এবং রেশম আটকানো জামা পরিধান করি না।…’ (আবু দাউদ ৪০৪৮)

লাল ও হলুদ রঙের পোশাকহজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَىَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ ‏ إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ فَلاَ تَلْبَسْهَا

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পরনে হলুদ রংয়ের (জাফরান রঙে) দুটি বস্ত্র দেখে বললেন, এগুলো কাফেরদের বস্ত্র। অতএব তুমি এসব পরবে না।’ (মুসলিম ২০৭৭)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

رَأَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَىَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ ‏”‏ أَأُمُّكَ أَمَرَتْكَ بِهَذَا ‏ قُلْتُ أَغْسِلُهُمَا‏ قَالَ ‏ بَلْ أَحْرِقْهُمَا

‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার গায়ে হলুদ রংয়ের দুটি বস্ত্র প্রত্যক্ষ করে বললেন, তোমার মা কি তোমাকে এ কাজে নির্দেশ দিয়েছেন? আমি বললাম, এ দুটি ধুয়ে ফেলি? তিনি বললেন, বরং দুটিকেই পুড়ে ফেল।’ (মুসলিম ২০৭৭)

ফাতওয়ায়ে শামী আদ্দুররুল মুখতার গ্রন্থে এসেছে…

وکرہ لبس المعصفر والمزعفر الأحمر والأصفر للرجال مفادہ أنہ لا یکرہ للنساء – إلی قولہ – ولا بأس بلبس الأثواب الأحمر ومفادہ أن الکراہۃ تنزیہۃ۔ (الدر المختار مع الشامي ۶؍۳۸۵ کراچی، ۹؍۵۱۵ زکریا، الفتاویٰ الہندیۃ ۴؍۱۹۲، فتاویٰ
قاضي خان ۳؍۴۱۲)

যার সারমর্ম হলো এই লাল এবং কাপড় রং এর কাপড় পরিধান করা মাকরুহে তানযিহি।

তবে যদি কোন পোশাকে লাল বা হলুদ রং এর পাশাপাশি যদি অন্য রং থাকে,তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে পুরুষদের জন্য এমন কাপড় পরিধান করা জায়েজ আছে।

সুতরাং যেহেতু পুরুষদের জন্য নিরেট লাল বা হলুদ কাপড় পরিধান করার ব্যাপারে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতভিন্নতা রয়েছে,তাই এজাতীয় পোশাক পরিধান না করাই উত্তম হবে।
(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)।