
✍️মাওলানা শেখ মিলাদ হোসাইন সিদ্দিকী হাফিজাহুল্লাহঃ অবৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন করা হারাম। উপার্জিত হারাম সম্পদ উপার্জনকারীর দুনিয়া ও পরকালের কোনো উপকারেই আসে না। এমনকি হারাম অর্থের দান যেমনি আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না তেমনি হারাম উপার্জনের অর্থ রেখে মারা গেলেও সে সম্পদ হবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির পূঁজি।
★কোরআনের আলোকে…
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُلُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا رَزَقۡنٰکُمۡ وَاشۡکُرُوۡا لِلّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ اِیَّاہُ تَعۡبُدُوۡنَ
হে মুমিনগণ, আহার কর আমি তোমাদেরকে যে হালাল রিযক দিয়েছি তা থেকে এবং আল্লাহর জন্য শোকর কর, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত কর।
সূরা বাকারার ১৬৮ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ کُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا ۫ۖ وَّلَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّہٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ
হে মানুষ, যমীনে যা রয়েছে, তা থেকে হালাল পবিত্র বস্তু আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট শত্রু।
সূরা মুমিনূন এর ৫১ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন –
یٰۤاَیُّہَا الرُّسُلُ کُلُوۡا مِنَ الطَّیِّبٰتِ وَاعۡمَلُوۡا صَالِحًا ؕ اِنِّیۡ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ ؕ
হে রসূলগণ! পবিত্র বস্তু আহার কর, আর সৎ কাজ কর, তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমি পূর্ণরূপে অবগত।
★হাদিসের আলোকে…
ইবনে মাজাহ ২৭১ নং হাদিস সুনানে নাসায়ি এর ১৩৯ নং হাদিসে এসেছে-
عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ لاَ يَقْبَلُ اللَّهُ صَلاَةً بِغَيْرِ طُهُورٍ وَلاَ صَدَقَةً مِنْ غُلُولٍ ”
কুতায়বাহ্ (রহ.) ….. আবূল মালীহ সূত্রে তার পিতা উসামাহ্ ইবনু উমায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা পবিত্রতা ব্যতীত কোন সালাত গ্রহণ করেন না এবং অবৈধভাবে উপার্জিত মালের সদাক্বাহ্ গ্রহণ করেন না।
যার জীবন-জীবিকা হারাম, পেটে হারাম খাদ্য, পরনে হারাম পোশাক, সে অবস্থা থেকে তাওবা করে ও মানুষের হক আদায়ে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্যের আশা করা অনর্থক। কারণ দোয়া কবুল হওয়ার জন্য এগুলো সব হালাল হওয়া শর্ত।
হালাল উপায়ে অর্জিত সম্পদ কম হলেও তাতে বরকত ও কল্যাণ রয়েছে। তা থেকে সদকাকৃত সামান্য সম্পদও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে সদকাকারীর উপকারে আসবে।
সহিহ মুসলিম শরিফ এর ২২৩৩ নং হাদিসে এসেছে –
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ لاَ يَتَصَدَّقُ أَحَدٌ بِتَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ إِلاَّ أَخَذَهَا اللَّهُ بِيَمِينِهِ فَيُرَبِّيهَا كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ أَوْ قَلُوصَهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ أَوْ أَعْظَمَ ”
আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন ব্যক্তি তার হালাল ও পবিত্র উপার্জিত একটি খেজুর দান করলে আল্লাহ তা’আলা ডান হাতে তা গ্রহণ করেন এবং তোমাদের কেউ যেভাবে উটের বা ঘোড়ার বাচ্চা লালন পালন করে বড় করে থাকে, তিনিও সেভাবে এটা বাড়াতে থাকেন। অবশেষে তা পাহাড় অথবা এর চেয়েও অনেক বড় হয়।
কিন্তু হারাম উপায়ে অর্জিত পাহাড়সম সম্পদের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। বরকত নেই। তা থেকে অকাতরে খরচ করলেও তা কবুল হয় না।
হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি হারাম সম্পদ উপার্জন করবে, এরপর তা সদকা করবে—সেই সদকায় তার কোনো সওয়াব হবে না; বরং অবৈধ উপার্জনের পাপের বোঝা তার ঘাড়ে চেপেই থাকবে।’ (সহিহ্ ইবনে হিব্বান: ৩২১৬; মুসতাদরাকে হাকিম: ১৪৪০)
হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে- ১. হারাম সম্পদ থেকে দান করা যাবে না। দান করলেও তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। ২. হারাম সম্পদ নিজ কাজে ব্যয় করলেও তাতে বরকত হবে না। ৩. উত্তরাধিকারদের জন্য রেখে গেলেও তা হবে তার জন্য জাহান্নামের জ্বালানি।
মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর হাদিসের ওপর আমল করে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন থেকে বিরত থাকলে মানুষের দুনিয়া ও পরকালের প্রতিটি কাজে আসবে সফলতা। আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে হালাল উপার্জনের মাধ্যমে দুনিয়ার সচ্ছলতা ও পরকালের সফলতা দান করুন।