০২:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিধর্মীদের উৎসবে মুসলমানদের অংশগ্রহণ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

 

✍️মাওলানা শেখ মিলাদ হোসাইন সিদ্দিকী হাফিজাহুল্লাহঃ

ভূমিকা:মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে এ পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে একমাত্র তাঁরই ইবাদতের নিমিত্তে সৃষ্টি করেছেন।
📖সূরা যারিয়াত ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন…
وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ.
অনুবাদ:আমি জ্বিন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা আমারই ‘ইবাদাত করবে।

যুগে যুগে তিনি অসংখ্য নবী ও রাসূলকে প্রেরণ করেছেন, কিতাবসমূহ অবতরণ করেছেন যাতে মানবজাতি তাঁর স্পষ্ট পরিচয় লাভ করতে সক্ষম হয় এবং তাঁর ইবাদত করে এবং তাঁর একত্বের স্বীকৃতি দেয়। ফলে সম্পূর্ণরূপে একমাত্র তাঁরই বিধান যেন বাস্তবায়িত হয়। সমস্ত প্রার্থনা নিবেদন যেন তাঁরই উদ্দেশ্যে হয়। আর এসবের বিপরীতমুখী কোন কর্মকান্ড যেন সম্পন্ন না করা হয়। কারণ এগুলোর বিপরীত বিশ্বাস ও কর্মকান্ডই শিরক তথা তাঁর সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্ত করা।অন্য কথায়, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ইলাহ বা মা‘বূদ সাব্যস্ত করা শিরক। মূলতঃ শিরক হচ্ছে সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করা। স্রষ্টা হওয়ার জন্য যেসব গুণাবলী প্রয়োজন, সেগুলোর ক্ষেত্রে কোন সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে তুলনা করলে, সে মুশরিক হয়ে যাবে। যে কাজগুলো অমুসলিমরা করে থাকে।শিরক হল জঘন্যতম গোনাহ। যার কোন ক্ষমা নেই। শিরক মিশ্রিত যেকোন আমল ইসলামের দৃষ্টিতে মূল্যহীন এবং আল্লাহর নিকটে তা প্রত্যাখ্যাত। কেউ যদি জীবনে একটি শিরকও করে এবং তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে, তাহ’লে এই একটিমাত্র শিরকই তার ঈমান ও জীবনের যাবতীয় সৎকর্মকে নিষ্ফল করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। এ ধরনের লোকদের ঈমান ও আমলের পরিণতি সম্পর্কে,
📖আল্লাহ তা‘আলা সূরা কাহাফ এর ১০৩-১০৪ নং আয়াতে ইরশাদ করেন….
قُلۡ هَلۡ نُنَبِّئُكُمۡ بِالۡاَخۡسَرِیۡنَ اَعۡمَالًا
اَلَّذِیۡنَ ضَلَّ سَعۡیُهُمۡ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ هُمۡ یَحۡسَبُوۡنَ اَنَّهُمۡ یُحۡسِنُوۡنَ صُنۡعًا.
অনুবাদ:বলুন,আমি তোমাদেরকে কি সংবাদ দেব নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে কারা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত? তারা সেসব লোক দুনিয়ার জীবনে যাদের চেষ্টা-সাধনা ব্যর্থ হয়ে গেছে আর তারা নিজেরা মনে করছে যে, তারা সৎকর্ম করছে’।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
وَ قَدِمۡنَاۤ اِلٰی مَا عَمِلُوۡا مِنۡ عَمَلٍ فَجَعَلۡنٰهُ هَبَآءً مَّنۡثُوۡرًا
অনুবাদ:আর আমি তাদের আমলের দিকে অগ্রসর হব, অতঃপর তা (তাওহীদ শূন্য হওয়ার কারণে) বিক্ষিপ্ত ধূলিকণার ন্যায় উড়িয়ে দিব’ সূরা [ফুরক্বান আয়াত:২৩]

★একজন মুসলিম হিসেবে হিন্দুদের কালী পূজা, দুর্গাপূজা ও অন্যান্য পূজা উপলক্ষে সেখানে যাওয়া ও অংশগ্রহণ করার বিধান….

একজন মুসলিমের জন্য অমুসলিমদের ধর্মীয় যে কোন উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় ও তাতে অংশগ্রহণ করা নিষিদ্ধ। এবার হোক সেটা ব্যবসায়িক দোকান নিয়ে অথবা স্বাভাবিক ভাবে। কেননা তাদের অনুষ্ঠান উপলক্ষে যোগদান তাদের বাতিল ধর্মবিশ্বাসকে সমর্থন করা হয়, যা হারাম।

📖আল্লাহ সূরা আল ইমরান এর ৮৫ নং আয়াতে ইরশাদ করেন…
وَ مَنۡ یَّبۡتَغِ غَیۡرَ الۡاِسۡلَامِ دِیۡنًا فَلَنۡ یُّقۡبَلَ مِنۡهُ ۚ وَ هُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ.
অনুবাদ:আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো তার সেই দ্বীন কবূল করা হবে না এবং আখেরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
তাছাড়া হিন্দুদের পূজা, মন্দির বা গির্জায় মহান রাজাধিরাজ আল্লাহকে অপমান করা হয় এবং মূর্তিকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করা হয়। যা স্পষ্ট শিরক।

📖সূরা আল-বাক্বারা এর ২২ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন…
الَّذِیۡ جَعَلَ لَكُمُ الۡاَرۡضَ فِرَاشًا وَّ السَّمَآءَ بِنَآءً ۪ وَّ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخۡرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرٰتِ رِزۡقًا لَّكُمۡ ۚ فَلَا تَجۡعَلُوۡا لِلّٰهِ اَنۡدَادًا وَّ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ.
অনুবাদ:যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ ক’রে তদ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন, কাজেই জেনে বুঝে কাউকেও আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করো না।

মহান আল্লাহর নিকট শির্কের চেয়ে বড় কোনো অপরাধ আর নেই। শিরক এত ভয়ানক অপরাধ যাতে মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি ক্রোধান্বিত হন এবং এই অপরাধ তিনি ক্ষমা করবেন না বলে দ্ব্যর্থ হীন ভাবে ঘোষণা করেছেন।

📖সূরা নিসা এর ৪৮ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন…
اِنَّ اللّٰهَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَكَ بِهٖ وَ یَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِكَ لِمَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّشۡرِكۡ بِاللّٰهِ فَقَدِ افۡتَرٰۤی اِثۡمًا عَظِیۡمًا.
অনুবাদ:আল্লাহ্‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করেন না; এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে দেন।’’

📚আবু দাউদ ও মিশকাত শরীফ এর ৪৩৪৭ নং হাদিসে এসেছে…
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন…
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد.
অনুবাদ:‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’

📚তিনি আরো বলেন…তিরমিযি শরিফ এর ২৬৯৫ নং হাদিসে এসেছে…
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا لَا تَشَبَّهُوا بِالْيَهُودِ وَلَا بِالنَّصَارَى فَإِنَّ تَسْلِيمَ الْيَهُودِ الْإِشَارَةُ بِالْأَصَابِعِ وَتَسْلِيمَ النَّصَارَى الْإِشَارَةُ بِالْأَكُفِّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
অনুবাদ:আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর পিতামহ হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছাড়া অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য করো না। কেননা ইয়াহূদীরা অঙ্গুলির ইশারায় সালাম দেয়, আর খ্রিষ্টানরা হাতের তালু দ্বারা সালাম করে।

🛑✅রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে গেছেন এই বলে যে, ‘‘শীঘ্রই আমার উম্মতের কিছু লোক মূর্তিপূজা করবে এবং কিছু লোক মূর্তি পূজারীদের সাথে মিশে যাবে।’’
[ইবনু মাজাহ৩৯৫২]

উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সাবধান করে বলে গেছেন, ‘তোমরা মুশরিকদের (যারা মূর্তি বা অন্য কিছুকে আল্লাহর সাথে শরিক করে) উৎসবের দিনগুলোতে তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না। কারণ, তখন তাদের উপর আল্লাহর গজ*ব অবতীর্ণ হতে থাকে।’
[ইমাম বাইহাকি, সুনানুল কুবরা: ১৮২৮৮]

সাহাবীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আলিম হিসেবে বিবেচিত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘‘যে শির্কের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সেও মুশরিক।’’ [ইমাম কুরতুবি,আল জামি’ লি-আহকামিল কুরআন: ৮/৯৪; সাবুনি, সফওয়াতুত তাফাসির: ৪৯১]

★পরিশেষে বলবো…
অন্য ধর্মের ধর্মীয় উপাসনা ও উৎসব পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মুসলিম সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে তারা যেন তাদের ধর্ম-কর্ম নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা। তাদের প্রতি কটুক্তি বা অসহযোগিতামূলক কোনো আচরণ করাও কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয়, যেমনিভাবে তাদের উৎসবে অংশগ্রহণ ও শুভেচ্ছা জানানোও বৈধ নয়।
এক ধর্মের সাথে অপর ধর্মের অনুসারীদের সহাবস্থান এবং অন্য ধর্মের অনুসারীদের আপন আপন পূজা-আরাধনা নির্বিঘ্নে পালন করতে সহযোগিতার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত পরিষ্কার। ইসলামের স্পষ্ট নীতি হচ্ছে, যে কোনো ধর্মাবলম্বী নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে তার ধর্ম পালন করুক। ইসলামি রাষ্ট্রেও নিজস্ব পরিধির মধ্যে তার ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা তার রয়েছে। ইসলাম এক্ষেত্রে কোনো প্রকার অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। বরং ইসলামি খেলাফতের সময়গুলোতে অমুসলিমদেরকে তাদের নিজস্ব গণ্ডির ভেতরে থেকে তাদের ধর্মীয় উপাসনাগুলো পালন করার জন্য ইসলামী সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো মুসলমানের জন্য অন্য ধর্মের কোনো উৎসবে যোগদান করা, সেগুলোকে পছন্দ করা, সেসব
নিজেদের উৎসব মনে করা হত্যাদির কোনো সুযোগ নেই।

আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকার শিরক ও বিদআত থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

হরিরামপুরে বিএনপির পক্ষ হতে শারদীয় দূর্গা পূজায় বিভিন্ন মন্ডপ পরিদর্শন করেন হাজী আব্দুল হান্নান মৃধা

বিধর্মীদের উৎসবে মুসলমানদের অংশগ্রহণ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

প্রকাশের সময়ঃ ০৬:৪৩:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

 

✍️মাওলানা শেখ মিলাদ হোসাইন সিদ্দিকী হাফিজাহুল্লাহঃ

ভূমিকা:মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে এ পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে একমাত্র তাঁরই ইবাদতের নিমিত্তে সৃষ্টি করেছেন।
📖সূরা যারিয়াত ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন…
وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ.
অনুবাদ:আমি জ্বিন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা আমারই ‘ইবাদাত করবে।

যুগে যুগে তিনি অসংখ্য নবী ও রাসূলকে প্রেরণ করেছেন, কিতাবসমূহ অবতরণ করেছেন যাতে মানবজাতি তাঁর স্পষ্ট পরিচয় লাভ করতে সক্ষম হয় এবং তাঁর ইবাদত করে এবং তাঁর একত্বের স্বীকৃতি দেয়। ফলে সম্পূর্ণরূপে একমাত্র তাঁরই বিধান যেন বাস্তবায়িত হয়। সমস্ত প্রার্থনা নিবেদন যেন তাঁরই উদ্দেশ্যে হয়। আর এসবের বিপরীতমুখী কোন কর্মকান্ড যেন সম্পন্ন না করা হয়। কারণ এগুলোর বিপরীত বিশ্বাস ও কর্মকান্ডই শিরক তথা তাঁর সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্ত করা।অন্য কথায়, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ইলাহ বা মা‘বূদ সাব্যস্ত করা শিরক। মূলতঃ শিরক হচ্ছে সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করা। স্রষ্টা হওয়ার জন্য যেসব গুণাবলী প্রয়োজন, সেগুলোর ক্ষেত্রে কোন সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে তুলনা করলে, সে মুশরিক হয়ে যাবে। যে কাজগুলো অমুসলিমরা করে থাকে।শিরক হল জঘন্যতম গোনাহ। যার কোন ক্ষমা নেই। শিরক মিশ্রিত যেকোন আমল ইসলামের দৃষ্টিতে মূল্যহীন এবং আল্লাহর নিকটে তা প্রত্যাখ্যাত। কেউ যদি জীবনে একটি শিরকও করে এবং তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে, তাহ’লে এই একটিমাত্র শিরকই তার ঈমান ও জীবনের যাবতীয় সৎকর্মকে নিষ্ফল করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। এ ধরনের লোকদের ঈমান ও আমলের পরিণতি সম্পর্কে,
📖আল্লাহ তা‘আলা সূরা কাহাফ এর ১০৩-১০৪ নং আয়াতে ইরশাদ করেন….
قُلۡ هَلۡ نُنَبِّئُكُمۡ بِالۡاَخۡسَرِیۡنَ اَعۡمَالًا
اَلَّذِیۡنَ ضَلَّ سَعۡیُهُمۡ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ هُمۡ یَحۡسَبُوۡنَ اَنَّهُمۡ یُحۡسِنُوۡنَ صُنۡعًا.
অনুবাদ:বলুন,আমি তোমাদেরকে কি সংবাদ দেব নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে কারা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত? তারা সেসব লোক দুনিয়ার জীবনে যাদের চেষ্টা-সাধনা ব্যর্থ হয়ে গেছে আর তারা নিজেরা মনে করছে যে, তারা সৎকর্ম করছে’।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
وَ قَدِمۡنَاۤ اِلٰی مَا عَمِلُوۡا مِنۡ عَمَلٍ فَجَعَلۡنٰهُ هَبَآءً مَّنۡثُوۡرًا
অনুবাদ:আর আমি তাদের আমলের দিকে অগ্রসর হব, অতঃপর তা (তাওহীদ শূন্য হওয়ার কারণে) বিক্ষিপ্ত ধূলিকণার ন্যায় উড়িয়ে দিব’ সূরা [ফুরক্বান আয়াত:২৩]

★একজন মুসলিম হিসেবে হিন্দুদের কালী পূজা, দুর্গাপূজা ও অন্যান্য পূজা উপলক্ষে সেখানে যাওয়া ও অংশগ্রহণ করার বিধান….

একজন মুসলিমের জন্য অমুসলিমদের ধর্মীয় যে কোন উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় ও তাতে অংশগ্রহণ করা নিষিদ্ধ। এবার হোক সেটা ব্যবসায়িক দোকান নিয়ে অথবা স্বাভাবিক ভাবে। কেননা তাদের অনুষ্ঠান উপলক্ষে যোগদান তাদের বাতিল ধর্মবিশ্বাসকে সমর্থন করা হয়, যা হারাম।

📖আল্লাহ সূরা আল ইমরান এর ৮৫ নং আয়াতে ইরশাদ করেন…
وَ مَنۡ یَّبۡتَغِ غَیۡرَ الۡاِسۡلَامِ دِیۡنًا فَلَنۡ یُّقۡبَلَ مِنۡهُ ۚ وَ هُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ.
অনুবাদ:আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো তার সেই দ্বীন কবূল করা হবে না এবং আখেরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
তাছাড়া হিন্দুদের পূজা, মন্দির বা গির্জায় মহান রাজাধিরাজ আল্লাহকে অপমান করা হয় এবং মূর্তিকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করা হয়। যা স্পষ্ট শিরক।

📖সূরা আল-বাক্বারা এর ২২ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন…
الَّذِیۡ جَعَلَ لَكُمُ الۡاَرۡضَ فِرَاشًا وَّ السَّمَآءَ بِنَآءً ۪ وَّ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخۡرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرٰتِ رِزۡقًا لَّكُمۡ ۚ فَلَا تَجۡعَلُوۡا لِلّٰهِ اَنۡدَادًا وَّ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ.
অনুবাদ:যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ ক’রে তদ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন, কাজেই জেনে বুঝে কাউকেও আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করো না।

মহান আল্লাহর নিকট শির্কের চেয়ে বড় কোনো অপরাধ আর নেই। শিরক এত ভয়ানক অপরাধ যাতে মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি ক্রোধান্বিত হন এবং এই অপরাধ তিনি ক্ষমা করবেন না বলে দ্ব্যর্থ হীন ভাবে ঘোষণা করেছেন।

📖সূরা নিসা এর ৪৮ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন…
اِنَّ اللّٰهَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَكَ بِهٖ وَ یَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِكَ لِمَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّشۡرِكۡ بِاللّٰهِ فَقَدِ افۡتَرٰۤی اِثۡمًا عَظِیۡمًا.
অনুবাদ:আল্লাহ্‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করেন না; এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে দেন।’’

📚আবু দাউদ ও মিশকাত শরীফ এর ৪৩৪৭ নং হাদিসে এসেছে…
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন…
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد.
অনুবাদ:‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’

📚তিনি আরো বলেন…তিরমিযি শরিফ এর ২৬৯৫ নং হাদিসে এসেছে…
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا لَا تَشَبَّهُوا بِالْيَهُودِ وَلَا بِالنَّصَارَى فَإِنَّ تَسْلِيمَ الْيَهُودِ الْإِشَارَةُ بِالْأَصَابِعِ وَتَسْلِيمَ النَّصَارَى الْإِشَارَةُ بِالْأَكُفِّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
অনুবাদ:আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর পিতামহ হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছাড়া অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য করো না। কেননা ইয়াহূদীরা অঙ্গুলির ইশারায় সালাম দেয়, আর খ্রিষ্টানরা হাতের তালু দ্বারা সালাম করে।

🛑✅রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে গেছেন এই বলে যে, ‘‘শীঘ্রই আমার উম্মতের কিছু লোক মূর্তিপূজা করবে এবং কিছু লোক মূর্তি পূজারীদের সাথে মিশে যাবে।’’
[ইবনু মাজাহ৩৯৫২]

উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সাবধান করে বলে গেছেন, ‘তোমরা মুশরিকদের (যারা মূর্তি বা অন্য কিছুকে আল্লাহর সাথে শরিক করে) উৎসবের দিনগুলোতে তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না। কারণ, তখন তাদের উপর আল্লাহর গজ*ব অবতীর্ণ হতে থাকে।’
[ইমাম বাইহাকি, সুনানুল কুবরা: ১৮২৮৮]

সাহাবীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আলিম হিসেবে বিবেচিত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘‘যে শির্কের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সেও মুশরিক।’’ [ইমাম কুরতুবি,আল জামি’ লি-আহকামিল কুরআন: ৮/৯৪; সাবুনি, সফওয়াতুত তাফাসির: ৪৯১]

★পরিশেষে বলবো…
অন্য ধর্মের ধর্মীয় উপাসনা ও উৎসব পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মুসলিম সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে তারা যেন তাদের ধর্ম-কর্ম নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা। তাদের প্রতি কটুক্তি বা অসহযোগিতামূলক কোনো আচরণ করাও কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয়, যেমনিভাবে তাদের উৎসবে অংশগ্রহণ ও শুভেচ্ছা জানানোও বৈধ নয়।
এক ধর্মের সাথে অপর ধর্মের অনুসারীদের সহাবস্থান এবং অন্য ধর্মের অনুসারীদের আপন আপন পূজা-আরাধনা নির্বিঘ্নে পালন করতে সহযোগিতার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত পরিষ্কার। ইসলামের স্পষ্ট নীতি হচ্ছে, যে কোনো ধর্মাবলম্বী নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে তার ধর্ম পালন করুক। ইসলামি রাষ্ট্রেও নিজস্ব পরিধির মধ্যে তার ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা তার রয়েছে। ইসলাম এক্ষেত্রে কোনো প্রকার অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। বরং ইসলামি খেলাফতের সময়গুলোতে অমুসলিমদেরকে তাদের নিজস্ব গণ্ডির ভেতরে থেকে তাদের ধর্মীয় উপাসনাগুলো পালন করার জন্য ইসলামী সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো মুসলমানের জন্য অন্য ধর্মের কোনো উৎসবে যোগদান করা, সেগুলোকে পছন্দ করা, সেসব
নিজেদের উৎসব মনে করা হত্যাদির কোনো সুযোগ নেই।

আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকার শিরক ও বিদআত থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন।