০৫:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অনৈতিক ভাবে ফ্ল্যাট গ্রহনের অভিযোগ

  • Reporter Name
  • প্রকাশের সময়ঃ ১২:০৬:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১০৩ বার পড়া হয়েছে

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে ‘বিনে পয়সায়’ সেন্ট্রাল লন্ডনে একটি অ্যাপার্টমেন্ট দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক আবাসন ব্যবসায়ী, যার সঙ্গে টিউলিপের খালা, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগসূত্র থাকার খবর এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে।

যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্র যাচাই করে তৈরি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

২০০৪ সালে বিনামূল্যে পাওয়া লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার দুই বেডরুমের ওই ফ্ল্যাটটি এখনো টিউলিপের মালিকানায় রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপের ওই ফ্ল্যাটটি কেনা হয় ২০০১ সালের জনুয়ারি মাসে। তখন এর দাম ছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (পাউন্ডের বিপরীতে টাকার দর অনুযায়ী ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা)। গত আগস্ট মাসে ওই ভবনেই একটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয় ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (প্রায় ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা)।

টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) হিসেবে দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

সম্প্রতি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টিউলিপকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দেশটির মন্ত্রিসভা কার্যালয়ের প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস টিম (পিইটি)। তবে দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে সম্পত্তি কেনার অভিযোগ রয়েছে।

তবে লন্ডনে ফ্ল্যাট উপহার নিয়ে টিউলিপ কোনো অন্যায় করেনি বলে দাবি করেছেন তার একজন মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, টিউলিপের ওই ফ্ল্যাট পাওয়া বা অন্য কোনো সম্পত্তি অর্জনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার খবর ‘ভুল’।

আবদুল মোতালিফ কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাট কেনার কথা স্বীকার করেছেন। তবে পরে সেটি নিয়ে কী করেছেন, তা নিয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে কিছু বলতে চাননি।

এই ঘটনার কথা জানেন এমন একজন্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফের দুর্দিনে তাকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন টিউলিপের মা-বাবা। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিজের মালিকানায় থাকা ‘একটি সম্পত্তি’ টিউলিপকে দিয়েছিলেন।

যুক্তরাজ্যের ভোটার তালিকার তথ্য অনুযায়ী টিউলিপ কিংস ক্রস ফ্ল্যাট পাওয়ার পর কিছুদিন সেখানে ছিলেন। পরে তার ভাইবোনরা বেশ কয়েক বছর সেখানে বসবাস করতেন। এমপি হওয়ার জন্য টিউলিপ তার হলফনামায় দুটি ফ্ল্যাটের ভাড়া থেকে আসা আয়ের কথা ঘোষণা করেছেন।

বর্তমানে ৭০ বছর বয়সি আবদুল মোতালিফ দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে বসবাস করেন। ভোটার নিবন্ধনসংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা গেছে, কিংস ক্রস এলাকার ওই ফ্ল্যাট টিউলিপকে দেওয়ার আগে মঈন গণি নামের এক আইনজীবীকে সেখানে থাকতে দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ। মঈন গণির সঙ্গে শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে। তবে যোগাযোগ করা হলেও মঈন গণি কোনো মন্তব্য করেননি।

ওই এলাকায় মোতালিফের ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বসবাস করেন। মজিবুলের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে মোতালিফের ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বসবাস করেন। মজিবুলের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

মোতালিফ এবং মজিবুল দুজনই একই ঠিকানায় বসবাস করার কথা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন।

যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্র অনুযায়ী, টিউলিপ যুক্তরাজ্যে এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগেই কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাট পান। এর অর্থ হলো নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য তাকে এই ফ্ল্যাটের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে হয়নি।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

শরীরে ২১টি ছররা গুলি নিয়ে যন্ত্রণাময় জীবন-যাপন করছেন ছাত্রদল নেতা ফয়সাল

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অনৈতিক ভাবে ফ্ল্যাট গ্রহনের অভিযোগ

প্রকাশের সময়ঃ ১২:০৬:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে ‘বিনে পয়সায়’ সেন্ট্রাল লন্ডনে একটি অ্যাপার্টমেন্ট দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক আবাসন ব্যবসায়ী, যার সঙ্গে টিউলিপের খালা, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগসূত্র থাকার খবর এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে।

যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্র যাচাই করে তৈরি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

২০০৪ সালে বিনামূল্যে পাওয়া লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার দুই বেডরুমের ওই ফ্ল্যাটটি এখনো টিউলিপের মালিকানায় রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপের ওই ফ্ল্যাটটি কেনা হয় ২০০১ সালের জনুয়ারি মাসে। তখন এর দাম ছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (পাউন্ডের বিপরীতে টাকার দর অনুযায়ী ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা)। গত আগস্ট মাসে ওই ভবনেই একটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয় ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (প্রায় ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা)।

টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) হিসেবে দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

সম্প্রতি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টিউলিপকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দেশটির মন্ত্রিসভা কার্যালয়ের প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস টিম (পিইটি)। তবে দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে সম্পত্তি কেনার অভিযোগ রয়েছে।

তবে লন্ডনে ফ্ল্যাট উপহার নিয়ে টিউলিপ কোনো অন্যায় করেনি বলে দাবি করেছেন তার একজন মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, টিউলিপের ওই ফ্ল্যাট পাওয়া বা অন্য কোনো সম্পত্তি অর্জনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার খবর ‘ভুল’।

আবদুল মোতালিফ কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাট কেনার কথা স্বীকার করেছেন। তবে পরে সেটি নিয়ে কী করেছেন, তা নিয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে কিছু বলতে চাননি।

এই ঘটনার কথা জানেন এমন একজন্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফের দুর্দিনে তাকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন টিউলিপের মা-বাবা। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিজের মালিকানায় থাকা ‘একটি সম্পত্তি’ টিউলিপকে দিয়েছিলেন।

যুক্তরাজ্যের ভোটার তালিকার তথ্য অনুযায়ী টিউলিপ কিংস ক্রস ফ্ল্যাট পাওয়ার পর কিছুদিন সেখানে ছিলেন। পরে তার ভাইবোনরা বেশ কয়েক বছর সেখানে বসবাস করতেন। এমপি হওয়ার জন্য টিউলিপ তার হলফনামায় দুটি ফ্ল্যাটের ভাড়া থেকে আসা আয়ের কথা ঘোষণা করেছেন।

বর্তমানে ৭০ বছর বয়সি আবদুল মোতালিফ দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে বসবাস করেন। ভোটার নিবন্ধনসংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা গেছে, কিংস ক্রস এলাকার ওই ফ্ল্যাট টিউলিপকে দেওয়ার আগে মঈন গণি নামের এক আইনজীবীকে সেখানে থাকতে দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ। মঈন গণির সঙ্গে শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে। তবে যোগাযোগ করা হলেও মঈন গণি কোনো মন্তব্য করেননি।

ওই এলাকায় মোতালিফের ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বসবাস করেন। মজিবুলের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে মোতালিফের ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বসবাস করেন। মজিবুলের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

মোতালিফ এবং মজিবুল দুজনই একই ঠিকানায় বসবাস করার কথা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন।

যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্র অনুযায়ী, টিউলিপ যুক্তরাজ্যে এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগেই কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাট পান। এর অর্থ হলো নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য তাকে এই ফ্ল্যাটের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে হয়নি।