০২:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নীলফামারীতে সন্তান ফিরে পেতে আদালতের দ্বারস্থ গর্ভধারিণী মা

  • Reporter Name
  • প্রকাশের সময়ঃ ০৭:৪৮:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৩৭ বার পড়া হয়েছে

সহিদুল ইসলাম বিভাগীয় প্রতিনিধি রংপুর: “সন্তানকে এক মুহূর্ত চোখের আড়াল করতেও পারি না। অথচ আজ সে আমার কাছেই নেই,”—কথাগুলো বলেন মুন্নি আক্তার, যিনি তার চার বছর বয়সী কন্যাসন্তানকে ফিরে পেতে এখন আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার এক নির্যাতিত মা।

ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালে, যখন ডোমার উপজেলার দক্ষিণ মটুকপুর সাহেবপাড়া গ্রামের মো. ফজর আলীর ছেলে আবু শাহিনের সঙ্গে ইসলামী শরিয়ত ও রেজিস্ট্রিকৃত কাবিননামার মাধ্যমে মুন্নি আক্তারের বিয়ে হয়। সংসার জীবনে এক কন্যা সন্তান— শাহিমা আক্তার জন্ম হয়। তবে সন্তানের জন্মের পরপরই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট।

মুন্নি আক্তারের অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার নিকট ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করতে থাকে। গরিব বাবার পক্ষে সে টাকা জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়লে শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। একপর্যায়ে জোরপূর্বক তালাকনামায় স্বাক্ষর নেওয়া হয় তার কাছ থেকে।

পরবর্তীতে আবু শাহিন নিজের ‘ভুল’ বুঝতে পেরে পুনরায় মুন্নিকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে ঘোষণা সহকারে বিজ্ঞ নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহ পুনঃনিশ্চিত করেন। সেখানে এক বছর সংসার চলার পর তারা আবার ফিরে আসেন গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু ফিরে আসার পর পুরনো ইতিহাস ফিরে আসে। ফের শুরু হয় নির্যাতন, সেটা আরও বেশি মাত্রায়।

চলতি বছরের ২ মার্চ, আবু শাহিন, তার পিতা ফজর আলী এবং মাতা সালমা বেগম পুনরায় ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা মুন্নি আক্তারকে নির্মমভাবে মারধর করে এবং তার শিশুকন্যাকে জোরপূর্বক নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। আশপাশের লোকজন এসে মুন্নিকে উদ্ধার করে ডোমার হাসপাতালে ভর্তি করেন।

শারীরিক সুস্থতার পর মুন্নি আক্তার সন্তানের খোঁজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়ভাবে একাধিকবার চেষ্টা করেন। কিন্তু সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় তিনি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।

বিজ্ঞ আমলি আদালত নং ৫ ডোমার, নীলফামারীতে দায়ের করা( পিটিশন নম্বর ৭৪/২০২৫ ডোমার ) মামলায় তিনি তার শিশু কন্যা শাহিমা আক্তারকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

মুন্নি আক্তারের কণ্ঠে কেবলই একটিই আর্তি—“আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন, সে আমার বুকের ধন, আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারি না।”

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, এই ঘটনা শুধুই এক মায়ের আর্তনাদ নয়, এটি আমাদের সামাজিক ও আইনগত কাঠামোর সামনে এক কঠিন প্রশ্নও বটে—একটি শিশুর জীবনের মৌলিক অধিকার কি তার মায়ের কোল থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা?

মুন্নি আক্তারের বাবা মোজাম্মেল হক জানান, “ওরা আমার মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আমি একজন গরিব, আমি আদালতের কাছে ন্যায় বিচার চাই।”

মুন্নি আক্তার জানান, “আমি আমার শিশু সন্তানকে আমার কোলে ফেরত চাই। আমি একজন মা, সন্তানের জন্য আমার বুক হাহাকার করছে। আমার এই আর্তনাদ ঐ পাষন্ডরা বুঝবে না। আমি নির্যাতনের শিকার। আমি ন্যায় বিচারের মাধ্যমে আমার সন্তানকে ফিরে চাই।”

মুন্নির স্বামী আবু শাহিন জানান, “ঐ স্ত্রীকে নিয়ে আমি আর সংসার করবো না। আমার পরিবারও তাঁকে মেনে নিবে না। এখন বাচ্চা আমার কাছে আছে। সে যদি মামলা করে থাকে তাহলে আদালতে দেখা হবে। আমরা এসব মামলার পরোয়া করি না।”

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে ৪শ’ গ্রাম গাঁজাসহ আটক ১

নীলফামারীতে সন্তান ফিরে পেতে আদালতের দ্বারস্থ গর্ভধারিণী মা

প্রকাশের সময়ঃ ০৭:৪৮:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

সহিদুল ইসলাম বিভাগীয় প্রতিনিধি রংপুর: “সন্তানকে এক মুহূর্ত চোখের আড়াল করতেও পারি না। অথচ আজ সে আমার কাছেই নেই,”—কথাগুলো বলেন মুন্নি আক্তার, যিনি তার চার বছর বয়সী কন্যাসন্তানকে ফিরে পেতে এখন আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার এক নির্যাতিত মা।

ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালে, যখন ডোমার উপজেলার দক্ষিণ মটুকপুর সাহেবপাড়া গ্রামের মো. ফজর আলীর ছেলে আবু শাহিনের সঙ্গে ইসলামী শরিয়ত ও রেজিস্ট্রিকৃত কাবিননামার মাধ্যমে মুন্নি আক্তারের বিয়ে হয়। সংসার জীবনে এক কন্যা সন্তান— শাহিমা আক্তার জন্ম হয়। তবে সন্তানের জন্মের পরপরই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট।

মুন্নি আক্তারের অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার নিকট ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করতে থাকে। গরিব বাবার পক্ষে সে টাকা জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়লে শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। একপর্যায়ে জোরপূর্বক তালাকনামায় স্বাক্ষর নেওয়া হয় তার কাছ থেকে।

পরবর্তীতে আবু শাহিন নিজের ‘ভুল’ বুঝতে পেরে পুনরায় মুন্নিকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে ঘোষণা সহকারে বিজ্ঞ নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহ পুনঃনিশ্চিত করেন। সেখানে এক বছর সংসার চলার পর তারা আবার ফিরে আসেন গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু ফিরে আসার পর পুরনো ইতিহাস ফিরে আসে। ফের শুরু হয় নির্যাতন, সেটা আরও বেশি মাত্রায়।

চলতি বছরের ২ মার্চ, আবু শাহিন, তার পিতা ফজর আলী এবং মাতা সালমা বেগম পুনরায় ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা মুন্নি আক্তারকে নির্মমভাবে মারধর করে এবং তার শিশুকন্যাকে জোরপূর্বক নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। আশপাশের লোকজন এসে মুন্নিকে উদ্ধার করে ডোমার হাসপাতালে ভর্তি করেন।

শারীরিক সুস্থতার পর মুন্নি আক্তার সন্তানের খোঁজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়ভাবে একাধিকবার চেষ্টা করেন। কিন্তু সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় তিনি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।

বিজ্ঞ আমলি আদালত নং ৫ ডোমার, নীলফামারীতে দায়ের করা( পিটিশন নম্বর ৭৪/২০২৫ ডোমার ) মামলায় তিনি তার শিশু কন্যা শাহিমা আক্তারকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

মুন্নি আক্তারের কণ্ঠে কেবলই একটিই আর্তি—“আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন, সে আমার বুকের ধন, আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারি না।”

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, এই ঘটনা শুধুই এক মায়ের আর্তনাদ নয়, এটি আমাদের সামাজিক ও আইনগত কাঠামোর সামনে এক কঠিন প্রশ্নও বটে—একটি শিশুর জীবনের মৌলিক অধিকার কি তার মায়ের কোল থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা?

মুন্নি আক্তারের বাবা মোজাম্মেল হক জানান, “ওরা আমার মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আমি একজন গরিব, আমি আদালতের কাছে ন্যায় বিচার চাই।”

মুন্নি আক্তার জানান, “আমি আমার শিশু সন্তানকে আমার কোলে ফেরত চাই। আমি একজন মা, সন্তানের জন্য আমার বুক হাহাকার করছে। আমার এই আর্তনাদ ঐ পাষন্ডরা বুঝবে না। আমি নির্যাতনের শিকার। আমি ন্যায় বিচারের মাধ্যমে আমার সন্তানকে ফিরে চাই।”

মুন্নির স্বামী আবু শাহিন জানান, “ঐ স্ত্রীকে নিয়ে আমি আর সংসার করবো না। আমার পরিবারও তাঁকে মেনে নিবে না। এখন বাচ্চা আমার কাছে আছে। সে যদি মামলা করে থাকে তাহলে আদালতে দেখা হবে। আমরা এসব মামলার পরোয়া করি না।”