
সহিদুল ইসলাম বিভাগীয় প্রতিনিধি রংপুর: পঞ্চগড়ে বহুল আলোচিত বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ আরেফিন হত্যার ঘটনায় আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। সোমবার পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (আমলি আদালত-১) আরেফিনের স্ত্রী শিরিন আক্তার হত্যা মামলার আবেদন করেন। আদালত মামলার আবেদনটি গ্রহণ করেন এবং মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম মামলাটি তদন্তপূর্বক এজাহার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য পঞ্চগড় সদর থানার ওসিকে আদেশ দেন।
বুধবার (৭ মে) মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল ওহাব মামলার আবেদনের কথা নিশ্চিত করেছেন।
হত্যার শিকার আবদুর রশিদ আরেফিন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের পাথরাজ-চন্দনপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি ময়দানদিঘী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এর আগে তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
আদালতে মামলার বাদী আরেফিনের স্ত্রী শিরিন আক্তার বলেন, এতদিন স্বামী হত্যার বিচার পাইনি। তাই আদালতে স্বামী হত্যার বিচার চাইতে এসেছি।
মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম, পঞ্চগড়-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান ও নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া, সাবেক জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম, সাবেক পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম শফিকুল ইসলাম ও কনক কুমার দাস, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত, পঞ্চগড় পৌরসভার সাবেক মেয়র জাকিয়া খাতুন, সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ মিঞাসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের মোট ১৫৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৮০০ জনকে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিকেলে পঞ্চগড় জেলা বিএনপি কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলছিল। ওই কর্মসূচিতে বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ অংশ নেন। এ সময় জেলা শহরের চৌরঙ্গী এলাকার জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাতের নেতৃত্বে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও অন্য তিনজন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে অন্যান্য আসামিরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালান।
এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণ সেখানে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। সেসময় আসামিরা আবদুর রশিদ আরেফিনকে মারধর করেন। পরে হামলাকারী ব্যক্তিরা সেখান থেকে চলে গেলে মামলার সাক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবদুর রশিদ আরেফিনকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সময় হামলাকারী ব্যক্তিরা জেলা বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আদম সুফি বলেন, ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিকেলে জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের লোকজন সেই মিছিল বাধাগ্রস্ত করেন। এতে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। সেখানে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আহত হন, তাদের মধ্যে আরেফিন শহীদ হন। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার স্ত্রী একটি হত্যা মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি তদন্তপূর্বক এজাহার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশকে আদেশ দিয়েছেন। ঘটনার সময় মামলা করার পরিবেশ না থাকায় নিহতের স্ত্রী এত দিন পর এ হত্যা মামলা করছেন বলেও জানান পিপি।