১১:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নানের অবৈধ কর্মের আমলনামা

ঢাকাঃ আশুলিয়া থানা ওসি আব্দুল হান্নান বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের পরে যেন হাতে আলাদীনের চেরাগ পেয়ে যান। প্রথম দিকে তিনি থানার সামনের দোকানদার থেকে শুরু করে কনস্টেবল সবাইকে কথা বলার আগে নিজে সালাম দিলেও কয়দিন পরেই পাল্টে যায় তার রুপ।

আশুলিয়া একটি জনবহুল এলাকা। স্বভাবতই এখানে প্রতিনিয়ত ঘটে চলে নানা অঘটন।  ওসি আব্দুল হান্নান থানায় যোগদানের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকলেও তেমন কর্মতৎপরতা চোখে পরে না। ফলে এখানে বেড়ে চলছে ছিনতাই খুন ও ধর্ষণের মতো ঘটনা। ঠিক সেই মুহূর্তে ওসি হান্নান আছেন ভালো কিছু অফিসারদের পোস্টিং করাতে ব্যস্ত। তার পছন্দের অফিসারদের দিয়ে আশুলিয়া এলাকায় করাচ্ছেন সিভিল টিম।

কিছু দিন যেতে না যেতেই একে একে বের হতে থাকে ওসি আব্দুল হান্নান এর আসল চেহারা। থানাতে বৈষম্য বিরোধী মামলার কোন আসামি ধরে আনলে সেই আসামির থেকে তিনি নেন অর্থনীতিক সুবিধা। ওসিকে না জানিয়ে কোন আসামি কে রিমান্ডে আনলে সেই অফিসারদের সাথেও তিনি করেন খারাপ ব্যবহার।

রিয়াজ নামের একজন বলেন,আমার বন্ধুকে থানাতে ধরে নিয়ে আসলে আমি তার সাথে থানায় এসে ওসি স্যার কে বলি স্যার আমার বন্ধুর অপরাধ কি। এই কথা সুনার সাথে সাথে ওসি আব্দুল হান্নান আমাকে আজেবাজে ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং আমার হাত থেকে মোবাইলটি কেড়ে নিয়ে আমাকে বৈষম্য বিরোধী মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান। আমার মোবাইল ফোনের গ্যালারীতে ঢুকে সব কিছু চেক করেন এবং বলেন তুই আওয়ামীলীগ করিস তোকে ওর সাথে চালান দিব।আমি কোন মতে সেখান থেকে পালিয়ে আসি।

তিনি আরও বলেন, ওসি আব্দুল হান্নান আমার বাসায় লোক পাঠিয়ে বিভিন্ন সময় আমাকে হয়রানির চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ওসির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।হেডকোয়ার্টার থেকে সাভার সার্কেলের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে দায়িত্ব দেন।

আশুলিয়া জাতীয় স্মৃতিসৌধ পুলিশ ফাঁড়ির এক সাবেক পুলিশ সদস্য বলেন,ওসি হান্নান একজন খারাপ প্রকৃতির লোক। উপর উপর মিষ্টি কথা বললেও তার অন্তরে আছে বিষ।আমরা নিরিবিলি এলাকার কুক্ষাত মাদক ব্যাবসায়ী ছোট বিল্লাল কে ধরতে গেলে ওসি আমাদের ফোন দিয়ে ডেকে নেয় এবং আমাদের গালিগালাজ করে পরের দিন আমাদের পোস্টিং করে দেয়।

তিনি আরও বলেন, ওসি আব্দুল হান্নান প্রতি মাসে মাদক ব্যবসায়ী ছোট বিল্লালের কাছ থেকে মাসে ১ লক্ষ করে টাকা মাসোহারা নেয়। বিল্লালের পাইটু রানা সেই টাকা ওসির কাছে পৌঁছে দেয়।

পুলিশের এই সদস্য আফসোস করে বলেন, আমি যেদিন ওসি স্যার কে সামনে পাব সেদিন তার কাছে জানতে চাব স্যার আমার অপরাধ কি।তিনি শুধু আমাকে না আমার সাথের সবাইকে চাঁদাবাজ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বদলি করে দেন।

ইব্রাহিম নামের চাড়াল পাড়া গ্রামের একজন বাসিন্দা বলেন,বাইপাইল একটি আড়ৎ আমরা মালিকের থেকে পাওয়ার নিয়ে চালাতাম। সেই আড়ৎ এ যেন আর যেতে না পারি সেই কারনে ওসি আমার বাড়িতে রাত তিন টায় পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানি করেন।আমার নামে নাকি মার্ডার মামলা আছে এই ভয় দেখি অন্য গ্রুপের থেকে ওসি টাকা খেয়ে আমাকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছেন।আমি এখন বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

এছাড়াও ওসি আব্দুল হান্নান বিভিন্ন সময় আওয়ামিলীগের পদধারী নেতাদের কে নিয়ে গোপনে আলোচনা করেন।এমন একটি ফেসবুক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে উঠে আসে ওসির ভয়ংকর ঘুষ বানিজ্যর তথ্য, আশুলিয়ার বগাবাড়ীর একটি জুয়ার আসর থেকে ওসি তার বডিগার্ড এর মাধ্যমে প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকা মাসোহারা নিয়ে থাকেন।

বিএনপির এক নেতার সহকারী বলেন, একটি কাজের জন্য আমি নিজের হাতে ওসিকে ঘুষের টাকা দিয়ে আসলাম।আমাদের একটি বৈধ জায়গা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল পরে ওসিকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করছি।

ধামসোনা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আসাদুল্লাহ দুলাল বলেন,আমার বৈধ জায়গা আশুলিয়া থানার ওসি ভূমিদস্যু মতিন এর থেকে টাকা খেয়ে আমার নামে পাঁচ টা মামলা দিয়েছে।ওসি কোন তদন্ত ছাড়া আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।এরকম একজন পুলিশ কর্মকর্তা দেশ এবং দশের জন্য ক্ষতিকর।

জনমনে প্রশ্ন উঠেছে ওসি আব্দুল হান্নান এর এই স্বৈরাচারীতার শেষ কোথায়।পুলিশ জনগণের বন্ধু সেখানে পুলিশের একজন কর্মকর্তা নিজেই যখন রক্ষক হয়ে ভক্ষক হয়ে যান তখন সাধারণ মানুষ কার কাছে সঠিক বিচার পাবেন।সাধারণ জনগণের চাওয়া ওসি হান্নান এর মতো পুলিশ কর্মকর্তার যেন বিচার হয়।

এই বিষয়ে জানতে ওসি আব্দুল হান্নান এর মুঠোফোনে বলেন, আপনি সামনে আসেন তার পরে কথা বলবো।পরবর্তীতে থানায় তার অফিস কক্ষে যাওয়ার পরে তিনি বলেন,আমি কোন কথা বলবো না।যা বলার আমার উর্ধতন কর্মকর্তারা বলবে।

Tag :
About Author Information

প্যারোলে মুক্তি পেয়ে স্ত্রীর জানাজায় অঝোরে কেঁদেছেন নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মতি

আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নানের অবৈধ কর্মের আমলনামা

প্রকাশের সময়ঃ ১০:৩১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

ঢাকাঃ আশুলিয়া থানা ওসি আব্দুল হান্নান বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের পরে যেন হাতে আলাদীনের চেরাগ পেয়ে যান। প্রথম দিকে তিনি থানার সামনের দোকানদার থেকে শুরু করে কনস্টেবল সবাইকে কথা বলার আগে নিজে সালাম দিলেও কয়দিন পরেই পাল্টে যায় তার রুপ।

আশুলিয়া একটি জনবহুল এলাকা। স্বভাবতই এখানে প্রতিনিয়ত ঘটে চলে নানা অঘটন।  ওসি আব্দুল হান্নান থানায় যোগদানের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকলেও তেমন কর্মতৎপরতা চোখে পরে না। ফলে এখানে বেড়ে চলছে ছিনতাই খুন ও ধর্ষণের মতো ঘটনা। ঠিক সেই মুহূর্তে ওসি হান্নান আছেন ভালো কিছু অফিসারদের পোস্টিং করাতে ব্যস্ত। তার পছন্দের অফিসারদের দিয়ে আশুলিয়া এলাকায় করাচ্ছেন সিভিল টিম।

কিছু দিন যেতে না যেতেই একে একে বের হতে থাকে ওসি আব্দুল হান্নান এর আসল চেহারা। থানাতে বৈষম্য বিরোধী মামলার কোন আসামি ধরে আনলে সেই আসামির থেকে তিনি নেন অর্থনীতিক সুবিধা। ওসিকে না জানিয়ে কোন আসামি কে রিমান্ডে আনলে সেই অফিসারদের সাথেও তিনি করেন খারাপ ব্যবহার।

রিয়াজ নামের একজন বলেন,আমার বন্ধুকে থানাতে ধরে নিয়ে আসলে আমি তার সাথে থানায় এসে ওসি স্যার কে বলি স্যার আমার বন্ধুর অপরাধ কি। এই কথা সুনার সাথে সাথে ওসি আব্দুল হান্নান আমাকে আজেবাজে ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং আমার হাত থেকে মোবাইলটি কেড়ে নিয়ে আমাকে বৈষম্য বিরোধী মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান। আমার মোবাইল ফোনের গ্যালারীতে ঢুকে সব কিছু চেক করেন এবং বলেন তুই আওয়ামীলীগ করিস তোকে ওর সাথে চালান দিব।আমি কোন মতে সেখান থেকে পালিয়ে আসি।

তিনি আরও বলেন, ওসি আব্দুল হান্নান আমার বাসায় লোক পাঠিয়ে বিভিন্ন সময় আমাকে হয়রানির চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ওসির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।হেডকোয়ার্টার থেকে সাভার সার্কেলের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে দায়িত্ব দেন।

আশুলিয়া জাতীয় স্মৃতিসৌধ পুলিশ ফাঁড়ির এক সাবেক পুলিশ সদস্য বলেন,ওসি হান্নান একজন খারাপ প্রকৃতির লোক। উপর উপর মিষ্টি কথা বললেও তার অন্তরে আছে বিষ।আমরা নিরিবিলি এলাকার কুক্ষাত মাদক ব্যাবসায়ী ছোট বিল্লাল কে ধরতে গেলে ওসি আমাদের ফোন দিয়ে ডেকে নেয় এবং আমাদের গালিগালাজ করে পরের দিন আমাদের পোস্টিং করে দেয়।

তিনি আরও বলেন, ওসি আব্দুল হান্নান প্রতি মাসে মাদক ব্যবসায়ী ছোট বিল্লালের কাছ থেকে মাসে ১ লক্ষ করে টাকা মাসোহারা নেয়। বিল্লালের পাইটু রানা সেই টাকা ওসির কাছে পৌঁছে দেয়।

পুলিশের এই সদস্য আফসোস করে বলেন, আমি যেদিন ওসি স্যার কে সামনে পাব সেদিন তার কাছে জানতে চাব স্যার আমার অপরাধ কি।তিনি শুধু আমাকে না আমার সাথের সবাইকে চাঁদাবাজ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বদলি করে দেন।

ইব্রাহিম নামের চাড়াল পাড়া গ্রামের একজন বাসিন্দা বলেন,বাইপাইল একটি আড়ৎ আমরা মালিকের থেকে পাওয়ার নিয়ে চালাতাম। সেই আড়ৎ এ যেন আর যেতে না পারি সেই কারনে ওসি আমার বাড়িতে রাত তিন টায় পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানি করেন।আমার নামে নাকি মার্ডার মামলা আছে এই ভয় দেখি অন্য গ্রুপের থেকে ওসি টাকা খেয়ে আমাকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছেন।আমি এখন বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

এছাড়াও ওসি আব্দুল হান্নান বিভিন্ন সময় আওয়ামিলীগের পদধারী নেতাদের কে নিয়ে গোপনে আলোচনা করেন।এমন একটি ফেসবুক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে উঠে আসে ওসির ভয়ংকর ঘুষ বানিজ্যর তথ্য, আশুলিয়ার বগাবাড়ীর একটি জুয়ার আসর থেকে ওসি তার বডিগার্ড এর মাধ্যমে প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকা মাসোহারা নিয়ে থাকেন।

বিএনপির এক নেতার সহকারী বলেন, একটি কাজের জন্য আমি নিজের হাতে ওসিকে ঘুষের টাকা দিয়ে আসলাম।আমাদের একটি বৈধ জায়গা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল পরে ওসিকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করছি।

ধামসোনা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আসাদুল্লাহ দুলাল বলেন,আমার বৈধ জায়গা আশুলিয়া থানার ওসি ভূমিদস্যু মতিন এর থেকে টাকা খেয়ে আমার নামে পাঁচ টা মামলা দিয়েছে।ওসি কোন তদন্ত ছাড়া আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।এরকম একজন পুলিশ কর্মকর্তা দেশ এবং দশের জন্য ক্ষতিকর।

জনমনে প্রশ্ন উঠেছে ওসি আব্দুল হান্নান এর এই স্বৈরাচারীতার শেষ কোথায়।পুলিশ জনগণের বন্ধু সেখানে পুলিশের একজন কর্মকর্তা নিজেই যখন রক্ষক হয়ে ভক্ষক হয়ে যান তখন সাধারণ মানুষ কার কাছে সঠিক বিচার পাবেন।সাধারণ জনগণের চাওয়া ওসি হান্নান এর মতো পুলিশ কর্মকর্তার যেন বিচার হয়।

এই বিষয়ে জানতে ওসি আব্দুল হান্নান এর মুঠোফোনে বলেন, আপনি সামনে আসেন তার পরে কথা বলবো।পরবর্তীতে থানায় তার অফিস কক্ষে যাওয়ার পরে তিনি বলেন,আমি কোন কথা বলবো না।যা বলার আমার উর্ধতন কর্মকর্তারা বলবে।