আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ ইং

এমপি ফারুক চৌধুরীর নির্দেশে জোড়পূর্বক ডিপ অপারেটরকে চাকুরিচ্যুতির অভিযোগ

ছোটন সরদার রাজশাহী : নির্বাচনকেন্দ্রিক রোষানলে এমপি ফারুক চৌধুরীর নির্দেশে জোড়পূর্বক ডিপ অপারেটরকে চাকুরিচুত্য করার অভিযোগ অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী নৌকার প্রার্থী এমপি ফারুক চৌধুরীর ভোটমাঠে কাজ না করে অন্য একটি প্রতীকে কাজ করার কারণে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে নিজের চাকরি হারাতে বসেছেন ডিপ অপারেটর সালেহা বেগম।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প (বিএমডিএ) গোদাগাড়ী জোন-০২ এর আওতাধীন একজন ডিপ অপারেটরকে জোড়পূর্বক চাবুরিচুত্য করার অভিযোগ উঠেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী নৌকার প্রার্থী এমপি ফারুক চৌধুরীর ভোটমাঠে কাজ না করে অন্য একটি প্রতীকে কাজ করার কারণে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে নিজের চাকরি হারাতে বসেছেন ডিপ অপারেটর সালেহা বেগম। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীর স্বামী কাকনহাট পৌরসভার প্রাক্তন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাফি এনএসআই, বিএমডিএ’র কর্মকর্তা, সিবিএ নেতা ছাড়াও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করেও কোন কাজ হয়নি বলে জানান ডিপ অপারেটর সালেহা। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প (বিএমডিএ) গোদাগাড়ী জোন-০২’র সহকারি প্রকৌশলী হাবিবুল আহ্সান জানান, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা জোন-০২ এর আওতায় গভীর নলকূপ রয়েছে ৩৩০টি। এসব নলকূপ স্থাপনের ফলে ২০ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে। আমন ও বোরো আবাদ ছাড়াও রবি ফসলের জমিতেও এসব গভীর নলকূপ থেকে সেচ দেওয়া যায়। স্থানীয়রা জানান, এই অঞ্চলের ৩৩০টি গখীর নলকুপের মধ্যে এটাই সর্বপ্রথম। আর প্রথম থেকে আজ অবদি সালেহা বেগম এখানে দায়িত্ব পালন করছেন।রাজশাহী জেলার অন্তর্গত গোদাগাড়ী উপজেলাধীন কাকনহাট পৌর এলাকার পাকড়ী ইউনিয়নের আব্দুলপুর মৌজার অন্তর্গত সেরাপাড়া গ্রামের ১৫০/২৪ স্ক্রীম এর গভীর নলকুপের ডিপ অপারেটর হিসেবে
ডিপ অপারেটর হিসেবে সালেহা বেগম দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে। সরেজমিনে গিয়ে কৃষক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, অপারেটর সালেহা বেগমের বিরুদ্ধে সেচ সংশ্লিষ্ট কোন প্রকার অভিযোগ আজ অবদি কেউ না করলেও রাজনৈতিক কারণে তাকে চাকুরি হারাতে হচ্ছে
ডিপ অপারেটর সালেহা বেগমকে কেনো অপসারণ করা হচ্ছে জানতে চাইলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প (বিএমডিএ) গোদাগাড়ী জোন-০২’র সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা সহকারি প্রকৌশলী হাবিবুল আহ্সান বলেন, কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কতজন কৃষক অভিযোগ দিয়েছেন জানতে চাইলে সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি একটি অভিযোগের ভিত্তিতে অপারেটর সালেহা বেগমকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু ভুক্তভোগী সালেহা বেগম বলছেন, আমার স্বামী এমপি ফারুক চৌধুরীর নির্বাচনী মাঠে কাজ না করা ও পূর্ববর্তী দলীয় কোন্দল আর রোষানলের স্বীকার হয়েছি আমি। আমার বিরুদ্ধে বিগত ত্রিশ বছরে একজন কৃষকও কোন প্রকার অভিযোগ তুলেননি।
গত ২৫ জানুয়ারি কৃষকদের একাংশ নিয়ে সাত সদস্য বিশিষ্ট্য একটি কমিটি গঠণ করে সংশ্লিষ্টরা। ঐ কমিটি দ্বারা নির্বাচিত কোন একজন ডিপ অপারেটর নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত গভীর নলকুপটি তত্বাবধান করবেন। পরবর্তীতে নিয়োগ পাওয়া সাপেক্ষে নতুন অপারেটরকে চাবি বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে জানায় সহকারী প্রকৌশলী হাবিবুল আহ্সান।
সালেহা বেগমের দাবি, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি সর্ম্পূণ মিথ্যা, বানোয়াট ও সুপরিকল্পিত। কারণ, গত ২৩ জানুয়ারি সকালে সহকারি প্রকৌশলী বেশ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আমার কর্মস্থলে এসে কোন কারণ ছাড়াই ডিপের চাবি হস্তান্তর করতে  বলেন। কারণ জানতে চাইলে উনার বলেন, উপর মহলের নির্দেশে আমরা চাবি নিতে এসেছি। আপনি আগামীকাল থেকে এই দায়িত্ব ছেড়ে দিন
আমার নিয়োগপত্র চলতি বছরের শুরুতে পূর্বের ন্যায় পুণঃরায় নবায়ন করেছেন কর্তৃপক্ষ। তাহলে আমি কেনো কাজ থেকে অব্যাহতি দেবো জানতে চাইলে গোদাগাড়ী দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্সচারির পক্ষ থেকে উত্তর আসে, এমপি ফারুক চৌধুরী সাহেবের কাছ থেকে একটি ‘ডিও লেটার’ এসেছে আপনাকে (অপারেটর সালেহা) এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে। কিন্তু, এমপি ফারুক চৌধুরী কর্তৃক প্রেরিত ‘ডিও লেটার’ সংশ্লিষ্ট অভিযোগ অস্বীকার করেন সহকারি প্রকৌশলী হাবিবুল আহ্সান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের অনেকেই বলেনন, বিএমডিএতে গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগ হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। যে দলের সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের নেতাদের নেতৃত্বে গভীর নলকূপ নিয়ে চলে বেপরোয়া বাণিজ্য। এটি একটি লাভজনক পেশা। এ জন্য তারা টাকা দিয়ে হলেও এই পদে নিয়োগ নিয়ে থাকেন। এখানেও এমনটাই হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য স্থানীয়দের।

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ