আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ ইং

মানিকগঞ্জে কৃষিক্ষেত্রে মালচিং পদ্ধতির কদর বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার : প্রযুক্তির কল্যানে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। কথাটি এখন শুধু মানুষের মুখে মুখে নয়। কৃষিক্ষেত্রে  মালচিং পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করে  বাস্তবে পরিনত করেছে মানিকগঞ্জের কৃষকেরা। তারা ভারতের পঞ্চিম বঙ্গের ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল দেখে লাভজনক এ মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেছে। এই পদ্ধতি ইতি মধ্যে মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
জানাযায়, কম খরচে অধীক লাভ হওয়ায় কৃষকরা এই পদ্ধতির প্রতি বেশি ঝুকে পড়ছে। বর্তমানে মানিকগঞ্জের  শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর, শিমুলিয়া, উলাইল, উথলীসহ অন্যান্য ইউনিয়ন এবং হরিরামপুর, সাটুরিয়া উপজেলা সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় মরিচ, শশা, টমোটো, করলা, বেগুন সহ বিভিন্ন ফসল  মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে দেখাযাচ্ছে।
স্বরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, প্রথমে আবাদি জমি প্রস্তত করে তারপর বীজতলা বা বেড তৈরি করা হয়।তার পর একটি ড্রেন আবার বেড, আবার ড্রেন, এভাবেই এ পদ্ধতিতে জমি তৈরি করা হয়। এর পর মালচিং পেপার (একধরনে ধরনের পলিথিন) দিয়ে বেডগুলোকে ঢেকে দেয়া হয়। । এরপর নিদ্দির্ষ্ট দূরত্বে মালচিং পেপার ছিদ্র করে বা গোল করে কেটে চারা রোপন করা হয়। এ পদ্ধতিকে মালচিং বা পলি মালচিং পদ্ধতিও বলা হয়। ভারতের পঞ্চিম বঙ্গে এটাকে পলি মালচিং পদ্ধতি বলে।
মানিকগঞ্জের  শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের ইউটিউব দেখে  প্রশিক্ষন নেওয়া কৃষক মোঃ জুয়েল হোসেন (এরশাদ) বলেন, আমাদের এলাকায় গেল বছর দু-একজন মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে বেশ সুফল পেয়েছিল । তাই আমি এবার  বাংলাদেশ ও ভারতের বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেল দেখেএ পদ্ধতিতে আবাদ করতে উৎসাহিত হই ।এ পদ্ধতিটা আমি ইউটিউব দেখেই শিখেছি ।এবছর তিনি ৮ বিঘা (কারেন্ট মরিচ) হাইব্রিড মরিচ এই পলি মালচিং পদ্ধতিতে আবাদ করেছেনন।
তিনি আরো বলেন,এ পদ্ধতিতে গাছের গোড়ায় পানি শুকিয়ে যায় না এবং গাছের প্রয়োজনীয় পানি সব সময় থাকে ।ড্রেনের মধ্য দিয়ে পানি দেয়ার ফলে পাশের বেডের মাটি পানি ধরে রাখে যা অতি রোদ্রেও শুকিয়ে যায় না।যেখানে ৬ বার সেচ দিতে হতো সেখানে এখন দুইবার সেচ দিলেই পুরো সিজন হয়ে যায়। আগে এই পদ্যতি নাথাকায় অতি বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে গাছ মরে যেত।কিন্তু ড্রেন পদ্ধতি থাকায় এখন আর পানি জমতে পারে না। অধিক বৃষ্টিতেও গাছ বেডের উপর থাকাতে গাছের কোন ক্ষতি হয় না। এ পদ্ধতিতে জমিতে আগাছাও জন্মাতে পারে না। এতে করে  আমাদের খরচ ও অনেক কম হয়।
কৃষক মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদে বেশি খরচ লাগেনা। তবে প্রথমেই খরচটা করতে হয় বিধায় আমাদের কৃষকদের বেশ বেগ পেতে হয়। তিনি বলেন,৪ফুট প্রশস্ত এবং ৪০০ ফুট লম্বা একটা মালচিং পেপার রোলের দাম ৫ হাজার টাকা। এ রকম একটা রোল ১৮ শতাংশ জমিতে দেয়া য়ায়।সত্যিকারে যারা মালচিং পদ্ধতিতে আবাদ করেসরকারি ভাবে যদি  তাদের ভর্তুকি বা কমসূদে লোন দেয়া হয় তাহলে এই পদ্ধতির প্রতি অনেকেই উৎসাহিত হতো।এতেকরে  দেশের উৎপাদনও বৃদ্ধি পেত।
মোঃ আওলাদ হোসেন খান বলেন,এই পদ্ধতির বিষয়ে আমাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষন দেয়া প্রয়োজন। তিনি দ্রুত এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতি আহবান জানান। মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ্ বলেন,এ পদ্ধতিটা অবশ্যই ভালো। আমরা কৃষকদের এ পদ্ধতির প্রতি( উদ্ভুদ্ধ করছি।সিংগাইর এলাকায় আমরা কৃষকদের উন্নত চাষাবাদের প্রশিক্ষন দিচ্ছি এবং সব জায়গাতেই এটা করা হবে।
কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক(শস্য) ড.মমতাজ সুলতানা বলেন, পলি পেপারের জন্যে এখনও কৃষক পর্যায়ে ভর্তুকির কোন নির্দেশনা আমাদের নেই। তবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা কৃষকদের সকল প্রকার কারিগরি সহযোগীতা দিয়ে থাকি।

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ