০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাইকোর্ট অমান্য করে নিলাম কার্যক্রম চালিয়েছে উত্তরা ব্যাংক শিবালয় শাখা

  • Reporter Name
  • প্রকাশের সময়ঃ ০৮:২৫:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪
  • ৩১০ বার পড়া হয়েছে

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : হাইকোর্টে রিট পিটিশন অমান্য করে নিলাম কার্যক্রম চালিয়েছে উত্তরা ব্যাংকের মানিকগঞ্জের শিবালয় শাখা। সোমবার বিকালে অফিস কক্ষে মাত্র দুইজন দরপত্রদাতার অংশগ্রহণে বক্স খুলেন ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ হাছান।

শাখা ব্যবস্থাপক প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের জমি দরপত্রদাতাদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে সর্বোচ্চ দর দেখিয়েছেন ৭৬ লাখ টাকা বলে অভিযোগ উঠেছে। হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলায় নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই নিলাম কার্যক্রমকে আইনের লঙ্ঘন ও অবমাননা বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবীরা।

নথিপত্রে পর্যালোচনা করে জানা যায়, উত্তরা ব্যাংক ওই শাখা থেকে জমি বন্ধক রেখে জাফরগঞ্জ বাজারে মেসার্স কাশেম মোল্লা ট্রেডিং কর্পোরেশন ঋণ নেয়। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা প্রায় ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৭৩৭ টাকা। অর্থঋণ আদালত আইনে ২০০৩ ইং এর ১২ (৩) ধারার বিধান মতো গত ১৯ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় বন্ধকী জমি নিলামের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উত্তরা ব্যাংক আঞ্চলিক প্রধান ও চেয়ারম্যান টেন্ডার কমিটি। বিজ্ঞপ্তিতে ২২ এপ্রিল নিলাম কার্যক্রমের দরপত্র বক্স খুলার কথা উল্লেখ করা হয়।

এরই মধ্যে মেসার্স কাশেম মোল্লা ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক মো. সোহেল রেজা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে বিচারপতি জে বি এম হাসান এবং রাজিক আল-জলিলের আদালতে নিলামের বিরুদ্ধে ৪২২২/২৪ রিট পিটিশন দাখিল করেন। এতে বিবাদী করা হয়েছে, অর্থমন্ত্রণালয় সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর, উত্তরা ব্যাংকের এরিয়ে প্রধান ও চেয়ারম্যান এবং শাখা ব্যবস্থাপককে। বর্তমানে রিট পিটিশনটি বিচারপতিদের কাছে শুনানির অপেক্ষায় আছে।

রিট পিটিশন দাখিলের পর মো. সোহেল রেজার আইনজীবী মোহাম্মদ আনিস আহমেদ এলডিআর ৪৪ পৃষ্টা ২১৯ অনুযায়ী সার্টিফিকেট প্রদান করেন। এরপর সার্টিফিকেটটি উত্তরা ব্যাংক শিবালয় শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ হাছান গত ৪ এপ্রিল গ্রহণ করেন।

কিন্তু, হাইকোর্টে বিচারাধীন রিট পিটিশনে বিচারপতিদের রুল কিংবা নিষ্পত্তি ছাড়াই নিলাম কার্যক্রম চালান উত্তরা ব্যাংক শিবালয় শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ হাছান।

মেসার্স কাশেম মোল্লা ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক মো. সোহেল রেজা অভিযোগ করেন, ‘হাইকোর্টে বিচারাধীন রিট পিটিশনে বিচারপতিদের রুল কিংবা নিষ্পত্তি ছাড়াই উত্তরা ব্যাংক শিবালয় শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ হাছান অতি উৎসাহী মনোভাব ও রহস্যজনকভাবে নিলাম কার্যক্রম চালিয়েছেন। বন্ধকী জমি ও স্থাপনার বাজার মূল্য আড়াই কোটি টাকার উপরে। সেখানে সিন্ডিকেট করে মাত্র দুইজন দরপত্রদাতার অংশগ্রহণে সর্বোচ্চ ৭৬ লাখ টাকা দর তোলেছেন। যা কি না অগ্রহণযোগ্য ও বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম। বিষয়টি নিয়েও আমার আইনজীবীর মাধ্যমে বিচারপতিদের দারস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।

উত্তরা ব্যাংক শিবালয় শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ হাছান নিলাম কার্যক্রমের বিরুদ্ধে রিট পিটিশনের আইনজীবীর সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছেন স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, রিট পিটিশন দায়ের হয়েছে। শুনানি হয়নি ও বিচাপতিদের রুলও পায়নি। তাই নিলাম কার্যক্রম চালিয়েছি।’

হাইকোর্টে বিচারাধীন বিষয়ে বিচারপতিদের রুল কিংবা নিষ্পত্তি ছাড়া নিলাম কার্যক্রম চালানো আইন অমান্য ও অবমাননা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ব্যাংকের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে নিলাম কার্যক্রম চালিয়েছি। এখন হাইকোর্টের বিচারপতিরা রুল দিলে ব্যাংকের হেড অফিস সিদ্ধান্ত নেবে।’

হাইকোর্টে বিচারাধীন রিট পিটিশন দায়ের করার পরও নিলাম কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে মো. সোহেল রেজার আইনজীবী মোহাম্মদ আনিস আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন,‘বিচারাধীন বিষয়ে ব্যাংকের এ রকম সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি। রিট পিটিশনসহ নানা মামলা দায়ের করার পর এলডিআর ৪৪ পৃষ্টা ২১৯ অনুযায়ী আইনজীবীরা সার্টিফিকেট প্রদান করেন। এতে বিচারপতিদের রুল ও নির্দেশনা না পেয়ে কার্যক্রম চালানো আইন অমান্য ও অবমননার শামিল। বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হবে।’

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

ফরিদপুরের মধুখালীতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে ২৫ আসামি গ্রেপ্তার,

হাইকোর্ট অমান্য করে নিলাম কার্যক্রম চালিয়েছে উত্তরা ব্যাংক শিবালয় শাখা

প্রকাশের সময়ঃ ০৮:২৫:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : হাইকোর্টে রিট পিটিশন অমান্য করে নিলাম কার্যক্রম চালিয়েছে উত্তরা ব্যাংকের মানিকগঞ্জের শিবালয় শাখা। সোমবার বিকালে অফিস কক্ষে মাত্র দুইজন দরপত্রদাতার অংশগ্রহণে বক্স খুলেন ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ হাছান।

শাখা ব্যবস্থাপক প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের জমি দরপত্রদাতাদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে সর্বোচ্চ দর দেখিয়েছেন ৭৬ লাখ টাকা বলে অভিযোগ উঠেছে। হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলায় নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই নিলাম কার্যক্রমকে আইনের লঙ্ঘন ও অবমাননা বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবীরা।

নথিপত্রে পর্যালোচনা করে জানা যায়, উত্তরা ব্যাংক ওই শাখা থেকে জমি বন্ধক রেখে জাফরগঞ্জ বাজারে মেসার্স কাশেম মোল্লা ট্রেডিং কর্পোরেশন ঋণ নেয়। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা প্রায় ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৭৩৭ টাকা। অর্থঋণ আদালত আইনে ২০০৩ ইং এর ১২ (৩) ধারার বিধান মতো গত ১৯ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় বন্ধকী জমি নিলামের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উত্তরা ব্যাংক আঞ্চলিক প্রধান ও চেয়ারম্যান টেন্ডার কমিটি। বিজ্ঞপ্তিতে ২২ এপ্রিল নিলাম কার্যক্রমের দরপত্র বক্স খুলার কথা উল্লেখ করা হয়।

এরই মধ্যে মেসার্স কাশেম মোল্লা ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক মো. সোহেল রেজা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে বিচারপতি জে বি এম হাসান এবং রাজিক আল-জলিলের আদালতে নিলামের বিরুদ্ধে ৪২২২/২৪ রিট পিটিশন দাখিল করেন। এতে বিবাদী করা হয়েছে, অর্থমন্ত্রণালয় সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর, উত্তরা ব্যাংকের এরিয়ে প্রধান ও চেয়ারম্যান এবং শাখা ব্যবস্থাপককে। বর্তমানে রিট পিটিশনটি বিচারপতিদের কাছে শুনানির অপেক্ষায় আছে।

রিট পিটিশন দাখিলের পর মো. সোহেল রেজার আইনজীবী মোহাম্মদ আনিস আহমেদ এলডিআর ৪৪ পৃষ্টা ২১৯ অনুযায়ী সার্টিফিকেট প্রদান করেন। এরপর সার্টিফিকেটটি উত্তরা ব্যাংক শিবালয় শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ হাছান গত ৪ এপ্রিল গ্রহণ করেন।

কিন্তু, হাইকোর্টে বিচারাধীন রিট পিটিশনে বিচারপতিদের রুল কিংবা নিষ্পত্তি ছাড়াই নিলাম কার্যক্রম চালান উত্তরা ব্যাংক শিবালয় শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ হাছান।

মেসার্স কাশেম মোল্লা ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক মো. সোহেল রেজা অভিযোগ করেন, ‘হাইকোর্টে বিচারাধীন রিট পিটিশনে বিচারপতিদের রুল কিংবা নিষ্পত্তি ছাড়াই উত্তরা ব্যাংক শিবালয় শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ হাছান অতি উৎসাহী মনোভাব ও রহস্যজনকভাবে নিলাম কার্যক্রম চালিয়েছেন। বন্ধকী জমি ও স্থাপনার বাজার মূল্য আড়াই কোটি টাকার উপরে। সেখানে সিন্ডিকেট করে মাত্র দুইজন দরপত্রদাতার অংশগ্রহণে সর্বোচ্চ ৭৬ লাখ টাকা দর তোলেছেন। যা কি না অগ্রহণযোগ্য ও বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম। বিষয়টি নিয়েও আমার আইনজীবীর মাধ্যমে বিচারপতিদের দারস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।

উত্তরা ব্যাংক শিবালয় শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ হাছান নিলাম কার্যক্রমের বিরুদ্ধে রিট পিটিশনের আইনজীবীর সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছেন স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, রিট পিটিশন দায়ের হয়েছে। শুনানি হয়নি ও বিচাপতিদের রুলও পায়নি। তাই নিলাম কার্যক্রম চালিয়েছি।’

হাইকোর্টে বিচারাধীন বিষয়ে বিচারপতিদের রুল কিংবা নিষ্পত্তি ছাড়া নিলাম কার্যক্রম চালানো আইন অমান্য ও অবমাননা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ব্যাংকের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে নিলাম কার্যক্রম চালিয়েছি। এখন হাইকোর্টের বিচারপতিরা রুল দিলে ব্যাংকের হেড অফিস সিদ্ধান্ত নেবে।’

হাইকোর্টে বিচারাধীন রিট পিটিশন দায়ের করার পরও নিলাম কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে মো. সোহেল রেজার আইনজীবী মোহাম্মদ আনিস আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন,‘বিচারাধীন বিষয়ে ব্যাংকের এ রকম সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি। রিট পিটিশনসহ নানা মামলা দায়ের করার পর এলডিআর ৪৪ পৃষ্টা ২১৯ অনুযায়ী আইনজীবীরা সার্টিফিকেট প্রদান করেন। এতে বিচারপতিদের রুল ও নির্দেশনা না পেয়ে কার্যক্রম চালানো আইন অমান্য ও অবমননার শামিল। বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হবে।’