স্টাফ রিপোর্টার, (মানিকগঞ্জ) : মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গোকুলনগর রোজিনা ব্রিক্স (ইটভাটা) এর আগুনের তাপে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় পাঁচশত বিঘা জমির ফসল। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে অন্তত দুইশত কৃষক পরিবার। তারা ক্ষতিপূরণসহ তিন ফসলি জমির পাশে গড়েউঠা এইসকল ইটভাটা বন্ধের দাবি জানান সরকারের কাছে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের গোকুলনগড় ও পশ্চিম হাসলীএলাকার চকে এঘটনা ঘটেছে।
ভূক্তভোগীরা হলেন, গোকুলনগড় গ্রামের মোঃ সদর আলী মাতাব্বর, মোঃ সেনা মিয়,হাসান শিকদার, সাইফুল ইসলাম, মোতালেব হোসেন প্রমুখ। ইতিমধ্যে একতা ও এমিকা ব্রিক্সের মালিক পক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন বলে ক্ষতিগ্রস্থরা জানান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নে মানিকগঞ্জ- বালিরটেক সড়কের দুই পাশ ঘেষে তিন ফসলি জমির উপর অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে রোজিনা বিক্স, গ্রামীন ইটভাটা, একতা ব্রিক্স, এমিকা বিক্সসহ বেশ কিছু ইটভাটা। প্রতি বছর এই সকল ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গরম হাওয়ায় কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে আসছে । এবারও রোজিনা, একতা,এমিকা ইটভাটায় ইট পুড়ানো শেষে আগুন নেভানোর সময় চুঙ্গি দিয়ে বেড় হওয়া গড়ম বিষাক্ত বাতাসের সঙ্গে আগুনের তাপে এলাকার ইরি ধান,গোখাদ্য, সবজীখেত,পিয়াড়া বাগান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কালো হয়ে পচন ধরেছে পিয়াড়া ও লাউয়ে । এতেকরে এলাকার খতিগ্রস্ত সাধারণ কৃষকদের পথে বসার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
গোকুলনগড় গ্রামের কৃষক মোঃ সদর আলী বলেন,আমি ৬৫ ডিসিমল জমিতে ইরিধান বোনছিলাম । ৬০ মন ধান পাইতাম। ছেলে সন্তান নিয়া সারাবছর খাইয়া বাঁচতাম। কিন্ত
রোজিনা ব্রিক্স ( ইট ভাটা) এর আগুনে আমার সব ধান নষ্ট হইয়া গেছে। এখন কিখামু, কি ভাবে সংসার চালামু। তিনি এর খতিপূরণ চান এবং ইট ভাটা বন্ধের দাবি জানান।
একি গ্রামের কৃষক সোনা মিয়া। তিনি ৫০ হাজার টাকা লোন তোলে ৭০ শতাংশ জমিতে ইরিধান চাষ করেছিলেন। তার ধারনা ৬০মন ধান পাবেন। খরচ বাদে প্রায় ৩০ মন ধান বিক্রী করতে পারবেন। কিন্তু রোজিনা ইট ভাটার আগুনে তার সমস্ত ধান পুরে নষ্ট হইয়া গেছে। আবেগে আপ্লোত হয়ে তিনি বলেন, এখন আমি খামুকি, পরিবারে পাঁচজন সদস্য নিয়া কিখাইয়া বাচুম। লোন পরিশোধ করুম ক্যামনে,এখন আমার মরাছারা আর উপায় নাই। এসময় তার দু-চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছিলো।
বিদেশ ফেরত হাসান শিকদার এনজিও থেকে টাকা লোন এনে লাউ চাষ করেছিলেন। সবুজ গাছে থোকা থোকা লাউ দেখে মুখ ভরে আনন্দের হাসি ফুটে উঠে ছিলো । কিন্তু সর্বনাশা ইটভাটার আগুনে মুহুর্তেই সবুজ গাছগুলি পুড়ে লাল হয়ে যায়। এতে খতিরমুখে পরেছেন সবজি চাষি হাসান শিকদার। তিনি বলেন,লাউ বিক্রীকরে ঋণ শোধ করেও ৫০ হাজার টাকা লাভ হতো। এখন ঋণের টাকা দিতে নাপেরে এনজিওর লোকদের ভয়ে পালিয়ে থাকতে হয়।
এখন খতিপূরণসহ ইটভাটা বন্ধের দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্থরা।
রোজিনা কোম্পানীর প্রতিনিধি মিলন জানান,ইারি ধান ক্ষেতের ক্ষতির বিষয়টি কোম্পানীকে জানানো হয়েছে।কোম্পানী কি করবে আমাদের জানা নেই। কোম্পানী আসলে এটা ব্যবস্থা হবে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার লিটন ঢালী বলেন,আমরা ধান ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কাছ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি।অভিযোগের ভিত্তিতে ভাটার মালিককে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।পরবর্তী দুই পক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করা হবে।