-
- অপরাধ, সারাদেশ
- হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখলের চেষ্টা
- প্রকাশের সময়ঃ সেপ্টেম্বর, ১৮, ২০২৪, ১২:১৩ অপরাহ্ণ
- 134 বার পড়া হয়েছে
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার গোয়ালজান এলাকায় ছাপড়া ঘর তুলে সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখলের চেষ্টা করা হয়েছে। স্থানীয় সালেহা আক্তার, রহিমা বেগম ও স্বপন বণিক ও তাদের লোকজন দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে জমিতে দখলের চেষ্টা করেছে বলে ভূক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছেন।
এ নিয়ে ঘিওর থানায় দু’পক্ষই অভিযোগ করেছেন। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু পরিবার নির্যাতন ও জমি দখলের পেছনে ষড়যন্ত্র কিংবা রাজনৈতিক ফায়দা লুটার কৌশল কিনা বিষয়টি প্রশাসন ও পুলিশকে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্য, নথিপত্র পর্যালোচনায় ও স্থানীয়রা জানান, গোয়ালজান মৌজার ১৯২ এসএ দাগের ৬৩ শতাংশ জমি স্থানীয় খুকি বালা ৪৯ শতাংশ ও ননী গোপাল বণিক ১৪ শতাংশ জমি রেকর্ড রয়েছে। পরবর্তিতে আরএস দাগে ওই দাগটি পৃথক তিনটি খতিয়ানে রেকর্ড হয়েছে। এই রেকর্ডে আরএস ১৫৮ দাগে কার্ত্তিক চন্দ্র বণিক ১৪ শতাংশ, আরএস ১৫৯ দাগে খুকি বালা ৩৬ শতাংশ ও আরএস ১৬০ দাগে বসন্ত রাণী ১৩ শতাংশ জমি রয়েছে। এভাবেই ওয়ারিশানরা ভোগদখল করে আসছিলেন।
ভূক্তভোগী সুবোধ বণিক ও পরিবারের সদস্যরা জানান, তার দাদি বসন্ত রাণী মালিকানা আরএস ১৬০ দাগে ১৩ শতাংশ জমি কারো কাছে বিক্রি করেনি। কিন্তু, স্থানীয় স্বপন বণিক দাবি করেন বসন্ত রাণী আরএস ১৫৮ দাগে থেকে ১৪ শতাংশ বিক্রি করে গেছেন। তা নিয়ে আপত্তি জানালে বসন্ত রাণীর আরএস ১৬০ দাগে ১৩ শতাংশ দাবি করে স্বপন আদালতে মোকদ্দমা করলে প্রথমে খারিজ করে দেন বিচারক। এরপর আপিলে স্বপনের ডিক্রি হয়। এ নিয়ে দ্বারস্থ হলে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয় হাইকোর্ট। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোপনে স্বপন তার স্ত্রীকে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেন। এরপর প্রায় এক বছর আগে সালেহা আক্তারের কাছে বিক্রি করেন। তারা জমিতে দখলে যেতে চাইলে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা শুনে বিরত থাকেন।’
সুবোধ বণিক অভিযোগ করে বলেন, ‘এতোদিন জমিটি নিয়ে সবাই চুপচাপ ছিল। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর প্রতিপক্ষের লোকজন জমিটি দখলে নিতে তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা গত শনিবার জমিটি নিয়ে সালিশ বসার উছিলায় ভাড়াটে লোকজন নিয়ে এসে নিজেদের পক্ষে কথা বলে। এরপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সালেহা আক্তার, রহিমা বেগম ও স্বপন বণিক ও তাদের লোকজন দেশীয় ধারালো অস্ত্র হাতে নালিশী জমিতে ছাপড়া ঘর তুলে দখলের চেষ্টা করেন। মারধরের হুমকি দিলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানে থেকে পালিয়ে গিয়ে পুলিশকে জানাই। বর্তমানে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।’
স্থানীয় নানা শ্রেণি পেশার মানুষ জানান, এলাকায় হিন্দু-মুসলমানসহ সকল ধর্মের লোকজন সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছেন। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে এলাকার মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়ি-ঘর, মন্দির পাহাড়া দিয়েছেন। যে কারণে এই এলাকায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু, সুযোগ সন্ধানী ওই লোকজন দেশের এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রহস্যজনকভাবে সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখলের পায়তারা করছেন। সংখ্যালঘু পরিবার নির্যাতন ও জমি দখলের পেছনের বৃহৎ কোন ষড়যন্ত্র কিংবা রাজনৈতিক ফায়দা লুটার কৌশল কিনা বিষয়টি প্রশাসনকে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে সালেহা আক্তার জানান, এক বছর আগে জমিটি স্বপনের কাছ থেকে কেনেছেন তিনি। এতোদিন জমিতে দখলে যেতে পারেননি। গত শনিবার সেখানে কয়েকজন আইনজীবী ও লোকজন নিয়ে সালিশে বসা হয়েছিল। আইনজীবীরা ও লোকজন বলার পর জমিটিতে ছাপড়া ঘর তোলার হয়েছে। তবে, ছাপড়া ঘরটি সেখানে তোলার সময় কেউ বাধা দেননি।
ঘিওর থানার ওসি আশীষ কুমার স্যানাল জানান, দু’পক্ষই লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখল করা অপরাধ। বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যদের পুলিশ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
এই বিভাগের আরও সংবাদ