আজ ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং

বারহাট্টায় চারটি ইউনিয়নে পানি বৃদ্ধি – ফসলী ধান এখন গরুর খাদ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
নেত্রকোনার বারহাট্টায় বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে পানি বন্দী হয়েছে ৪ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের মানুষ। ধানের ওপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের নিচু ফসলী জমি তিন দিন যাবৎ পানির নিচে থাকায় পচনধরা শুরু হয়েছে। কৃষকেরা এখন পানির নিচ থেকে ধান গাছ কেটে গরুর জন্য নিয়ে যাচ্ছে। এত শখের ফসলী ধান এখন গরুর খাদ্য। মাছ চাষীরা দুই দিন চেষ্টা করে আজ সোমবার হাল ছেড়ে দিয়ে স্থানীয় বাজারের চায়ের দোকান গুলোতে সময় কাটাচ্ছে।

গত কালকেও ধানের চারা গুলো দৃশ্যমান ছিল। দেখতে দেখতে আজ সকালে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সাহতা ইউনিয়নের দরুন সাহতা গ্রামের ৫০ থেকে ৬০ টি পরিবার ঘর ছাড়ার উপক্রম হয়েছে। তাদের রান্না ঘর ও টয়লেট ইতোমধ্যে পানির নিচে চলে গেছে ।
এভাবে আর কিছুক্ষণ পানি বৃদ্ধি ফেলে তাদের ঘর ছাড়তে হবে।

রায়পুর ইউনিয়নের ফকিরের বাজারের রাস্তাঘাট পানি সাথে থৈথৈ করছে। ফিশারি গুলো ডুবে যাওয়ায় মাছ চাষীরা এখন দিশেহারা।

আসমা ও চিরাম ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের মানুষের ফিশারি ও ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। আগামী এক- দেড় মাস পর যারা ৬ মাসের ফসল ঘরে তুলতো তাদের আশা হতাশায় রুপ নিয়েছে। বিশেষ করে সাহতা ব্রীজের পাশে মুচারখালী দিয়ে পানি উপচে পড়ে পুরো ফসলী জমির মাঠ তলিয়ে গেছে।

ইতোমধ্যে সাহতা সেতুটি পানির সমান সমান হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সেতুর পাশে পাকা রাস্তাটি পানির স্রোতে ভেঙ্গে ঢলের সাথে ফসলের মাঠে চলে যাচ্ছে। আজকে দিন পানির গতি চলমান থাকলে রাস্তার অস্তিত্ব থাকবে না বলে মনে করছে স্থানীয়রা।

দরুণ সাহতা গ্রামের ফিশারী ব্যবসায়ী মোতালেব মিয়া বলেন। আমাদের বাড়িঘরে দেখতে দেখতে পানি ওঠে যাচ্ছে। আমার ২ একর জায়গায় একটি ফিশারী পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ১০ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলাম। কত আশা করেছিলাম, এই বছর ১৫ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করবো।

এই গ্রামের নুরুজ্জামান এর ফিশারীর প্রায় ৬ লক্ষ টাকার মাছ চলে গেছে। নুরুজ্জামান দিশেহারা হয়ে নিজের ফিশারীতে জাল ফেলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে।

মুচার খালী ছোট্ট সেতুটির পাশে বসবাস করে ১১ সদস্যের দুই মুচি পরিবার। তারাও এই ধলাই নদীর পাড়ে ভাল নেই। রান্নার চুলো সমান পানিতে ছোট ছোট পুলাপান নিয়ে বসবাস করছে দুটি পরিবার। পরিবারের প্রধান পরিমল রবি দাস জুতা সেলাই করে সংসারের চাহিদা পূরণ করে।

স্থানীয়রা বলছে গত কালকে সবুজ ফসলের মাঠ দৃশ্যমান ছিল। আজ সকাল থেকে চোখের সামনে থেকে আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওপারে কোন পানি নেই। তারা বলছে ধলাই নদীর ওপারে রাঙ্গাধাইর বাঁধটি ছেড়ে দিলে ঐপাশে পানি যেতে পারতো। রাঙ্গাধাইর বাঁধটি নদীর ওপারের মানুষেরা গায়ের জোরে আটকিয়ে রেখেছে।

বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার ববি বলেন, বারহাট্টায় পাহাড়ি ঢলের পানির কারনে নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে । আসমা, রায়পুর, চিরাম, সাহতা ইউনিয়নের নিচু জায়গাগুলোর মধ্যে কিছুটা পানি বৃষ্টি হলেও এখন পর্যন্ত বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার খবর পাইনি। আর রাঙ্গাধাইর বাঁধটি অভিযোগের ভিত্তিতে কিছুদিন আগে দেখতে গিয়েছিলাম। বাঁধ কেটে দিলে খুব বেশি উপকার হবে না। বরং বাঁধ কাটতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এখানে একটা স্লুইস গেটের প্রস্তাবনা দিয়ে রাখা হয়েছে। এটি হয়ে গলে দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি বজায় থাকবে।

 

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ