আফজাল হোসেন বারহাট্টা( নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
ঝগড়া মারামারি নিজেদের মধ্যে থাকতে পারে। কিন্তু বিপদে পড়লে একসময় নিজের জাতি এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়ায়। বিপদ থেকে তরান্বিত হয়ে উপকারের কথা ভুলে গিয়ে শত্রুতা তৈরি করে একদল মানুষ। এভাবেই এই জগতের প্রাণ গুলো ধোঁকায় নিমজ্জিত হয়ে বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছে। মানুষ মানুষ কে বিশ্বাস করে করে বোকা হচ্ছে। বর্তমানে এই সমাজের বাস্তব চিত্র গুলো পাখির ওপর প্রয়োগ করছে একদল শিকারী। প্রয়োগ করে সফলও হচ্ছে।
শিকারীদের মধ্যে কেউ কেউ শখের বশে শিকার করে। আবার কেউ কেউ আছে শিকার না করলে ঘরে চাল ডাল নিতে পারে না। শখের-বশের শিকারীরা পাখি শিকার করা অপরাধ জানলেও অভাবী শিকারীরা তা জেনেও না জানার ভান করে । ভান না করে কি করবে ,পেটে ক্ষুধা মুখে লাজ রেখে লাভ কি।
এমন একজন ভান করা মানুষের নাম শ্যামল চন্দ্র সিং। সে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার কাশতলা গ্রামের মধু সিংয়ের ছেলে। কবি নির্মলেন্দু গুণের বাড়ির পাশেই ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে সরকারের দেয়া একটি ঘরে বসবাস করে শ্যামল সিং।
বছরের পর বছর ধরে নিজের শরীরের শ্রম বিক্রি করে সংসারের চাহিদা পূরণ করে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে। সারা বছর অন্যের জমিতে কাজ করে। রাতের শেষ সময় নিজের পালিত একটি বক দিয়ে ফাঁদ পেতে বক শিকার করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে কোন মতে দিনাতিপাত করছে শ্যামল সিং।
শ্যামল সিং এর সাথে ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে দেখা হয় কবি নির্মলেন্দু গুণের বাড়ির পাশে। কথা হয় কালবেলার সাথে। জিজ্ঞেস করা হয় পাখি কয়টা পেয়েছেন। সেই বলে আজ একটা পাখিও পায় নি। মাঝেমধ্যে তিনটা চারটা পাখি ধরতে পারি। প্রতিটি পাখি ১২০ টাকা করে বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মেটাই। ক্যামেরায় ছবি নেয়ার সময় সে ভয় পেয়ে যায় আর বলে আমি শখের বশে শিকার করি, আর আসবো না। পরে তাকে কিছু হবেনা বলে সাহস দিলে তার সংসারের অভাবের কথা বলে। এবং কিভাবে শিকার করে তা বর্ণনা করে। সে বলে, আমি প্রতিদিন শেষ রাতে পালিত বকটি নিয়ে মাঠে চলে যাই। প্রথমেই গাছের লতা- পাতা দিয়ে একটি ঘর বানিয়ে বকটিকে ঘরের উপরে রেখে আমি ঘরটিতে নিজেকে লুকিয়ে রাখি। তখন বন্য বক গুলো নিজের জাতিকে বাঁচাতে এসে ঘরটির ওপরে বসে। আর আমি ভিতর থেকে বন্য বকটিকে ধরে ফেলি। মাঝেমধ্যে খালি হাতেও বাড়িতে যাই, যেমন আজকে একটা পাখিও পাইনি।
শ্যামলের স্ত্রী জয়া রানীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার স্বামীর পেটে সমস্যা। এখন আর আগের মত পরিশ্রম করতে পারে না। এর পরও অন্যের বাড়িতে সারাদিন কাজ করে রাত তিন টার সময় বক নিয়ে শিকারে যায়। মাঝেমধ্যে বক পায় মাঝেমধ্যে পায় না। একটা চাওলের কার্ড আছে। আগে তিনশত টাকা দিয়ে এক বস্তা চাওল আনতাম এখন ৪৫০ টাকা দিয়ে আনতে হয়। আর কোন সুযোগ সুবিধা পাই না। আমরা খুব অভাবে আছি।
কাশতলা গ্রামের আল আমিন মিয়া বলেন, শ্যামল সিং খুব কষ্টে জীবনযাপন করে। একটি ছেলে বড় হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ কাম করে না। শ্যামল পাখি শিকার ও অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোন রকম সংসারের চাহিদা পূরণ করে।
বারহাট্টায় বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা না থাকায় উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শিহাব উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, আমার কাজ হল চিকিৎসা দেয়া, তবে এটুকু বলতে পারি , বক একটি বন্য পাখি। এটি শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
এই পরিবারটিকে সহযোগিতা করা যায় কি না এই ব্যাপারে বারহাট্টা সমাজ সেবা কর্মকর্তা এস এম গোলাম হোসেনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তাকে সুবিধা দেয়ার মত আমাদের এখানে কিছু নেই। বয়স্ক বা পঙ্গু হলে ভাতার ব্যবস্থা করা যেতো। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি থাকলে কিছু ঔষধের ব্যবস্থা করা যেতো।