আজ ৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে মার্চ, ২০২৫ ইং

অদ্ভুত আবদার – মরার আগে বিড়ি খেতে  চেয়েছিল! 

নিজস্ব প্রতিবেদক
আজব এই পৃথিবীতে একেকজনের চিন্তা একের রকম। মরার আগে সবাই  ভাল ভাল খাবার বা শখের কিছু আশা করে। তাই বলে মরার আগে বিড়ি খেতে চায়, এমন নজির কোথায় আছে! কিন্তু নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় ১৩ অক্টোবর রবিবার রাতে এমন ঘটনা ঘটছে। বিড়ি টানতে চেয়ে আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শিপন মিয়া নামের এক যুবক।
 শিপন মিয়া( ৪২) গুমুরিয়া গ্রামের মৃত কেরামত আলীর ছেলে। হার্ট অ্যাটাকে পড়ে যাওয়ার আগে সে উপজেলা আসমা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে পুজা মণ্ডপে ছিল। সেখান থেকে বুকে ব্যথা অনুভব করে ফার্মেসী থেকে একটি গ্যাসের টেবলেট কিনেছিল । বুকের ব্যথায় টিকতে না পেরে কিছুক্ষণের মধ্যেই মাটিতে পড়ে যায় শিপন মিয়া।
এর পর স্থানীয়রা থাকে দ্রুত বারহাট্টা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসিজি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে জানায়। এবং দ্রুত তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। এম্বুলেন্সে উঠার আগে আবার হার্ট অ্যাটাক করে। এর পর রাত ৯.৩০ ঘটিকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা বলেন, মরার আগে  শিপন মিয়া সবার সাথে কথা বলতেছিল। আর নিজের বুকে হাত দিয়ে মাঝতেছিল।সে শারীরিক ভাবে খুব দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। ঠিক মত খাওয়া-দাওয়া  করতে পারতো না। সারাদিন বিড়ির ওপর থাকতো। সে পেটের ক্ষুধা বিড়ি টেনে মেটাতো।
শিপন মিয়ার দাফন কাফনের পর মা জুবেদা আক্তার আবেগাপ্লুত হয়ে বলে, আমার ছেলে মৃত্যুর আগে হাতের ইশারায় একটা বিড়ি চেয়েছিল। এর পর আর কথা বলতে পারছিল না। আমি বললাম শিপন তুই না কইলে বিড়ি টান দিবি। এর পর আর আমার ছেলে কথা কয় না। অভাবের সংসারে সুখ কি জিনিস তা আমার সন্তানেরা দেখে যেতে পারেনি। বড় ছেলেটাও কয়েকবছর আগে ক্যান্সারে মারা গেছে।
সোমবার দাফন কাফনের পর তার বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, জরাজীর্ণ শিপন মিয়া গত কয়েকদিন যাবৎ বুকে ব্যথা অনুভব করছিল। অভাবের কারণে তার চিকিৎসার দিকে মন ছিল না। তার বড় বৌ পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্যে তিন দিন ধরে অন্যের বাড়িতে কাজ করে। ছোট বৌ রাস্তায় মাটি কাটার  কাজ করে । মা ভিক্ষা করে আবির নামে বড় নাতিকে নিয়ে ভাঙ্গা ঘরটিতে বসবাস করে। কয়েকদিন আগে মানুষের কাছে ভিক্ষা করে জরায়ুর অপারেশন করেছে। এইসব কারনে কাউকে বুকের ব্যথার কথা বলেনি। এছাড়া কয়েক বছর আগে সে দ্বিতীয়  বিয়ে করে এলাকায় ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে।
এক সংসারের ভরণপোষণে সচ্ছল ব্যক্তিরাই হিমশিম খায়। কিন্তু অভাবী শিপনের দুই সংসার। প্রথম সংসারে এক মেয়ে ও এক ছেলের চাহিদাই পূরণ করতে পারছিলো না শিপন মিয়া। এর পর আবার দ্বিতীয় বিবাহ করে আরেক ছেলের বাবা হয়। আর শিপনের বড় মেয়েকে ১৩ বছর বয়সেই বিয়ে দিয়ে ঘর খালি করেছে।
ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে এলাকা বাসীর চোখে জল এসে যাচ্ছে। সবাই যার যার মত  এতিম বাচ্চাদের পাশে থাকবে বলে আশ্বস্ত করছে। কিন্তু ছোট ছোট দুটি ছেলে রাত থেকে তার বাবাকে খুঁজছে। তারা এখনও জানে না যে তাদের বাবা আর ফেরত আসবে না। বড় ছেলে আবির আর ছোট ছেলে খোকা। তারা দুই সৎ ভাই। কিন্তু থাকার মত শিপনের কোন ঘর নাই। তার মা জুবেদা আক্তার ছোট একটি পলিথিনের ঘরে এক নাতিকে নিয়ে  বসবাস করে।এতো ছোট ঘর, এটা দুই ভাগ করলে দুটি খাট পড়বে না। তাই শিপন বড় বউয়ের বাড়িতে ঘর জামাই হিসেবে থাকতো। আর ছোট বৌ কৈলাটি গ্রামে বাবার বাড়িতে থাকতো। এখন তারা সবার সহযোগিতায় এতিম বাচ্চাদের নিয়ে বাঁচতে চায়।
 সাবেক মেম্বার কাশেম মিয়া বলেন,আমি আমার বিশ্বস্ত একটা সঙ্গী হারালাম। অভাবে থাকলেও সে কাউকে বুঝতে দেয় নি। মরার সময় আমার কাছে সে একটি বিড়ি চেয়েছিল। কিন্তু বিড়িতে টান দেয়ার আগেই সে দুনিয়া থেকে চলে গেলো। সে আমার খুব আপন ছিল।
আসমা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আশরাফুল আলম রিপন বলেন,প্রথমেই শিপনের মৃত্যু নিবন্ধন করতে হবে। এর পর তার স্ত্রীর আইডি কার্ড ও মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। এগুলো দিলে আমি নিজে দৌড়াদৌড়ি করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের জন্য বিধবা ভাতা  কার্ড করার ব্যবস্থা করবো।

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ