আজ ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৫ ইং

আশুলিয়ায় শ্রমিক আন্দোলনের নেপথ্য কি পোশাক খাতকে অস্থির করার পায়তারা?

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আশুলিয়ায় পোশাক কারখানাকে কেন্দ্র করে মাঝে মাঝেই “শ্রমিক আন্দোলনে মহাসরক অবরোধ” গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে দেখা দিচ্ছে। কিছু দিন আগে শ্রমিকদের সাথে যৌথ বাহিনী সংঘর্ষে একজন শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটে। সে সময় বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা মহাসরকে ৫৩ ঘন্টা অবস্থানের করলে শিল্পাঞ্চের প্রান কেন্দ্র ইপিজেডসহ এ এলাকার সমস্ত কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরে।

মোট কথা বলতে, বিগত সরকার পতনের পর থেকে একের পর এক আন্দোলন নিয়ে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে শ্রমিকদের। এর মধ্যে কিছু আন্দোলনের যৌক্তিকতা থাকলেও বেশিরভাগ আন্দোলনের কোন সুনির্দিষ্ট কারন উল্লেখ করতে পারেনি আন্দোলনকারীরা। এবং কি আন্দোলনের সময় তাদের সাথে সাংবাদিকরা কথা বলতে গেলে তারা কথা না বলে খারাপ আচরণ করেছে এবং ছবি তুলতে গেলে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়েছে। এতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এটা কি শ্রমিক আন্দোলন নাকি অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করা।

সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ আশুলিয়ার পলাস বাড়িতে অবস্থিত গিল্ডান অ্যাক্টিভওয়্যার বাংলাদেশ লিমিটেডের (গ্যাব) শাহরিয়ার গার্মেন্টসের শ্রমিকরা কারখানার এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে সকাল থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।

এ সময় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা সেই কর্মকর্তার বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছেন। শ্রমিকেরা সড়কে অবস্থান নিয়ে থাকায় সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ থাকে মহাসড়কে। এতে ব্যস্ততম এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী অগণিত মানুষকে চরম ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। শুধু তাই নয় সবচেয়ে বিপদে পড়ে এ এলাকার ব্যবসায়িরা। কথায় কথায় রাস্তা আটকিয়ে অবরোধ করার ফলে তাদের ব্যবসার অবস্থা একেবারে বিপর্যস্থ।

সরজমিনে দেখা যায়,বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে মহাসড়কটির পলাশবাড়ি এলাকায় গিল্ডান অ্যাক্টিভওয়্যার বাংলাদেশ লিমিটেডের (গ্যাব) শাহরিয়ার গার্মেন্টসের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন। বিকেল ৪ টার সময় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও তাদের অবরোধ চলছিল।

এ সময় বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, কয়েকদিন আগে কারখানার কান্ট্রি ডিরেক্টর তাইজুল ইসলামের অপসারণসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন করে এই কারখানার শ্রমিকরা। পরে মালিকপক্ষ সব দাবি মেনে নেওয়ায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে তাইজুল ইসলামকে আবার কারখানায় যোগদান করায়। আজ ওই কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা।

কারখানা এক অপরেটর বলেন, আমাদের ভাতা ফিফটি পার্সেন্ট দিত, ফিফটি পার্সেন্ট দিতনা। ফিফটি পার্সেন্ট তারা নিয়ে নিত। বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এ ম্যানেজমেন্ট বা স্টাফ যারা আছে এখানে সবারই ৪ টা ৫ টা করে বাড়ি আছে। একজন সাধারণ স্টাফ এত বড় বড় বাড়ি কিভাবে করতে পারে? আমাদের টাকা আত্মসাৎ করে এই বাড়িগুলো করছে। আমাদের সবার একটাই দাবি, আমরা তাইজুলের চাইনা, তাইজুলের পদত্যাগ চাই।

সড়ক অবরোধের পর সকাল ১০ টার দিকে কারখানা থেকে অদূরে বসুন্ধরা এলাকায় গিয়ে কর্মকর্তা তাইজুলের ৯ তলা বাড়িতে হামলা চালায় প্রায় ২-৩ শ মানুষ। সেই কর্মকর্তার দাবি, হামলাকারীদের মধ্যে শ্রমিকরাও ছিলেন। তাইজুল বলেন, তারা বাড়িতে এসে বাড়ির গেট ভেঙ্গে ফেলে। একটি প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। সেসময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। ভাংচুর চালিয়ে তারা ফিরে যায়। হামলায় প্রায় ৭-৮ জন আহত হয়েছেন বলেও জানান তাইজুল ইসলাম।

এ সময় কথা হয় এক পথচারীদের সাথে তিনি জানান, টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় ডাক্তার দেখানোর জন্য সকাল বেলা বাড়ি থেকে বের হইছি। গাড়ি করে শ্রীপুর পযন্ত আসার পরে জামে আটকে পরি। দুই ঘন্টাও গাড়ি ছাড়ে না দেখে পায়ে হেঁটে রওনা দিছি। এখানে কি হইচে আমি জানি না। আমার হাটতে খুব কষ্ট হইতাছে তারপরেও যাইতে তো হইব ডাক্তার দেহানের জন্য।

কথা হয় যানজটে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা এক ট্রাক ড্রাইভারের সাথে তিনি জানান, সকাল সারে আটটা থেকে গাড়ি জমাইয়ে বয়ে রইচি, অবরোধ ছাড়ার নাম নাই। সময় মত মাল ডেলিভারি না দিলে নানা কথা শুনোন লাগে। এরা কি দাবি করতাচে বুজবার পারতাচি না। দাবি কোন সুম মানবো কোম সুম গাড়ি ছারব বুজবার পারতাছি না।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে আইন শৃংখলা বাহিনী। শিল্পপুলিশ-১ এর এএসপি মহিউদ্দিন মিরাজ বলেন, শ্রমিকরা সাড়ে ৮ টা থেকে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন। এখনও যান চলাচল বন্ধ। শ্রমিকদের দাবি একজন কর্মকর্তার পদত্যাগ। আমরা শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।

এ ভাবে কারনে অকারনে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে নবীনগর-চন্দ্রা-আব্দুল্লাপুর মহাসড়কের জমগড়া, জিরাবো, পলাশবাড়ি, বাইপাইল, ইপিজেড এলাকাসহ পুরো আশুলিয়ায় মাঝে মাঝেই অচল অবস্থা তৈরি করা হয়। এতে প্রশ্ন উঠেছে এটা কি শ্রমিক আন্দোলন নাকি পোশাক কারখানায় অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থকারী খাতটাকে বন্ধ করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার পায়তারা।

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ