-
- সারাদেশ
- অপর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও স্টাফে চলছে শিবালয়ে ইছামতি জেনারেল হাসপাতাল
- প্রকাশের সময়ঃ অক্টোবর, ২৫, ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ণ
- 394 বার পড়া হয়েছে
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ অপর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও স্টাফ নিয়ে চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হচ্ছে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার উথলি এলাকায় ইছামতি জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম। লাইন্সেসিং ও অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রেও রয়েছে গড়মিল। দীর্ঘদিন ধরে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই উথলিস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে হাসপাতালটির কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালিয়ে আসছে। এতে রোগীরা অপচিকিৎসা ও আর্থিক প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তাদের আতাতেই হাসপাতালটি কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে সম্প্রতি ছাত্র-জনতার সম্মুখে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফজলে বারি।
ইছামতি জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগস্টিক সেন্টার থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে উথলি হাসপাতাল গেটে দ্বিতীয় তলায় ইছামতি ডায়াবেটিক সেন্টার নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে । এরপর মালিকানা বদলে ২০২২ সালে ইছামতি জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ২০২৪ সালের ২৪ শে জুলাই থেকে পরিধি বাড়িয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত হাসপাতালটিতে শুধু সিজারিয়ান সেকশন অপারেশসের জন্য ৭০ রোগী এসেছেন। প্রতিটি অপারেশনের জন্য কেবিন ভাড়াসহ নেয়া হচ্ছে ৯ থেকে ১২ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় হাসপাতালটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে তিন এমবিবিএস ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও একজনকেও পাওয়া যায়নি। ছয় নার্স থাকার কথা থাকলেও কেউ উপস্থিত ছিলেন না। পরে ফোন করে এক নার্সকে ডেকে আনা হয়। হাজিরা বহিতে কোন ডাক্তারের নাম ও স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি। দুই নার্সের নাম ও স্বাক্ষর পাওয়া গেলেও একজন ১৭ই অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্বপালন করেছেন। আয়া আছেন দুইজন। তাদের মধ্যে একজন অপারেশন থিয়েটারে কাজ করেন। তারা উপস্থিত ছিলেন ২০ ও ২১ শে অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু হাসপাতালটিতে বুধবার অর্থ্যাৎ ২৩ শে অক্টোবর মিনু নামে এক প্রসূতিকে সিজারিয়ান সেকশন অপারেশন করা হয়েছে। আরেক প্রসূতির সিজারিয়ান সেকশন অপারেশন করা হয়েছে কয়েকদিন আগে।
হাসপাতালটির লাইসেন্সিং ও কাগজপত্রে অসঙ্গতি ও মেয়াদোত্তীর্ণ পাওয়া যায়। সেগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইন্সেস হাল নাগাদ পাওয়া যায়নি। ই-টিন ও ভ্যাট সার্টিফিকেট পাওয়া গেলেও রিটার্ন দাখিলের কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন্সেস দেখালেও সেটি অনলাইনে যাচাই করার জন্য কিউআর কোড কিংবা কৃর্তপক্ষের সিল স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি। সেটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের ৩০ শে জুন। এছাড়াও ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেখাতে পারেনি। একথা ও ওকথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন মালিকপক্ষের লোকজন।
এসব অনিয়ম ও রোগী সেবায় অবহেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানাতে চাইলে মালিকদের একজন আবু দাউদ জানান, তিন মাস ধরে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখনও পুরোপুরি সবকিছু চালু হয়নি। হাসপাতালটিতে একজন এমবিবিএস ডাক্তার সার্বক্ষণিক দায়িত্বপালন করেন। তিনি আজ আসেননি। আর নার্স রয়েছেন তিনজন। একজন এসেছেন। কিছু কাগজপত্র নবায়ন করা হচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা অবগত রয়েছেন।
স্থানীয় কিছু লোকজন জানান, সরকার পতনের পরপরই ছাত্র-জনতা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফজলে বারির বিরুদ্ধ নানা অভিযোগ, অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেন। তারা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখলে দোষ স্বীকার করে পদত্যাগ করেন ডা. ফজলে বারি। এ সময় তিনি ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে হাসপাতাল গেট এলাকার সকল বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে মাসিক ৫ থেকে ১০ হাজার করে নেয়ার কথাও স্বীকার করেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মো. মোকছেদুল মোমিন বলেন,‘ ইছামতি জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগস্টিক সেন্টারের বিষয়ে আমি অবগত নই। আপনার মাধ্যমেই বিষয়গুলো জানলাম। আমি দ্রুত খোজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থাগ্রহণ করবো। তাছাড়াও নিয়ম নীতি না মেনে জেলার কোন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগস্টিক সেন্টার চালাতে পারবে না। যদি কেউ তা করে থাকেন। তাহলে দ্রুত তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এই বিভাগের আরও সংবাদ