আজ ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক বিষয়ে তাড়াহুড়ো নয়; তারেক রহমান

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সংবিধানের সঙ্গে যুক্ত বিষয়ে তাড়াহুড়া না করে সুচিন্তিতভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ পর্যায়ে এসে এর গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে যে ধরনের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে এবং তাতে এ ধরনের বিতর্ক সরকারের গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এটা সরকারের লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার কারণ হতে পারে।

এ কারণে বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা কিংবা সরাসরি সংবিধানের বিধিবিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া পরিহার করে সুচিন্তিত ও সুবিবেচিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে ভবিষ্যতে উদ্ভূত যেকোনো জটিল প্রশ্ন বা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সহজ হবে।’

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাবে দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়কে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তারেক রহমান।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপির পূর্ণ সমর্থন রয়েছে জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি মনে করে, কোনোভাবেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। কারণ এই সরকার ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ও বাংলাদেশি শক্তির ব্যর্থতা হবে। মাফিয়া সরকারের পলায়নের পর তাৎক্ষণিক গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহল ছাড়াও বর্তমানে খোদ সরকারের মধ্যেও নানা রকম ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন বর্তমান সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছে কিংবা বর্তমান সরকার কি বিপ্লবী সরকার কেউ কেউ এ ধরনের প্রশ্ন তুলছে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘মাফিয়া সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে মেরামত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ১৫ বছরের জঞ্জাল শেষ করে চলমান সংস্কার কার্যক্রম শেষ করা বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি, এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে গিয়ে জনগণের প্রতিদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা না গেলে, জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়বে। ফলে এই সরকারের কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এজেন্ডাভিত্তিক করা অত্যন্ত জরুরি।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পরাজিত অপশক্তি প্রশাসনে থাকা তাদের দোসররা নানা কৌশলে ষড়যন্ত্র করছে। এই কারণে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি থাকলেও একটি বিষয় বিএনপিসহ সবাই আমরা একমত মাফিয়া সরকারের বেনিফিশিয়ারিদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয়।’

তিনি বলেন, ‘একাত্তর সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ আর হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে ’২৪ সালের দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ সব ক্ষেত্রেই গণতন্ত্রকামী জনগণ বিজয়ী হয়েছে। সুতরাং হাজার হাজার আহত মানুষের আর্তচিৎকার, হাজারো লাখো শহীদের রক্তস্নাত জমিনে আমাদের মধ্যে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে যেকোনো মূল্যে আমাদের সেই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা গেলে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করে আর কেউ আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে সক্ষম হবে না। জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের একটিই বার্তা বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী, সংশয়বাদী কিংবা মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী এই বাংলাদেশ আপনার-আমার আমাদের সবার। তথাকথিত সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু নয়, এই জাতিরাষ্ট্রের আমাদের একটাই গর্বিত পরিচয় আমরা সবাই বাংলাদেশি। সবাইকে নিজেদের অধিকার আদায় এবং দায়িত্ব কর্তব্য পালনে সতর্ক থাকতে হবে। ‘৫ বছরে মাফিয়া সরকারের শাসনামলে হিন্দুসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর অন্যায়-অত্যাচার হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ ধর্মীয় রীতিনীতি নিশ্চিন্তে নিরাপদে উদযাপন করতে পারেন তেমন একটা রাষ্ট্র এবং সমাজ বিনির্মালেণর জন্যই বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ। সবার উদ্দেশ্যে আমাদের বার্তা একটিই ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার। সুতরাং আপনাদের প্রতি বিনীত আহ্বান, পলাতক স্বৈরাচারের পৃষ্ঠপোষক এবং তাদের দোসরদের কোনো উসকানিতে দয়া করে পা দেবেন না, কোনো গুজব, গুঞ্জনে দয়া করে কান দেবেন না।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে দলের ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা বরকত উল্লাহ বুলু, নিতাই রায় চৌধুরী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সন্তোষ শর্মা, ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির জয়ন্ত কুমার দেব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পরে অতিথিদের প্রসাদ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ