আজ ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং

বিশ্ব মোড়ল বাছাইয়ের ভোট, জরিপে কমলা এগিয়ে থাকলেও ইলেক্টোরালে এগিয়ে ট্রাম্প

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ভোট ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে। বিশ্বের বহুল আকাঙ্খিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সমাপ্তি ঘটছে আজ। আগামীকাল ভোটাররা তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন তারা কাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে চান। বলা হয়, বাস্তবে এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কেবল আমেরিকার নয়, বিশ্বের কূটনীতি এবং সামরিক নীতি নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে তার। কাল মূল ভোট হলেও দেশটিতে আগাম ভোট শুরু হয়েছে আগেই এবং সাত কোটির বেশি ভোটার ইতিমধ্যে ভোট দিয়েছেন। গতবারের চেয়ে এবারের আগাম ভোট বেশি পড়বে বলে আশা করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বি কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়াও আরো চার প্রার্থী নির্বাচনে লড়াই করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন দুই বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে, ইসরাইলি আগ্রাসনে বিপর্যস্ত গাজা ও লেবানন। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা ক্রমেই বাড়ছে। ইরান-ইসরাইলও যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। তাইওয়না নিয়ে চীনের সঙ্গে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে মার্কিন প্রশাসনের। এ নিয়ে দক্ষিণ চীন সাগর ও পূর্ব এশিয়া সংকটে পড়েছে। নতুন করে সংকট সৃষ্টি হয়েছে ভারত ও কানাডার মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে খালিস্তানি নেতাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসনের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের পালটা অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার চেষ্টা হচ্ছে ব্রিকস জোটের মাধ্যমে।

অস্থিতিশীলতা ও গৃহযুদ্ধ এবং সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত সুদান, মালি, সোমালিয়া, কঙ্গো, বুরকিনাফাসোসহ আফ্রিকার বহু দেশ। শুধু ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। মার্কিন নির্বাচন নিয়ে চিন্তায় ইউরোপও। এই অঞ্চলে বেশিরভাগ সমর্থন যাচ্ছে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের কাছে। ট্রাম্প জিতলে ইউরোপ সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন সেখানকার নেতারা। বিশ্বের এসব সংকটের মুহূর্তে কালকের ভোটেই জানা যাবে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস কি বাইডেনের দেখানো পথ অনুসরণ করে তার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাবেন? নাকি ‘বিশ্ববাদ নয়, আমেরিকাবাদ’ বিশ্বাস নিয়ে আবারো ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ নিয়ে পথ চলবেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি এবং অনেক জোটে দেশটির প্রধান ভূমিকার কারণে তারা এখনো বিশ্বমঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে দেশে দেশে গণতন্ত্রের সংকট বাড়বে না কমবে তাও নির্ধারিত হতে পারে মার্কিন নির্বাচনের মাধ্যমে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিস জয়লাভ করলে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতিসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউজের বর্তমানে অনুসৃত নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির খুব একটা পরিবর্তন না-ও হতে পারে। তিনি যার রানিংমেট এবং যার শারীরিক অসমর্থতার দরুন আকস্মিকভাবেই তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন পেয়েছেন, সেই জো বাইডেনের নীতির ধারাবাহিকতাই অক্ষুণ্ন রাখবেন কমলা হ্যারিস। তবে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হতে পারে, যদি তার বদলে এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নির্বাচনের সম্ভাব্য বিজয়ী কে, তা জানতে হয়তো কয়েকদিন ধরে অপেক্ষায় থাকতে হবে না। যদিও অনেক সময় মাসের পর মাস ফলাফল ঠিকমতো চূড়ান্ত হয় না। তবে চূড়ান্ত ভোট গণনা হওয়ার অনেক আগেই অঙ্গরাজ্য এবং সম্পূর্ণ নির্বাচনের ফলাফলে সাধারণত বলা সম্ভব হয় যে, কোন প্রার্থী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। যেমন পেনসিলভেনিয়ার ফলাফল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর ভোটগ্রহণের তিনদিন পরেই জো বাইডেনকে বিজয়ী বলা সম্ভব হয়েছিল। এ অঙ্গরাজ্য বাইডেনকে ২০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট প্রদান করে। এর মধ্য দিয়ে জয়ের জন্য তার প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিশ্চিত হয়ে যায়। ২০১৬ সালে অবশ্য ভোটের পরদিন সকালেই ট্রাম্পকে বিজয়ী হিসেবে স্বীকার করে নেন হিলারি ক্লিনটন। জনমত সমীক্ষা বলছে, ট্রাম্পের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে কমলা হ্যারিসের। কিন্তু নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে এগিয়ে ট্রাম্পই।

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ