আব্বাসী, স্টাফ রিপোর্টারঃ মানিকগঞ্জের সিংগাইরের তালেবপুরে “পরকিয়ার জের ধরে নিখোঁজের ১৮ (আঠার) দিন পর উজ্জল মিয়ার গলিত লাশ, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার( ০৭ নভেম্বর) দুপুরে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংএ পুলিশ সুপার মোঃ বশির আহমেদ ( অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত উজ্জল মিয়া(৩০) সিঙ্গার উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের উত্তর কাংশা গ্রামের মোহাম্মদ রোকমান মোল্লার ছেলে। উজ্জল মিয়া সিঙ্গাপুর প্রবাসী ছিল।
নিখোঁজের পর গত বুধবার (৬ নভেম্বর) তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার এবং বিশ্বস্ত সোর্স নিয়োগ করে সিংগাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের উত্তর ক্যান্সার গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে। হত্যা মামলার জড়িত নিহতের আপন ছোট ভাই মোহাম্মদ ঝন্টু (২৪) নিহতের স্ত্রী মোসাম্মৎ কাঞ্চন ওরফে মুনিয়া (২৩)পিতা জালাল উদ্দিন, এবং প্রতিবেশী মাসুদ (২২) পিতার নাম পাশা বিশ্বাস । সর্ব সাং উত্তর কাংশা দয়কে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে পুলিশ তালেবপুর ইউনিয়নের কাংশা ব্রীজের
পশ্চিম পাশে ধলেশ্বরী নদীর দক্ষিণ পাশে মোহাম্মদ আলীর আবাদি জমি সংলগ্ন নদীতে পানিশূন্য কচুরিপানার মধ্যে থেকে গলিত অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় লাশটি মাটিভর্তি প্লাস্টিকের ড্রামের সাথে লাইলনের রশি দিয়ে বাঁধা এবং মৃতদেহের মুখে স্কচটেপ পেঁচানো ও হাত-পা চিকন লাইলনের রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় সম্পূর্ণ পঁচা ও গলা অবস্থায় ছিল । ঘটনাস্থলে একজোড়া প্লাস্টিকের জুতা, মোবাইল ফোন ও লুঙ্গির ছেড়া অংশ দেখে ভিকটিমের স্ত্রী মোসাঃ কাঞ্চন উক্ত মৃতদেহটি উজ্জল মিয়ার বলে শনাক্ত করে। উক্ত ঘটনায় ডিসিস্ট এর পিতা মোঃ রোকমান মোল্লা বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করে। পরে সূত্রোক্ত মামলা রুজু হয়।
উল্লেখিত আসামীদের গ্রেফতার পরবর্তীতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে যে, আসামী মোঃ ঝন্টু ও কাঞ্চনা ওরফে মনিরা সম্পর্কে দেবর-ভাবী। আসামী ঝন্টু ও তার আপন বড় ভাই ডিসিস্ট উজ্জল মিয়া উভয়েই সিংগাপুর প্রবাসে থাকাকালে আসামী ঝন্টু মোবাইল ফোনে তার ভাবী আসামী কাঞ্চন ওরফে মনিরার সাথে কথা বার্তা বলার একপর্যায়ে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরকিয়া সম্পর্কের জের ধরে ঝন্টু তার ভাইকে সিংগাপুরে রেখে বাড়ীতে চলে এসে তার ভাবী কাঞ্চন ওরফে মনিরার সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত থাকে। ঘটনার ০৯ দিন পূর্বে আসামী ঝন্টুর ভাই সিংগাপুর হতে বাড়ীতে আসলে ঝন্টু ও কাঞ্চন ওরফে মনিরা দ্বয়ের অবৈধ পরকিয়ায় বিঘ্ন ঘটতে থাকে। যার প্রেক্ষিতে উল্লেখিত আসামীরা পরষ্পর যোগসাজশে ডিজিস্ট উজ্জল মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্ব-পরিকল্পনা মাফিক ঘটনার দিন গত ইং ১২/১০/২০২৪ তারিখ দিবাগত রাত আনুমানিক ১১:৩০ ঘটিকার সময় আসামী কাঞ্চন ওরফে মনিরা কফির সাথে তার স্বামীকে ঘুমের ঔষধ সেবন করিয়ে অচেতন করে। অতঃপর, আসামী ঝন্টু তার বন্ধু আসামী মাসুদকে ইমুতে কল করে বাড়ীতে ডাকে। মাসুদ আসার পর তিনজনে মিলে ডিসিস্ট উজ্জল মিয়াকে অচেতন অবস্থায় গলায় গামছা প্যাচাইয়া শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে। তৎপরবর্তীতে আসামীরা লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে উজ্জল মিয়ার মৃতদেহ বাঁশের সাথে বেঁধে ঘটনাস্থল ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। অতঃপর, আসামী মাসুদ তার বাড়ী হতে নীল রংয়ের প্লাস্টিকের ড্রাম ও ধারালো হাসুয়া নিয়ে নদীর পাড়ে এসে ড্রামে কাদা মাটি ভরে ড্রামের সাথে রশি দিয়ে উজ্জল মিয়ার মৃতদেহ বেঁধে লাশ নৌকায় উঠিয়ে নদীর দক্ষিণ পাশে নিয়ে হাসুয়া দিয়ে লাশের বুক চিড়ে লাশ নদীর পানিতে ডুবিয়ে গুম করে। আসামীদেরকে ইং ০৭/১১/২০২৪ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়।।