আজ ২৭শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ইং

সিরিয়ায় একের পর এক শহর দখলে নিচ্ছে বিদ্রোহীরা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিদ্রোহীদের দাপটে নাজেহাল হয়ে পড়েছে সিরিয়ার সেনাবাহিনী। একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলে নিচ্ছে তারা। আলেপ্পোর পর হামা, এবার গুরুত্বপূর্ণ দারা শহরও দখলে নিল বিদ্রোহীরা। শনিবার দক্ষিণ সিরিয়ার শহরটি দখল করে নেওয়ার দাবি করে বিদ্রোহীরা।

২০১১ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে এই শহর থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল।

এ নিয়ে বিগত এক সপ্তাহে বিদ্রোহীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি শহর হারাল সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। এতে আসাদের মিত্র দেশ রাশিয়া ও ইরান বড় ধরনের চাপের মুখে পড়ল।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ বিষয়ক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সহিংস লড়াইয়ের পর বহু সামরিক স্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

তারা এখন দারা অঞ্চলের ৯০ ভাগের বেশি নিয়ন্ত্রণ করছে।

বিদ্রোহী সূত্রগুলোর বরাতে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে বিদ্রোহীরা। এর আওতায় সেনাবাহিনী শহর থেকে সরে যাবে। সামরিক কর্মকর্তাদের প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে রাজধানী দামেস্কে নিরাপদে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

দারা শহরটি কৌশলগত ও প্রতীকীভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি প্রাদেশিক রাজধানী এবং জর্ডান সীমান্ত ক্রসিংয়ের কাছেই অবস্থিত। ২০১১ সালে এখান থেকেই গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। এই বিক্ষোভ থেকেই দেশের চলমান গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়।

গত সপ্তাহে আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে হঠাৎ হামলা শুরু করে সরকারবিরোধী বিদ্রোহীরা।

সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখলের পর বৃহস্পতিবার হোমসের উত্তরে হামা দখল করে বিদ্রোহীরা। আর এবার দারা শহর দখলের পর হোমস শহরের প্রান্তে পৌঁছানোর দাবি করেছে বিদ্রোহীরা।

সিরিয়ার সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ বাহিনী হোমস ও এর কাছাকাছি সরকারি প্রতিরক্ষা জোরদার করতে অবস্থান করছে।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভি সিরিয়ায় রাশিয়ান সমন্বয় কেন্দ্রের বরাত দিয়ে বলেছে, শুক্রবার হামা, ইদলিব এবং আলেপ্পোর গ্রামাঞ্চলে বিদ্রোহীদের সদর দফতর লক্ষ্য করে রাশিয়ান-সিরিয়ান বিমান হামলায় অন্তত ২০০ বিদ্রোহী নিহত হয়েছে।

বিদ্রোহীরা হোমস দখল করলে উত্তরে তুরস্কের সীমান্তের আলেপ্পো থেকে দক্ষিণে জর্ডান সীমান্তের দারা পর্যন্ত তাদের শক্তিশালী অবস্থানের একটি শৃঙ্খল দৃঢ় হবে। হোমস দখল করা বিদ্রোহীদের দামেস্কে আসাদ সরকারের পতনের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তুলবে।

বিদ্রোহীরা পুনরায় সক্রিয়

বিদ্রোহীরা গত সপ্তাহ থেকে তীব্র লড়াই শুরু করায় রাশিয়া এবং জর্ডান শুক্রবার তাদের নাগরিকদের সিরিয়া ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ১৩ বছর আগে প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। বিদ্রোহী বাহিনী এবার তাদের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব ঘাঁটি থেকে বেরিয়ে এসেছে।

২০২২ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সিরিয়ার সংঘাতে ৩ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এ সময়ে মূল মিত্র রাশিয়া, ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহর সহযোগিতায় আসাদ সরকার সিরিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে। কিন্তু সবই সম্প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে।

তেহরান, গত বছর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চিরশত্রু ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনার দিকে মনোনিবেশ করেছে। আঞ্চলিক কর্মকর্তা ও তিন ইরানি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ইরান শুক্রবার সিরিয়া থেকে তাদের সামরিক কর্মকর্তা ও কর্মীদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। ‘আসাদকে ক্ষমতায় রাখতে এটি ইরানের ব্যর্থতার লক্ষণ’ বলে সংবাদমাধ্যমটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রধান বিদ্রোহী দল এইচটিএসের প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-গোলানি শুক্রবার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জোর বলেন, “বিদ্রোহীরা আসাদের শাসনের অবসান ঘটাতে পারে। ”

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ