আজ ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ ইং

শিবালয়ে প্রধান শিক্ষক বহিরাগত নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করায়, তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার জাফরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ও বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে আজ সকাল ১০.৩০মিনিট (মঙ্গলবার) প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন কবির। প্রতিবাদে ‘আলমগীরের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান’সহ বিভিন্ন স্লোগানে বিদ্যালয় গেটে তালা ঝুলিয়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপে পুলিশ গেলে মুচলেকা দেয়ার পর প্রধান শিক্ষককে মুক্ত করা হয়। এদিকে, প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ ও লাখ লাখ টাকা অর্থ আত্নসাতের অভিযোগে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরইমধ্যে প্রধান শিক্ষক রাজনৈতিক আশ্রয়সহ নানাভাবে বিষয়টি ম্যানেজ ও ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
প্রত্যক্ষদর্শী, শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী জানান, ২১ শে নভেম্বর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ ও লাখ লাখ টাকা অর্থ আত্নসাতের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ ও মিছিল করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিদ্যালয় এসে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ১৫ দিনের ছুটিতে পাঠান। প্রধান শিক্ষক মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর। তার চাচাতো ভাই আবুল বাশার সুমন তেওতা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। প্রধান শিক্ষক আলমগীর ছিলেন আবুল বাশার সুমনের নির্বাচনী প্রধান সমন্বয়ক। নৌকা প্রতীকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কাছে গিয়ে ভোট চেয়েছেন। ভোট না দিলে সন্তানদের বিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বের করে দেয়ার ও ফেল করিয়ে দেয়ার ভয়ভীতিও দেখান। ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি নাম ভাঙিয়ে দলে ভিড়েন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদ ভাগিয়ে নেন। পরে আপত্তির কারণে সেই কমিটি প্রকাশ হয়নি। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকারের দোসর হয়ে এলাকায় কিছু বিএনপি’ নেতাকর্মী পরিচয়ধারী ব্যক্তিদের শেল্টার নেন প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদেরকে নানাভাবে ম্যানেজ ও হুমকি-দামকি দিয়ে আসছেন এই ভাড়াটিয়া লোকজন। পরে ২৪ শে নভেম্বর শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী প্রতিবাদে আবার বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অনুলিপি প্রদান করেন। প্রধান শিক্ষক বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক আশ্রয়ে গিয়ে অভিযোগকারীদের নানাভাবে ম্যানেজ ও হুমকি-দামকি প্রদান করেন। বিভিন্নভাবে তদবির শুরু করেন প্রধান শিক্ষক ও তার লোকজন। তদন্ত কমিটি গঠনে দেরি হওয়ায় ও প্রধান শিক্ষক গোপনে প্রয়োজনীয় নথিপত্র আয়ত্ত্ব নেয়ার তৎপরতায় আলাদাভাবে দুটি সম্পূরক অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিবালয় উপজেলা সহকারী কমিশনার এসএম ফয়জুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ১০ কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তদন্ত চালাকালীন সময় প্রধান শিক্ষককে ছুটিতেও পাঠানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী, শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী অভিযো করে জনান, গত সপ্তাহে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই প্রধান শিক্ষক ও তার ভাড়াটে, সন্ত্রাসী লোকজন অসৎ উদ্দেশ্যে আজ সকাল সাড়ে ১০.৩০ টায় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। সেখানে শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর স্লোগান ও বিক্ষোভে পিছু হটেন প্রধান শিক্ষকের লোকজন। কিছু লোকজন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কক্ষের ভেতর প্রায় ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বিদ্যালয়ে আর না আসার মুচলেকা দিয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর কবল থেকে মুক্ত হন প্রধান শিক্ষক। তেওতা ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হারুণ প্রধান শিক্ষককে মোটরসাইকেলে পেছনে বসিয়ে বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী আরও অভিযোগ করে বলেন,‘আলমগীরের পক্ষে তেওতা ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হারুণ, খায়ের মন্ডল, আফজাল হোসেন, নুরুজ্জামান মন্ডল, তারা শেখ, আইয়ুব মাষ্টার, মিজান, সালাউদ্দিন, লাল মিয়া, মিঠু, নুরুল হুদাসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জন বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসীকে নানাভাবে ম্যানেজ, ভয়ভীতি ও হুমকি-দামকি দিয়েছেন। আজ তাদের অধিকাংশই উপস্থিত থেকে আলমগীরকে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করিয়েছেন। বন্ধ থাকার পরও আজ সকল শিক্ষককে বিদ্যালয়ে উপস্থিত করেন প্রধান শিক্ষক। এরপর অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে বহিরাগত লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। যে কারণে শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। সঠিক সময়ে প্রশাসন ও পুলিশের হস্তক্ষেপে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
জাফরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীর কবির সাংবাদিকদের জানান, ছুটি শেষ হওয়ার কারণে বিদ্যালয়ে এসেছেন। সঙ্গে বহিরাগত লোকজন প্রসঙ্গে কোন কথা বলেননি তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। প্রধান শিক্ষকও থাকবেন ছুটিতে। তারপরও প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছেন। সেখানে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হলে প্রধান শিক্ষককেই দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।’

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ