আজ ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ ইং

কলকাতায় পাওয়া লাসের খন্ডিত অংশ এমপি আনারের: ডিএনএ প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা মাংস ও হাড় বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের বলে ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ।

কলকাতা সিআইডির বরাত দিয়ে হিন্দুস্থান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফরেনসিক পরীক্ষায় ওই দেহাংশের সঙ্গে ডিএনএর সঙ্গে আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের নমুনার মিল পাওয়া গেছে।

গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার। ১১ দিন পর তার খুন হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসে।

কলকাতার সিআইডি বলছে, ১৩ মে নিউ টাউনে সঞ্জীবা গার্ডেন নামের ওই আবাসিক ভবনে আনারকে হত্যা করে হাড় মাংস টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। তার কিছু অংশ টয়লেটে ফেলে ফ্লাশ করে ফেলা হয়। বাকি অংশ সুটকেসে ভরে বাগজোলা খালে ফেলে দেওয়া হয়।

কলকাতা পুলিশের আহ্বানে নভেম্বরের শেষ দিকে কলকাতায় যান আনারের মেয়ে ডরিন। তখন তার ডিএনএর নমুনা নেওয়া হয়। তারপর দুটি নমুনা যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয় সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে।

কলকাতা পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে হিন্দুস্থান টাইমস লিখেছে, “ডিএনএ প্রতিবেদনে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে কলকাতার ফ্ল্যাট আর খাল পাড় থেকে যে মাংস ও হাড় উদ্ধার করা হয়েছিল, তা বাংলাদেশের এমপির।”

গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার। তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করার পর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়।

তিনবারের এমপি আনার ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করেন। এরপর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়।

২২ মে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমপি আনারকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

পরে ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশের পুলিশ শিমুল ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমান নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ‘হোতা’ আখতারুজ্জামান শাহীন নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে পুলিশের ভাষ্য।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কলকাতার পুলিশ জিহাদ হাওলাদার নামে এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে। আর শাহীনের সহকারী সিয়াম হোসেন কাঠমান্ডুতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে নেপালের পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদে সিয়ামের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে নিয়ে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার থানা এলাকার কৃষ্ণমাটিতে বাগজোলা খালে নামে কলকাতার সিআইডি। পরে একটি ঝোপের পাশ থেকে বেশ কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়।

কলকাতার সিআইডি পুলিশের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আনারকে খুনের পর নিউ টাউনের বাসা থেকে তার শরীরের টুকরো টুকরো করা মাংস ট্রলি সুটকেসে ভরে বাগজোলা খালে ফেলে দিয়েছিল সিয়াম। সঙ্গে ছিল এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদার। খালে মাংস ফেলে আবার নিউ টাউনের বাসায় ফিরে যান সিয়াম।

এর আগে কলকাতার ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকেও মাংসের টুকরা উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সেগুলো ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, উদ্ধার করা মাংসের টুকরা ও হাড়গোড় পুরুষ মানুষের।

সেসব দেহাংশগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আনারের মেয়েকে ভারতে গিয়ে নমুনা দিতে বলা হয়। এর ভিত্তিতেই তিনি নভেম্বরে কলকাতায় যান।

আনারকে হত্যার ঘটনায় ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে একটি মামলা করেন তার মেয়ে ডরিন। সেই মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারি বিভাগ।

ওই মামলায় শিমুল ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমান ছাড়াও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সবাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

সেই জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী তার বাল্যবন্ধু ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ঝিনাইদহের আখতারুজ্জামান শাহীন। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল। তানভীর ও সেলিস্টিও হত্যাকাণ্ডস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ