আজ ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং

জাফরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার করল শিক্ষার্থীরা’ প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ও ব্যাখ্যা

গত ১৯/১২/২০২৪ তারিখে মানিকগঞ্জ জেলার অনলাইন নিউজপোর্টাল বিডি মেসেঞ্জারে ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার করল শিক্ষার্থীরা’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংবাদে যে সকল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। যা ভূল, বিভ্রান্তিকর ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পরিপন্থী। এতে একজন দুর্নীতির অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে গণমাধ্যমে পৃষ্ঠপোষকতা করার সামিল। এতে জনমনে বিভ্রান্তি সুষ্ঠু তদন্ত ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আমরা উক্ত সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।  ‘বিডি মেসেঞ্জার’ সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ আজিজুল হাকিমের বরাবর প্রতিবাদ লিপি ও ব্যাখ্যা পাঠিয়েছি। কিন্তু, তিনি আমাদের প্রতিবাদ লিপি ও ব্যাখ্যা প্রকাশ করেনি। তিনি কাগজপত্র যাচাই ও না দেখে হয়ত নিজস্ব প্রতিবেদক সোহেল রানার পরিবেশিত ভূল ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত সংবাদ প্রকাশ করেছে। দাপ্তরিক কাগজপত্রের ভাষ্য ও অভিযোগ বিশ্লেষণ করে তাকে সঠিক তথ্য জানিয়েছি। তারপরও তিনি সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। রহস্যজনকভাবে ভূল ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করে তিনি রীতিমতো প্রধান শিক্ষকের অপতৎপরতায় যুক্ত রয়েছেন বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে। আমরা সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের দায়িত্ব জ্ঞান নিয়ে হতবাক হয়েছি। এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
প্রকৃত ঘটনা এই, জাফরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন কবিরের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২১/১১/২০২৪ তারিখে প্রায় ৭০০/৮০০ সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করি। তখন বিদ্যালয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়ে ১৫ দিনের ছুটি মঞ্জুর করেন। এরপর প্রধান শিক্ষকের ভাড়াটে লোকজন ও দালালরা সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীকে নানাভাবে ম্যানেজ ও হুমকি-দামকি দেন। এরপর গত ২৪/১১/২০২৪ তারিখে প্রায় ৭০০/৮০০ সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের স্থায়ী বরখাস্তের জন্য মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। ওই দিনই প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আংশিক খাতগুলো উল্লেখ করে ৭০০/৮০০ সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর পক্ষে নেতৃত্বদানকারী ২০ শিক্ষার্থী স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কাজে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে এজন্য  আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষকের ছুটি মঞ্জুর করেন।
কিন্তু প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও ভাড়াটে লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। তখন আমারা তাকে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখি। পরে প্রশাসন ও পুলিশের হস্তক্ষেপে বিদ্যালয়ে না আসার মুচলেকা দিয়ে মুক্ত হন প্রধান শিক্ষক। এসব ঘটনা নিয়ে আমরা বিভিন্ন দফতরে সম্পূরক আর কয়েকটি অভিযোগ দাখিল করেছি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও তার দোসরা এলাকায় নানামুখি তৎপরতা ও বিভিন্নজনকে ম্যানেজ হুমকি-দামকি অব্যাহত রেখে ভুল বুঝিয়ে কয়েকদিন আগে দায়েরকৃত অভিযোগনামা থেকে স্বাক্ষরিত ১০ শিক্ষার্থীর নাম ও অভিযোগ প্রত্যাহার করায়। কিন্তু এরা ছিল ৭০০/৮০০ সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী পক্ষে অভিযোগকারী। তারমানে এই নয় যে, ৭০০/৮০০ সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী দায়েরকৃত অভিযোগপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এরপর গত ১৮/১২/২০২৪ তারিখে নাম প্রত্যাহারকারী ৪ শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫ শতাধিক সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী স্বাক্ষরিত তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার জন্য ও তদন্ত ব্যাহত করতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে স্বশরীরে নাম প্রত্যাহারকারী ৪ শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩০ জন হাজির হয়ে গণপিটিশন জমা দিয়েছে। নাম প্রত্যাহারকারী আরও দুইজন শিক্ষার্থীও বাইরে থাকায় গণপিটিশনে স্বাক্ষর দিতে পারেনি। তবে, প্রয়োজন হলে তারা স্বাক্ষর ও লিখিত বক্তব্য দিতে সম্মত রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, বিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণমান ফিরিয়ে আনতে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ প্রধান শিক্ষকের স্থায়ী বরখাস্তের দাবির বিষয়ে অনড় ও সোচ্চার রয়েছে। প্রয়োজনে তারা বৃহত্তর ও কঠোর কর্মসূচি পালন করবে। প্রধান শিক্ষকের পক্ষে দালালদের চিহ্নিত করে ইতিমধ্যেই অভিযোগ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও অভিযোগ করা হবে। কিন্তু, বিডি ম্যাসেঞ্জারে প্রকাশিত সংবাদে শিক্ষার্থী সাদিয়ার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। সাদিয়া হলো প্রধান শিক্ষকের দোসর তেওতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক তারা শেখের মেয়ে। আর বিপাশা নামে কোন শিক্ষার্থী অভিযোগনামায় নেই। যার নাম ওই সংবাদে প্রকাশ করা হয়েছে।
সংবাদে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। অথচ তদন্তই শেষ হয়নি। প্রধান শিক্ষক দোষী নাকি নির্দোষ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায় নাই। ১৫/১২/২০২৪ তারিখের অভিযোগপত্র থেকে নাম ও অভিযোগ প্রত্যাহার করার আবেদনপত্রের কোথাও ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহারের’ কথাটি উল্লেখ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক সোহেল রানা আবেদনপত্রটি পড়ে দেখেনি। তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে সংবাদ পরিবেশন করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও সংবাদে যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, সেটি জাফরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের নয়। এটাকে আমরা অপসাংবাদিকতা বিবেচনা করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রয়োজনে আমরা আইনের দারস্থ হতে সম্মত রয়েছি।
মুলত প্রধান শিক্ষক তার দালালদের লেলিয়ে দিয়ে তদন্ত কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে। কারণ সুষ্ঠু তদন্ত হলে তার সকল দুর্নীতি ও অর্থ লুটপাট বেরিয়ে আসবে। তাই তিনি তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে চান না।

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ