আজ ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ ইং

সাভার হেমায়েতপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ গ্রেপ্তার

 

রাউফুর রহমান পরাগ : সাভারের হেমায়েতপুরে চাঁদার দাবিতে ব্যবসায়ী রমজান আলীকে (৪৪) তুলে নিয়ে মারধর ও গুলির ঘটনায় সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন মোশাকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে এখনও উদ্ধার করা যায়নি গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্রটি। এছাড়া মোশা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা ধরাছোয়ার বাহিরে থাকায় প্রতিনিয়ত হামলা, মারধর ও চাঁদা দাবির আতঙ্কে পরিনত হয়েছে উপজেলার তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন ও হেমায়েতপুর এলাকা। রবিবার সকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ জালাল উদ্দিন।

গ্রেপ্তারকৃত মোশারফ হোসেন মোশা সাভারের তেঁতুলঝড়া ইউনিয়নের হেমায়েতপুর এলাকার মৃত শাহজাহান বেপারীর ছেলে। সে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় গত ১০ বছরে তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম সমর এবং সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাজীব বাহিনীর হয়ে চাঁদাবাজি করলেও সরকার পতনের পর ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতা এক ভাইয়ের ছত্রছায়ায় এখনও এলাকায় ব্যবসা দখল, ফুটপাত দখলসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রক। তার বাহিনীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও থানা পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মোশারফ বাহিনীর সদস্যরা।

ডিবি পুলিশ জানায়, গত ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফার্স্টের রাতে সাভারের হেমায়েতপুরের পূর্বহাটি ভাংগা ব্রিজ এলাকার ব্যবসায়ী রমজান আলীকে নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন গ্রীণ সিটি হাউজিংয়ের ভিতরে বৈদ্যুতিক খাম্বার সঙ্গে বেঁধে মারধর করে ও মোশা হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে ব্যবসায়ীকে ডান পায়ে গুলি করে সাথে কাছে থাকা এক লক্ষ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এই ঘটনায় ৩ জনের নাম উল্লেখ করে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন মুসাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি অবৈধ অস্ত্রটি। এছাড়াও মুসার বিরুদ্ধে হেমায়েতপুর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসীসহ নানা কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান ডিবি পুলিশ।

এর আগে গত ৭ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে সাভারের অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা হেমায়েতপুর এলাকার ফুটপাথ, ভ্রাম্যমাণ মার্কেট, কুলিবিট, বাসস্ট্যান্ড, বাজার-ঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ কমিটি, গার্মেন্টস ঝুট, হাউজিং ব্যবসাগুলো দখলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন মুশার বিরুদ্ধে। এই মোশারফ হোসেন মুশা ও তার পাঁচ ভাই মিলে পুরো এলাকায় তান্ডব চালিয়ে সকল ধরনের ব্যবসা দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরবর্তীতে গত ৩০ অক্টোবর (বুধবার) রাত ৯টার দিকে আওয়ামী লীগের দোসর মোশাররফ হোসেন মুসার ভাই শরিফ ও রাসেলের নেতৃত্বে প্রায় ৩০-৪০ জন সন্ত্রাসী চাইনিজ কুড়ালসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে উপজেলার তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের ঝাউচর এলাকায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে চারজনকে কুপিয়ে এবং অন্তত দশজনকে পিটিয়ে আহত করে।

ভুক্তভোগী তেঁতুলঝোরা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, আমার সঙ্গে কিছু দিন ধরে ব্যবসা নিয়ে তাদের বিরোধ চলছে। একপর্যায়ে আমি বাজারে গেলে মোশাররফ বাহিনীর প্রধান শরিফ ও রাসেলসহ অন্তত ৩০-৪০ জন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে আমার ওপর হামলা করে। আমাকে বাঁচাতে এসে তাদের ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর আহত হয় আমার ভাই ও ভাতিজা। আমরা এই মুসা বাহিনীর হাত থেকে মুক্তি চাই।
ঢাকা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ইনচার্জ জালাল উদ্দিন বলেন, থার্টিফাস্টের রাতে ব্যবসায়ীকে চাঁদার দাবিতে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলির ঘটনায় সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন মোশাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঘটনায় ব্যবহৃত অবৈধ আগ্নেঅস্ত্রটি উদ্ধারসহ বাকীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় এক্সিম ব্যাংক থেকে এনআরবি ব্যাংক পর্যন্ত সিংগাইর সড়কে রয়েছে কয়েকশ ভ্রাম্যমাণ দোকান। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন ৩শ থেকে ৫শ টাকা করে চাঁদা তোলা হচ্ছে। হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পাশে জয়নাবাড়ি সড়কে ও হেমায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের জমিতে নির্মিত মার্কেটে শতাধিক দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন ২শ থেকে ১ হাজার টাকা তোলে মোশারফের সহযোগীরা।
সম্প্রতি হেমায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে সভাপতি বনে যান মোশারফের ভাই শরিফ হোসেন। এই সুযোগে স্কুলের উন্নয়নের কথা বলে স্কুলের জমিতে থাকা প্রতিটি দোকান থেকে এককালীন তিন লাখ টাকা করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে শরিফের বিরুদ্ধে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে মারধরসহ সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে দোকান ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

হেমায়েতপুর এলাকার ইন্টারনেট ও ডিশলাইনের বেশিরভাগ সংযোগ এখন মোশারফ ও মেহেদীসহ তার ভাইদের দখলে। পোশাক শিল্পের অস্থিরতার মধ্যেই সম্প্রতি মোশারফের ভাই শরিফের নেতৃত্বে দলবল নিয়ে আমিনবাজার এলাকার টিমটেক্স গার্মেন্টসের ঝুট দখল করে। এছাড়াও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের এজেআই গ্রুপ, ডেকো গ্রুপসহ বিভিন্ন কারখানার ঝুট ব্যবসা দখল করে নিয়েছে শরিফ। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় বন্ধ থাকা হলমার্ক গ্রুপের দায়িত্বরত লোকজনকে হলমার্ক ছাড়তে নানাভাবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে মোশারফ-মেহেদীর বিরুদ্ধে। তাদের চাঁদাবাজিতে বাঁধা দেওয়ায় মারধরের শিকার হয়েছেন আরিফ, মেহেদী, আশরাফুল ইসলামসহ অনেকে। মুসা বাহিনীর বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ