আজ ২৭শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ইং

পাকিস্তান আফগানিস্তানের সম্পর্ক বৈরিতার মাঝে দেশ মাতাচ্ছে মালালা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা এখন পাকিস্তানে। বিভিন্ন সেমিনারে দিয়ে যাচ্ছেন বক্তব্য। বক্তব্যের বিষয়বস্তুও আবার নারী জাগরণের। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন আসে পাকিস্তানে এটা কি করে সম্ভব, যেখানে নারীদের নানা বাধ্যবাদকতার মধ্যে রাখার ব্যপারে দুই দেশে এক নীতি। তবে কি আফগানিস্তানের তালেবানদের নারী বিদ্বেষী মানষিকতা কে সামনে আনতেই মালালাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

গত কয়দিনে মালালার হৃদয় বিদারক বক্তব্যে মন কেরেছে সবার। গত রোববার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে মুসলিম দেশগুলোর মেয়েদের শিক্ষাবিষয়ক এক সম্মেলনে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের শাসনকে বৈধতা না দিতে মুসলিম নেতাদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই।

তিনি বলেন, তালেবান নারীদের মানুষ মনে করে না। তারা ‘লিঙ্গ বর্ণবাদী’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক যুক্তিতে তারা এই অপরাধকে আড়াল করে রেখেছে।

আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এই লিঙ্গ বর্ণবাদী শাসন ব্যবস্থাকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করানোর চেষ্টায় সমর্থন দেওয়া এবং নারীদের শিক্ষা ও অধিকারে আফগানিস্তানের তালেবানের বাধার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য মুসলিম নেতাদের আহ্বান জানান মালালা।

পাকিস্তানের দ্য ডন পত্রিকা জানায়, ওয়ার্ল্ড মুসলিম লিগের আয়োজনে দুই দিনের এই নারীশিক্ষা সম্মেলনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েক ডজন দেশের মন্ত্রী ও শিক্ষা কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছেন।

মালালা বলেন, “আফগানিস্তানে মেয়েদের পুরো একটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কেড়ে নেওয়া হবে। মুসলিম নেতা হিসাবে আজ আপনাদের আওয়াজ তোলার সময় এসেছে, নিজের ক্ষমতাকে কাজে লাগান।”

আফগান সরকারের নীতির কোনওকিছুই ইসলামিক নয় এবং তারা আমাদের এই ধর্মবিশ্বাসের সবকিছুরই বিরুদ্ধে। তারা যা করছে তা মানবাধিকরের লঙ্ঘন। কোনও ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকেই তাদের যুক্তি এখানে ধোপে টেকে না। সুতরাং তাদেরকে বৈধতা দেবেন না,” বলেন মালালা।

ইসলামাবাদের এই সম্মেলনে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা উপস্থিত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী খালিদ মকবুল সিদ্ধিকী।

সম্মেলনে মালালা যা যা বলেছেন সে সম্পর্কে আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্রও তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করেননি।

২০২১ সালে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর তালেবান সরকার কঠোর শরিয়া আইন চালু করেছে। জাতিসংঘ এতে লিঙ্গবৈষম্য বা লিঙ্গ বর্ণবাদ আখ্যা দিয়েছে।

তালেবান আফগান সংস্কৃতি এবং ইসলামিক আইন অনুসারে নারীদের অধিকারকে সম্মান করার কথা বলে আসলেও বাস্তবে দেশটিতে নারীরা কড়া বিধিনিষেধের মুখে আছে। নারীদের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ বন্ধ হয়েছে, অনেক সরকারি চাকরি থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে।

মালালা ইউসুফজাই ২০১২ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে নারী শিক্ষা নিয়ে প্রচার চালানোর সময় পাকিস্তানি তালেবানের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণে বেঁচে যান।

পরবর্তীতে, তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। এরপর থেকেই তিনি বিশ্বজুড়ে নারী শিক্ষার অধিকারের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছেন।

ইসলামাবাদের সম্মেলনে মালালা মুসলিম ধর্মীয় নেতাদেরকে প্রকাশ্যে তালেবানের নিপীড়নমূলক আইনের নিন্দা করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে লিঙ্গ বর্ণবাদকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসাবে স্থান দেওয়ার চেষ্টায় সমর্থন দিতে রাজনৈতিক নেতাদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন।

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ