
সহিদুল ইসলাম লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের পাচ উপজেলায় মাঠের বিনোদন এখন ছোট যন্ত্রে বন্দি। যত্ন করে নিজের হাতে বানানো ঘুড়ি আকাশে ওড়ানোর মজা এখন শুধুই কল্পনা নীল-সাদা স্ক্রিনের রঙ্গিন দুনিয়ার মোহ মানুষকে দিন দিন করে তুলেছে অন্তর্মুখী। বন্ধুদের সাথে আড্ডা কিংবা খেলাধুলোর সময়ের জায়গায় এখন হাতে উঠেছে স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ।
আগে বাজার থেকে কেনা লাটিম যখন ভোঁ ভোঁ শব্দে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জানান দেয় তার সুখ যারা ঘুরিয়েছে তারাই জানে। শুধু কি লাটিম ঘুরানো? একটা লাটিম কতভাবে ঘোরানো যায় তার প্রদর্শনী দেখাটাও চোখের প্রশান্তি এনে দিতো। সভ্যতার ক্রমবিকাশ আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় এ হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কিছু খেলাধুলা।
তাই তো শৈশবে যে সব খেলাধুলা খেলেছিলেন আজকের বৃদ্ধরা সে সব খেলাধুলো না দেখতে পেয়ে তারাও এখন ভুলে গেছেন বহু খেলর নাম। এক সময় গ্রামের শিশু ও যুবকরা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় অভ্যস্ত ছিল।
তারা অবসরে গ্রামের খোলা মাঠে দলবেঁধে খেলত এসব খেলা। আর খেলাধুলার মাধ্যমে শৈশবে দুরন্তপনায় জড়িয়ে থাকতো ছেলেমেয়েরা। কিন্তু মাঠ-বিল-ঝিল হারিয়ে যাওয়া, আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে মহাকালের ইতিহাস থেকে মুছে যেতে বসেছে এসব খেলাধুলো।
বর্তমানে গ্রামীণ খেলা বিলুপ্ত হতে হতে আজ তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন। খোদ সবচেয়ে বেশি প্রচলিত কবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, খো খো, ডাং গুলি, কানামাছি প্রভৃতি গ্রামীণ খেলার আর তেমন প্রচলন নেই।
বিগত ক’বছর আগেও দেখা যেত গ্রামের কিশোরীরা উঠোন দখল করে খেলছে সাত চারা, গুটি, কানা মাছি প্রভৃতি খেলাধুলা। খেলাধুলোতে কোনো কালেও পিছিয়ে থাকেনি গ্রাম বাংলার ছেলেরা । তাদের খেলতে দেখা যেত হা ডু ডু, ডাং গুলি, ক্রিকেট, মারবেল ইত্যাদি।
লুডু, ষোল গুটি, তিন গুটির মতো বুদ্ধির খেলাগুলো ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল বয়স্কদের হাত ধরে। অবসর সময়ে কিংবা শীতকালে রোদে বসে এসব খেলা খেলতেন তারা। জমতোও ভালো। বর্ষাকালে খোলা মাঠে কিংবা ব্যস্তহীন রাস্তায় দেখা মিলত কিশোরদের।
কাদা মাটিতে হা ডু ডু কিংবা হাওয়াহীন ফুটবল খেলা জমতো সবচেয়ে বেশি। তবে খেলার চেয়ে কাদা মাখামাখি হতো উৎসাহজনক ভাবে। ঘরে ফিরে মায়েদের বকাবকিও জুটত সৌভাগ্যক্রমে।
মার্বেল আর ডাং গুলি খেলা হতো শরৎ, শীত ও গ্রীষ্ম কালে। তবে ডিজিটাল যুগে এসে হারিয়ে যাতে বসেছে গ্রাম্য এইসব খেলাগুলো। গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী মানুষ ক্রমশ ভুলে গেছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলোগুলো। সেই সব খেলার পরিবর্তে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে স্থান নিয়েছে অনলাইন গেম, ফেসবুকের মতো বিনোদন।
এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়ত অচিরেই গ্রামীণ খেলাধুলা আমাদের সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাবে। পরিণত হবে রূপকথার গল্পে। মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে প্রজন্মকে রক্ষা ও গ্রামীণ খেলাকে বাঁচাতে সচেতন ব্যক্তিদের এগিয়ে এসে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। এর সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ বৃদ্ধির মাধ্যমেই কেবল অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।