মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের শিবালয়ে অটোরিক্সা ছিনতাই চক্রের দুই সদস্য ও ছিনতাই করা মালামাল ক্রেতা চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতই (৩০ ডিসেম্বর) মামলার বাদী শিবালয় উপজেলার গোয়ালখালী গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে অটোচালক আব্দুল করিম (৪০) রাত ১১টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
এ সময় দুইজন লোক যাত্রীবেশে উথলী যাওয়ার উদ্দেশ্যে আপডাউন হিসেবে অটোরিক্সা ১৬০ টাকায় ভাড়া করেন। আব্দুল করিম পাটুরিয়া ঘাট হতে যাত্রীদের নিয়ে উথলী যান। উথলী যাওয়ার পর একজন যাত্রী অটো থেকে নেমে কিছুক্ষণ পর পুনরায় অটোতে উঠে চালককে পুনরায় পাটুরিয়া যেতে বলেন। আব্দুল করিম ২ জন যাত্রী নিয়ে পাটুরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তখন রাত আনুমানিক ১১টা ৪০মিনিট। উপজেলার কাশদহ ব্রীজের দক্ষিণ পাশের পাকা রাস্তায় পৌঁছামাত্র যাত্রীদের একজন বলে উঠেন হাত থেকে মোবাইল নিচে পড়ে গেছে। অটো থামাও, বাদী সরল বিশ্বাসে ওই স্থানে অটোরিক্সা থামালে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই যাত্রীদের একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে চালকের ঘাড়ের একাধিক জায়গায় কোপায়। তখন চালক নিচে পড়ে গেলে অপর যাত্রী ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গলায় কোপ মেরে গুরুতর জখম করেন। বাদী মুমূর্ষ অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকলে যাত্রীরা তাকে মৃত ভেবে তার অটোরিক্সা নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর দুইজন অজ্ঞাত পথচারী অটোচালককে গুরুতর জখম অবস্থায় দেখে শিবালয় থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান। সংবাদের ভিত্তিতে শিবালয় থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাদীকে উথলী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান এবং তার পরিবারকে বিষয়টি জানান। উথলী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাদীকে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। আব্দুল করিমের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। বাদী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হতে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক অসীম মণ্ডল জানান, বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ১. ঝালকাঠির মো. প্রিন্স জমাদ্দার ওরফে সজিব (২০), পিতা মো. শহিদ জমাদ্দার, ২. পাবনার মেহেদী হাসান মৃদুল (১৯), পিতা- আব্দুর রহমান প্রামানিক, ৩. মানিকগঞ্জের মো. কাউছার মিয়া (২৩), পিতা মো. ঠান্ডু মিয়া।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ও বিশ্বস্থ সোর্সের মাধ্যমে বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ১ ও ২ নম্বর আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন। এই দুই আসামীর প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জয়রা এলাকার ‘এমকে ব্যাটারী’ দোকান হতে ৩ নম্বর আসামী কাউসার মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামীদের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ সদর থানাধীন উরিয়াযান এলাকার মো. হাসেম মিয়ার বাড়ির সামনে হতে পরিত্যক্ত অবস্থায় বাদীর ছিনতাই করা অটোরিক্সা এবং ৩নম্বর আসামীর হেফাজতে থাকা ৪টি অটোরিক্সার ব্যাটারী জব্দ করা হয়। মামলার তদন্ত সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আসামীদেরকে জেল হাজতে আটক রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এআরএম আল মামুন জানান, ঘটনার পর থেকে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোছা.ইয়াছমিন খাতুনের নির্দেশনায় চক্রটি ধরার জন্য দিনরাত কাজ করেছেন। উন্নত তথ্য প্রযুক্তি ও সোর্সের মাধ্যমে চক্রটি গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। এদের দুইজন ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। অপরজন ছিনতাই করা মালামালের ক্রেতা। ১ ও ২ নম্বর আসামীকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছিল। আসামীরা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাদের অপরাধ স্বীকার করেছেন। চক্রটি গ্রেপ্তারের ফলে শিবালয়ে আর এই জাতীয় ছিনতাই হবে না বলে মনে করেন তিনি।