আলোকিত কন্ঠ ডেস্কঃ ভারতে বলিউডের একটি বাণিজ্যিক সিনেমাকে ঘিরে বিশ্বের অন্তত দুই প্রান্তে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে – তাও আবার আলাদা আলাদা কারণে – এমন ঘটনা শেষ কবে ঘটেছে বলা মুশকিল। বিজেপি এমপি তথা বলিউড তারকা কঙ্গনা রানাওয়াতের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ইমার্জেন্সি’ কিন্তু আপাতত সেই বিরল ‘কৃতিত্বে’রই দাবিদার!
‘ইমার্জেন্সি’ হল আসলে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর একটি আংশিক বায়োপিক, যা তৈরি হয়েছে ১৯৭৫ সালে দেশে তার জারি করা জরুরি অবস্থা বা ইমার্জেন্সির পটভূমিতে।
ছবিটির কাহিনিকার, পরিচালক ও অন্যতম প্রযোজক কঙ্গনা রানাওয়াত নিজেই। ছবিতে ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকায় অভিনয়ও করেছেন তিনি।
তবে ইমার্জেন্সি ছাড়াও এই ‘পলিটিক্যাল ড্রামা’তে ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের আরও বহু ঘটনাই চিত্রায়িত হয়েছে, যার মধ্যে তার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ে ঘটা ১৯৭১-র যুদ্ধ কিংবা ১৯৮৪-তে স্বর্ণমন্দিরে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন ব্লু স্টারে’র প্রসঙ্গও এসেছে
‘ইমার্জেন্সি’ ছবিতে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কলকাতার অভিনেতা ঋষি কৌশিক।
সিনেমার একটি অংশে নদীর ধারে বিরাট জনতার সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে তাকে বলতে শোনা যায়, “ভারতমাতা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছেন।”
“আজ আমরা শপথ নিচ্ছি, যতদিন এখানে ব্রহ্মপুত্রের পানি বইবে, যতদিন আমরা বাংলা বলব, ততদিন আমরা ভারতমাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করে যাব।”
তার পরেই সিনেমায় তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, “এত জোরে আপনারা ইন্দিরা গান্ধীর নামে জয়ধ্বনি দিন, যাতে তার রেশ দিল্লি পর্যন্ত শোনা যায়!”
“জয় মা ইন্দিরা, জয় বাংলা” স্লোগানে এরপর মুখরিত হয়ে ওঠে ব্রহ্মপুত্রর তীর।
একাত্তরে যে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের সৃষ্টি – ভারত তাতে কতটা কৃতিত্ব দাবি করতে পারে, অথবা একাত্তরকে একটি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা কতটা সঙ্গত – সেটি বাংলাদেশে যথারীতি একটি স্পর্শকাতর বিতর্কের ইস্যু।
সেই জায়গায় যদি একটি ভারতীয় সিনেমায় শেখ মুজিবকেও বলতে শোনা যায় ‘ভারতমাতা আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছেন’ – তাহলে বাংলাদেশে তার সামাজিক বা রাজনৈতিক অভিঘাত সুতীব্র হতে বাধ্য।
ইমার্জেন্সিতে শেখ মুজিবের সেই বক্তব্যের ক্লিপ বাংলাদেশে ভাইরাল হতেই সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিক্রিয়াতেও সেটা স্পষ্ট।
সোয়েব মাহমুদ নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করে যেমন লিখেছেন, “প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রোপাগাণ্ডার সিনেমা – ইমার্জেন্সি-তে শেখ মুজিব। পলাতক লীগের ইতিহাসবিদদের মন্তব্য আশা করছি।”
একই ভিডিও পোস্ট করে এম এইচ রনির মন্তব্য, “কঙ্গনা তার ইমার্জেন্সি মুভিতে শেখ মুজিবকে এত অপদস্থ করলো কিন্তু এটা নিয়ে জাতির আব্বার একনিষ্ঠ সন্তানদের প্রতিবাদ করতে দেখলাম না।”
ছবিটিতে ১৯৭৫র ১৫ই অগাস্ট (ভারতে তখন জরুরি অবস্থা চলছে) শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের যে রেফারেন্স এসেছে, সেই প্রসঙ্গে সাইফুল ইসলাম নামে আরেকজন লিখেছেন, “ইমার্জেন্সি মুভিতে শেখ মুজিবকে যেভাবে উপস্থাপন করেছে এইটা শেখ মুজিবের সাথে বিগেস্ট মকারি (প্রহসন)। শেখ মুজিবের হত্যাকারী পর্যন্ত কোনও দিন বলে নাই যে পলাইতে গিয়া গুলি খাইছে।”
“অথচ লীগের বন্ধু বিজেপির কর্মী কঙ্গনা রানাওয়াত দিদির ইমার্জেন্সি মুভিতে দেখাইছে কাপুরুষের মত মুজিব দৌড়াতে গিয়ে গুলি খাইছে!”
সূত্র: বিবিসি