আজ ২৭শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ইং

শেরপুরে প্রয়াত প্রতিমাশিল্পী দিলীপ কুমার পালের পেশায় তার দুই মেয়ে

 

শেরপুর প্রতিনিধি: সরস্বতীপূজাকে সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছে শতাধিক প্রতিমা। দুই বোন যূথীমণি পাল ও দিশা রানী পাল এসব প্রতিমার কোনোটিতে রং দিচ্ছেন, কোনোটিতে কাপড় পরাচ্ছেন। আবার কোনোটিতে অলংকার পরাচ্ছেন। প্রতিটি প্রতিমাকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলার জন্য দুই বোন গভীর মনোযোগের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।

যূথী ও দিশা শেরপুর জেলার স্বনামধন্য প্রতিমাশিল্পী সদ্য প্রয়াত দিলীপ কুমার পালের মেয়ে। সদরের ভাতশালা ইউনিয়নের বয়ড়া পালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ পাল দেড় মাস আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ৫৩ বছর বয়সে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে পরিবার অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে তাঁর মেয়েরা পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার গড়া প্রতিষ্ঠান ‘দ্য নিউ সোনালী শিল্পালয়’–এর কাজে যোগ দিয়েছেন।

দিলীপ পালের তিন মেয়ে। সবার বড় দিশা পাল শেরপুর সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগে স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। মেজ মেয়ে যূথী পাল শেরপুর মডেল গার্লস ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। ছোট মেয়ে প্রিয়াঙ্কা পাল স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। দিলীপ পালের বিধবা স্ত্রী রেখা রানী পাল গৃহিণী। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। ফলে দুই মেয়ে দিশা ও যূথীর ওপরেই সংসার চালানোর দায়িত্ব এসে পড়েছে। এই দুই বোন মিলে দুই সপ্তাহ যাবৎ শেরপুর শহরের গোপালবাড়ী মন্দির প্রাঙ্গণে সরস্বতীপ্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। তাঁদের সহযোগিতা করছেন তাঁদের স্বজন আদিত্য কুমার পাল।

সদ্য প্রয়াত প্রতিমাশিল্পী দিলীপ কুমার পালের বড় মেয়ে দিশা রানী পাল প্রতিমাকে দৃষ্টিনন্দন করার কাজ করছেন।

দিশা পাল বলেন, সরস্বতীপূজা উপলক্ষে তাঁরা ছোট-বড় শতাধিক প্রতিমা তৈরি করছেন। আগামী সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সরস্বতীপূজা। রোববারের মধ্যেই সব প্রতিমা ভক্ত ও আয়োজকদের হাতে তুলে দিতে হবে। তাই তাঁরা দুই বোন মিলে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। বর্তমানে প্রতিমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই তুলনায় প্রতিমার দাম বাড়েনি। তা ছাড়া অন্য প্রতিমাশিল্পীদের সঙ্গেও প্রতিযোগিতা করতে হয়। তাই সীমিত লাভে তাঁদের প্রতিমা বিক্রি করতে হচ্ছে।

দিশা বলেন, ‘বাবার উপার্জনের একমাত্র পথ ছিল প্রতিমা তৈরির কাজ। এই কাজের মাধ্যমে বাবা যে আয় করতেন, তা দিয়েই আমাদের সংসার চালাতেন। তাই কষ্ট হলেও পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার এই শিল্পকর্মকে ধরে রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর এ ক্ষেত্রে আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’

যূথী বলে, ‘আমি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই বাবার সঙ্গে প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছি। বাবার অকালমৃত্যুতে আমরা পারিবারিকভাবে অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছি। আমরা তিন বোন; ভাই নেই। তাই সংসার চালাতে বাবার প্রতিমা তৈরির কাজটিকে ধরে রাখতে এখন দুই বোন মিলে সরস্বতীপ্রতিমা তৈরির কাজ করছি।’

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ শেরপুর সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ কুমার নন্দী বলেন, ‘স্বনামধন্য প্রতিমাশিল্পী দিলীপ কুমার পাল বিভিন্ন সময়ে গোপালবাড়ী মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ করতেন। দিলীপ পাল এখন বেঁচে নেই। কিন্তু এই ঐতিহ্য তাঁর দুই মেয়ে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। দুই মেয়ের এই শিল্পকর্মে আমরাও খুবই সন্তুষ্ট ও আনন্দিত। আমরাও চাই, তাঁরা যেন এটি ধরে রাখেন। আর এ ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।’

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ