
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার জাফরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন কবির ও বাড়াদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ রফিকুল ইসলাম অ্যাডিশন ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর, সুবিধাভোগী ও রাজনীতিতে সক্রিয়। ৫ আগস্টের পর পাল্টি দিয়ে শাহ রফিকুল ইসলাম অ্যাডিশন উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন কবির সাধারণ সম্পাদকের পদ ভাগিয়ে নেন। আপত্তি মুখে সেই কমিটিও বির্তকিত রয়েছে। তারপরও চলমান রাজনৈতিক প্রভাবে সুবিধা নিতে তৎপর ছিলেন তারা। নিজেদের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ ও ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। অবশেষে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর মো. সাইফুল ইসলাম ১৫-২০ই মার্চের মধ্যে এই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। দু’টি বিদ্যালয়ের সাবেক বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী ওই দুই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর, সুবিধাভোগী ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার আলাদাভাবে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই তদন্ত করা হবে।
সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের স্থায়ী অপসারণ চেয়েছেন তারা। পক্ষপাতিত্বমূলক তদন্ত প্রতিবেদন কিংবা তদবিরে প্রধান শিক্ষকদের দায়মুক্তির কোন চেষ্টা করা হলে বিক্ষোভ সমাবেশসহ বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ভূক্তভোগি ও এলাকাবাসী জানায়, ‘ জাফরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন কবির আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তার করে স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গত বছরের নভেম্বর মাসে তাঁর এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, সমাবেশ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আলাদাভাবে লিখিত অভিযোগ করা হয়। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. বেলাল হোসেন প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বহিস্কারের ঘোষণা দিয়ে ছুটিতে পাঠান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ১০ কার্য দিবসে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। সেই তদন্ত কমিটি দুই কার্য দিবস বিদ্যালয়ে এসে তদন্তকালে প্রধান শিক্ষকের পক্ষে সাফাই ও পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ ও কথাবার্তা বলে। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের প্রস্তুতি নিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পূরক অভিযোগ দিতে বলেন। এই অভিযোগ দিলেও পরে আর তদন্ত করা হয়নি এবং আগের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা কিংবা প্রকাশ করা হয়নি। জনশ্রুতি রয়েছে, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল খায়ের প্রধান শিক্ষককে রক্ষায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটিতে নানাভাবে তদবির করেছেন। এমনকি প্রধান শিক্ষক ছাড়া বিদ্যালয়ে ভালোভাবে পাঠদান করা যাচ্ছে না বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানাতে সহকারী শিক্ষকদের চাপ প্রয়োগ করেছেন। এলাকায় এসব খবর ছড়িয়ে পড়ায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ভূক্তভোগি ও এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন না দিলে তদন্ত কমিটির প্রতি অনাস্থা, বিক্ষোভ, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ আইনি প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তত রয়েছে। আর এদিকে, প্রধান শিক্ষকের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে। তারমধ্যে থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরিক্ষা অধিদপ্তর তদন্ত শুরু করবে।
অপরদিকে, বাড়াদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ মো. রফিকুল ইসলাম অ্যাডিশনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আতœসাতের অভিযোগ তদন্তের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়। শিক্ষার্থী-অভিভাবক, এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগিদের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. বেলাল হোসেন অভিযোগপত্রটি পাঠান। ওই সময় তিনি জানিয়েছিলেন,‘প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে স্থায়ী বরখাস্তের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগিরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি নেই। তাই বিষয়টি তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অনুলিপিও পাঠানো হয়েছে।’ কিন্তু অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বিষয়টি ম্যানেজ ও ধামাচাপা দিতে নানাভাবে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারীরা।
তারা জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রধান শিক্ষকের এসব নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর থেকেই নানাভাবে হুমকি-দামকি দেয়া হচ্ছে। অভিযোগকারীদের কাছে গিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য লোকজন দিয়ে ম্যানেজের চেষ্টা চালিয়েছেন ওই প্রধান শিক্ষক। অভিযোগকারীরা অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে মিথ্যা অভিযোগ মামলা ও হামলার ভয়ভীতি দেখান। নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে অভিযোগ তদন্ত বন্ধের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু, তার বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরিক্ষা অধিদপ্তর তদন্ত শুরু করছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষক শাহ রফিকুল ইসলাম অ্যাডিশনের স্থায়ী বরখাস্তর দাবি জানান তারা।