রাউফুর রহমান পরাগঃ রাফিনের বয়স মাত্র ১০ বছর। সে ঢাকার অদূরে একটি সাধারণ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। দেখতে আর পাঁচটা শিশুর মতো হলেও তার বেড়ে ওঠার পথটা একটু আলাদা। জন্মের পরই চিকিৎসকরা জানান, রাফিন ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত। এই খবর শোনার পর তার বাবা-মা কিছুটা ভেঙে পড়েছিলেন, কিন্তু তারা ঠিক করেছিলেন—ছেলেকে কখনোই পিছিয়ে পড়তে দেবেন না।
*ভিন্নতাকে জয় করার গল্প***
ছোটবেলায় রাফিন অন্য শিশুদের তুলনায় ধীরে হাঁটতে শেখে। তার হাত-পায়ের গঠন একটু ছোট, মুখের গড়ন কিছুটা চ্যাপ্টা, আর চোখের কোণে একটা টান রয়েছে। কথাও বলত দেরি করে। তবে একটা ব্যাপার ছিল, সবসময় সে হাসিমুখে থাকত!
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাষাগত সমস্যাগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সে কথা বলতে পারত, কিন্তু বাক্যগুলো ছিল ছোট ও সংক্ষিপ্ত। অপরিচিতদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে লজ্জা পেত। স্কুলে পড়াশোনার ক্ষেত্রেও কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল—বিশেষ করে বাংলা আর গণিতের বড় বড় বাক্য বা সংখ্যা বুঝতে তার কষ্ট হতো। তবু সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।
*পরিবারের অক্লান্ত পরিশ্রম...*
রাফিনের বাবা-মা বুঝতে পারলেন, ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত চর্চা দরকার। তারা প্রতিদিন গল্প বলতেন, ছোট ছোট প্রশ্ন করতেন, যাতে সে বেশি করে কথা বলতে শেখে। বাইরে নিয়ে যেতেন, যাতে অন্যদের সঙ্গে মিশতে শেখে।
তার স্কুলের শিক্ষকরাও তাকে বোঝানোর জন্য সহজ ভাষা ও ছবি ব্যবহার করতেন। বন্ধুরা তাকে খুব ভালোবাসত। কারণ, সে ছিল মিশুক আর হাসিখুশি।
*স্পিচ থেরাপির ম্যাজিক...*
এই সময় একজন স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টের শরনাপন্ন হন। থেরাপিস্ট তাকে শব্দ সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে সাহায্য করলেন, বড় বাক্যে কথা বলার অনুশীলন করালেন, এমনকি দোকানে গিয়ে কীভাবে জিনিস চাইতে হয়, সেটাও শিখিয়ে দিলেন। ধীরে ধীরে রাফিন অন্যদের সঙ্গে বেশি কথা বলতে শুরু করল।
সে এখন স্কুলের কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চায়, ক্লাসে হাত তুলে প্রশ্ন করতে চায়, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে চায়!
স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে…
রাফিনের গল্পটা শুধু একজন শিশুর লড়াই নয়, বরং সমাজের কাছে একটা বার্তা—ডাউন সিনড্রোম কোনো বাধা নয়, যদি ভালোবাসা, সহানুভূতি আর সঠিক সহায়তা দেওয়া যায়।
*স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি বিভাগ বিএইচপিআই,সিআরপির ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী
রিয়াদ মাহমুদ বলেন এই ধরনের ডাউন সিনড্রোম বাচ্চাদের কথা বা ভাষা বিকাশ জনিত সমস্যা থাকে,শব্দের উচ্চারণগত সমস্যার পাশাপাশি খাবার গলধকরন সমস্যা দেখা যায়। যদি এই ধরনের শিশুরা সঠিক স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি চিকিৎসা সেবা সময় মতো নিতে পারেন তাহলে সহজে সমাজের মূল শ্রোতধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
রিয়াদ মাহমুদ আরো বলেন, বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবসে আমরা চাই, যেন প্রতিটি রাফিন সমান সুযোগ পায়, যেন তারা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী বিকশিত হতে পারে। সমাজের দায়িত্ব শুধু সহানুভূতি দেখানো নয়, বরং তাদের এমন একটা পরিবেশ দেওয়া, যেখানে তারা স্বপ্ন দেখতে এবং ছুঁতে পারে!
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ ওমর ফারুক। প্রকাশক কর্তৃক বি,এস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবী সার্কুলার রোড , ঢাকা- ১২০৩ থেকে মুদ্রিত ও ২ আর কে মিশন রোড (৫ম তলা) থেকে প্রকাশিত।
© All rights reserved © 2017 Alokito Kantho