জাবি প্রতিনিধিঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের মানুষের ওপর ইসরায়েলের চলমান নিপীড়ন ও গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সংহতি সমাবেশ করেন।
আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। এরপর সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারের পাদদেশে এসে শেষ হয়।
তারা ফিলিস্তিনের পক্ষে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে নিয়ে মিছিল করেন এবং ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের "From the river to the sea, Palestine will be free"; "Free, free Palestine"; "One, two, three, four, Zionism no more"; "হামাসের যোদ্ধারা, লও সালাম লও সালাম"; "ইন্তিফাদা ইন্তিফাদা, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ"; "নেতানিয়াহুর দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে"; ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেয়।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, এই সংহতি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল থেকে আমরা একটি বার্তা দিতে চাই, যেভাবে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, যেভাবে দিন দিন দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েল কর্তৃক দখল করা হচ্ছে এভাবে যদি চলতে থাকে আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই পৃথিবীতে যে ফিলিস্তিন নামক একটি দেশ ছিল, গাজা নামক একটি উপত্যকা ছিল সেটা কিন্তু পৃথিবীর মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আমরা বর্বর ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনে যে হামলা চালাচ্ছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে বিশ্ব বিবেক ও আন্তর্জাতিক যে সংস্থাগুলো আছে আপনারা অতি দ্রুত গাজাবাসীর পাশে দাড়ান এবং গাজায় যে গণহত্যা চালানো হচ্ছে সেটি বন্ধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, ফিলিস্তিনের গাজার প্রত্যেকটি শিশুর ক্রন্দন আমাদেরকে কাদিয়ে যাচ্ছে, ফিলিস্তিনের প্রত্যেকটি হত্যাকান্ডে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরন হচ্ছে তাই ফিলিস্তিনের মুক্তির দাবিতে আমারা সকলে এখানে সমবেত হয়েছি। শুধু ফিলিস্তিন বিরোধী স্লোগান দিয়ে, জায়ানবাদ বিরোধী স্লোগান দিয়ে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের মুক্ত করা যাবে না। ইসরায়েল হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি শিশু রাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে একটি সাম্রাজ্যবাদ সেই সাম্রাজ্যবাদের একটি ফসল হচ্ছে এই ইসরায়েল। সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাড়াতে হবে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পতন না হলে ইসরায়েল পতন সম্ভব না। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম একটি দেশ যেই দেশে আমাদের প্রাণের স্পন্দন মক্কা এবং মদিনা সেই সৌদি আরবের কি জঘন্য ভূমিকা। ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিরুদ্ধে যে সৌদি আরব একটি বাক্য ব্যায় করেনি বরং যারা সহযোগিতা করছে। মক্কা এবং মদিনাকে সৌদি আরবের যে সার্বভৌমত্ব সেখান থেকে বের করে এনে মক্কা এবং মদিনাকে সার্বভৌম টেরেটোরি হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। আমি সৌদি আরবকে ঘৃণা করি,আমি যুক্তরাষ্ট্রকে ঘৃণা করি এবং যেসব মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের মুসলমানদের হত্যাকাণ্ড নীরবে সহ্য করছে তাদের ঘৃণা করি। ফিলিস্তিনের শিশুদের নির্মম হত্যা দেখে যেসব মানুষ নীরব থাকে আমি তাদেরকে ঘৃণা করি। ফিলিস্তিনের মুসলমানদের মুক্তির জন্য আমরা প্রয়োজনে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, " যারা মানবাধিকার নিয়ে চিৎকার করে, যুদ্ধ করে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, মুসলমান কিংবা ভিন্ন ধর্মের একজন মানুষের রক্ত যদি আপনাদের হৃদয় স্পর্শ করতে না পারে তাহলে আপনারা মানবাধিকার কর্মী নন। আপনাদের এই কাজটি হচ্ছে পৃথিবী শাসন করার একটি কৌশল। গাজায় যে গণহত্যা চলছে সেটা কোনো রাজনীতি কিংবা অর্থনীতিকে সমর্থন করে না। যারা গণতন্ত্রের নামে সারা বিশ্বে পুঁজিবাদ কায়েম করে শাসন করতে চায় তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই, গাজার এই রক্ত আপনাদের সকল প্রয়াসের বিরুদ্ধে যায়, আপনারা সবাই স্ববিরোধ মুক্ত হন, মানুষ হন তারপর পৃথিবী শাসন করেন।"
শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির মাধ্যমে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রতি সংহতি জানানো হয় এবং বিশ্ববাসীকে এই ইস্যুতে আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ ওমর ফারুক। প্রকাশক কর্তৃক বি,এস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবী সার্কুলার রোড , ঢাকা- ১২০৩ থেকে মুদ্রিত ও ২ আর কে মিশন রোড (৫ম তলা) থেকে প্রকাশিত।
© All rights reserved © 2017 Alokito Kantho