
রাউফুর রহমান পরাগঃ সাভার ও আশুলিয়ায় সড়ক-মহাসড়কের পাশ দিয়ে হাঁটতে গেলে চোখে পড়বে ছড়িয়ে-ছিটে পড়ে থাকা নানা রঙ্গের ভিজিটিং কার্ড। আবাসিক হোটেল কিংবা গেস্ট হাউজের নাম ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে এসব ভিজিটিং কার্ডে। এছাড়াও এ সকল রঙ্গিন কার্ডে রয়েছে হরেক রকম দাদা-ভাইদের নাম ও নাম্বার। দিন দিন যত্রতত্র পড়ে থাকা এই ভিজিটিং কার্ড নিয়ে রহস্যে বাড়ছে।
সড়কের পাশে ফুটপাত কিংবা ফুটওভার ব্রিজ, পাড়া-মহল্লার আঞ্চলিক সড়ক কিংবা অলিগলির রাস্তা এ সকল রঙ্গিন ভিজিটিং কার্ডে ছেয়ে গেছে। কখন, কারা এই রঙ্গিন কার্ড ছিটিয়ে দিচ্ছে এ সব নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গত কয়েক দিনে সরেজমিনে আশুলিয়ার বাইপাইল, পল্লীবিদ্যুৎ, নবীনগর, ইউনিক, জামগড়া, নরসিংহপুর, ডিইপিজড, বলিভদ্র, শ্রীপুর এলাকা ঘুরে দেখা সড়ক-মহাসড়ক সহ ফুটপাত ও ওভারে ব্রিজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন নামের দাদা-ভাইদের রঙ্গিন ভিজিটিং কার্ড।
শুধু সড়ক কিংবা ফুটপাত, ওভারব্রিজ নয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে এসব ভিজিটিং কার্ড ফেলে রাখা হয়েছে।
সড়কে পড়ে থাকা এসব কার্ডে লেখা রয়েছে রিপন দাদা, মামুন ভাই, আকাশ ভাই, বাদল ভাই, সূর্য ভাই, রাশেদ ভাই, সামি ভাই, জসিম ভাই ও জুয়েল ভাইয়ের নাম ও নাম্বার। এছাড়াও কিছু কিছু ভিজিটিং কার্ডে দুবাই গেস্ট হাউস, হোটেল হিমালয় আবাসিক ও পদ্মা গেস্ট হাউস সহ বিভিন্ন নামের গেস্ট হাউস ও আবাসিক হোটেলের নাম লেখা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যৌন কর্মী সরবরাহ কারী কিছু দালাল চক্র এসব ভিজিটিং কার্ড রাস্তা-ঘাটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ সকল ভিজিটিং কার্ডে চক্রের নাম ও নাম্বার দেয়া রয়েছে। মূলত দ্রুত যৌন ব্যবসার প্রচারের লক্ষ্যে এমন কৌশল বেছে নিয়েছে চক্রটি। এরা রাতের আধারে অথবা ভোরের নিরিবিলি সময়ে এরা এ সকল রঙ্গিন ভিজিটিং কার্ড সড়কে ছড়িয়ে- ছিটিয়ে রেখে যায়। যাতে করে খুব সহজেই সকলের নজরে আসতে পারে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সড়কের পাশে ফুটপাত কিংবা ফুটওভার ব্রিজ, পাড়া-মহল্লার আঞ্চলিক সড়ক কিংবা অলিগলির রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব ভিজিটিং কার্ডের নাম ও নাম্বার ব্যবহারকারীরা মূলত কয়েক ধাপে নারী যৌনকর্মী সরবরাহ করে থাকে।
প্রথমত ভিজিটরকে তাদের নিজস্ব আবাসিক হোটেল বা গেস্ট হাউজে ডেকে নিয়ে যৌন কর্মী সরবরাহ করে। এছাড়াও যৌনকর্মীকে ভিজিটরের বাসার ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া সহ যৌনকর্মীর বাসা কিংবা ফ্ল্যাট ভিজিটরকে পৌছে দেয়ার কাজটি করে থাকেন তারা। মূলত এরা যৌন কর্মীর দালাল হিসবে কাজ করে।
রাস্তায় পড়ে থাকা হোটেল হিমালয় আবাসিকের একটি ভিজিটিং কার্ডের নাম্বারে ফোন করা হলে, ফোনটি ধরেন মধ্য বয়সি একব্যক্তি।
তিনি জানান, হোটেল হিমালয় আবাসিকে মাত্র ১৩৫০ টাকায় রুম পাওয়া যাবে। যে কাউকে নিয়ে থাকা যাবে নির্ভয়ে। আর তারা যদি রাত্রিকালীন (অসামাজিক কাজের জন্য) সঙ্গীর ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে এক রাতের জন্য ৩৫০০ টাকা দিতে হবে।
পুলিশি ঝামেলা হবে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের হোটেল ১০০% নিরাপদ। মেইন রোডের পাশে অবস্থিত। এখানে ঝামেলা টামেলা হবে না এটা পুরাতন হোটেল, যাদের নতুন হোটেল তাদের কাগজপত্র থাকেনা তাদের সমস্যা হয়। এটা ১০০% সিকিউর হোটেল।
আবাসিক হোটেলের আশপাশের বাসিন্দারা জানান, আশুলিয়া থানা থেকে আধাঁ থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যেই অন্তত ৫/৬ টি আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে। অথেচ প্রতিনিয়ত এসব গেস্ট হাউজে চলছে অসামাজিক কার্যক্রম, কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আবাসিক হোটেলে চলা অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে পুলিশ কি ধরনের ভুমিকা পালন করছে? জানতে চাইলে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনূর কবির জানান, খুব শিগ্রই এসব জায়গায় অভিযান চালনো হবে।