
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ১নং ও ২নং ফেরীঘাট এবং আরিচা বাজার সংলগ্ন নদীতীরবর্তী ফোরশোর বা তীরভূমিতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। এতে করে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নদীভাঙনের ঝুঁকি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে এলাকাবাসী ও যাত্রীসাধারণ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অবৈধ এই বালু ব্যবসা বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি জানিয়ে প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা কার্যালয় থেকে জানা যায়, সরকারের এসআরও নং ২৪৭-এল/১৯৮৩ এবং সংশোধিত এসআর ও নং ৯৪-আইন/২০১১ এর মাধ্যমে আরিচা নদী বন্দর ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি বিআইডব্লিউটিএ এবং উপজেলা ভূমি অফিস, মানিকগঞ্জের যৌথ জরিপের মাধ্যমে মোট ১৩৬.৫৭ একর ফোরশো বা তীরভূমি বিআইডব্লিউটিএ’র অনুকূলে হস্তান্তর করা হয়।
বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, টার্মিনাল, টয়লেট কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বন্দর সুবিধাদি পরিচালনা করে আসছে। এসব স্থানে ইজারা ও লাইসেন্সের মাধ্যমে বৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। পাটুরিয়া ও আরিচা নদী বন্দর থেকে অনুমোদিত বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ওই এলাকায় বালু ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি পায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,পূর্বেও একাধিকবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। তবুও এই চক্র বারবার সক্রিয় হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ফোরশোরপিলারমধ্যেপাটুরিয়া ১ ও ২ নং ফেরি ঘাট থেকেকড়ইতলারআশপাশে অন্তত ২০টি মোটা বালু ও ভিটি বালুর গদি রয়েছে। এসব গদির বালু ট্রাকে করে জেলার বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ঘাট এলাকা ও সড়কে বালু জমে যানবাহন চলাচলে ঝুকিপূর্ণ ও নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। স্পষ্টতই জনজীবন ও পরিববেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ধূলা-বালু বাতাসে উড়ে ওই সড়ক দিয়ে জনসাধারণ চলাচল প্রতিনিয়তই সমস্যায় পড়ছে।চোখে-মুখে বালু ঢুকে অস্বস্তিতে ও শ্বাস কষ্টে ভূগছেন বলে জানান যাত্রীরা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ‘মোস্তাজ উদ্দিন ওরফে মোন্তাজ মাস্টার এসব বালু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনিই পাটুরিয়া এলাকার বালু ব্যবসার জনক। বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাকে জরিমানাও করা হয়েছে। তার ভাগিনা আলমগীর পাটুরিয়া ১ নম্বর ফেরিঘাটের পাশে গদি রয়েছে। প্রশাসনসহ নানা লোকজন ম্যানেজ করেন মোন্তাজ। মোস্তাজ সিন্ডিকেট করে এই বালু পরিচালনা করছেন।
বিআইডব্লিউটি ‘র আরিচা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. সেলিম শেখ জানান, বন্দর এলাকার স্বাভাবিক কার্যক্রম ও জনজীবন রক্ষায় এবং পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসাথে অবৈধ স্থাপনা অপসারণে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে। বিষয়টি দাপ্তরিকভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘চিঠি এখনো হাতে পাইনি। তবে জেলা প্রশাসক স্যার নির্দেশ দিলেই শীঘ্রই অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে।’