
এবি আব্বাসী, স্টাফ রিপোর্টারঃ মানিকগঞ্জে মায়ের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিনের জমানো টাকা হারানোর তিনদিন পর ফেরত পেলেন মনিরুল ইসলাম (৪৫) নামের এক ব্যবসায়ী। তবে পুলিশ এখনও তার পুরো টাকা উদ্ধার করতে পারেনি।
মনিরুল ফরিদপুর জেলার নবাবপুর ইউনিয়নের বড় হিজলি এলাকার আব্দুল মালেক মোল্লার ছেলে। ব্যবসার সুবাদে উত্তরা এলাকাতেই থাকেন।
জানা গেছে, গত শনিবার (২৬ এপ্রিল)
মনিরুল ইসলাম তার মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে সকাল আটটায় রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার সাথে থাকা একটি কালো রঙের ব্যাগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ছিলো। ব্যাগটি মোটরসাইকেলের পেছনে কাপড়ের রশি দিয়ে বাঁধা ছিলো ।
সকাল দশটার দিকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় পৌঁছানো পর মোটর সাইকেলের পেছনে টাকার ব্যাগটি না পেয়ে পেছনে ফেলে আসা রাস্তায় খোঁজাখুঁজি করেন।কিন্ত টাকার ব্যাগটি না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তিনি। পরে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে টাকা হারানোর বিষয়টি প্রকাশ করেন। মনিরুলের টাকাসহ কালো রঙের ব্যাগটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাড়োবাড়িয়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় সড়কেই পড়েছিল। পল্লীসেবা গাড়ির চালক মানিক মিয়া যাত্রীসহ গাড়ি নিয়ে মানিকগঞ্জ ফেরার পথে সড়কে কালো রঙের ব্যাগটি দেখতে পেয়ে হেলপারকে সেই ব্যাগটি গাড়িতে তুলতে বলেন। হেলপার ব্যাগটি তুলে গাড়িতে উঠি চেইন খুললে ব্যাগ ভর্তি টাকা দেখতে পান। আশপাশের যাত্রীরাও বিষয়টা নিয়ে কানাঘুষা শুরু করে। একপর্যায়ে গাড়িটি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে মাঝ বয়সি মহিলা এক যাত্রী তার টাকা বলে দাবি করেন। এ নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হইহুলার সৃষ্টি হয়। পরে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি মোটরসাইকেল যোগে গাড়ির চালক মানিকসহ টাকা ভর্তি ব্যাগটি ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের টাকা বলে নিয়ে যায়। গাড়ির হেলপার বিষয়টা মালিক সমিতিকে অবগত করলে তারা গাড়ির চালক এবং ব্যাগ উদ্ধারের জন্য মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশকে অবগত করে। পুলিশ প্রায় ছয় ঘন্টা পর টাকা ভর্তি ব্যাগ ও চালক মানিক মিয়াকে উদ্ধার করে।
পুলিশ বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের জানালে গণমাধ্যম কর্মীরা
বিষয়টি তৎক্ষণাৎ ফেইসবুকে প্রচার করতে থাকে। ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলামের স্বজনেরা পরদিন বিষয়টা ফেসবুকে দেখামাত্রই তাকে ফোন করে জানান। এরপর তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় এসে টাকার বিষয়ে যোগাযোগ করেন। পুলিশ তার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হন এটাকা মনিরুলের।
নিশ্চিত হওয়ার পরে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলামকে তার হারানো টাকা ফেরত দেয় পুলিশ।
ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলামের ভাষ্যমতে তার হারানো কালো ব্যাগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ছিল কিন্তু পুলিশ উদ্ধার করতে পেরেছে ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মনিরুল ইসলাম জানান,রাজধানীর উত্তরা এলাকায় একটি ভাড়া দোকানে দরজার ব্যবসা করেন তিনি। সেখানে তার ‘উত্তরা ডোর গ্যালারি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ।
এ বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মায়ের চিকিৎসা এবং ঋণের টাকা পরিষদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে এই টাকা আমি জমিয়েছি। টাকা হারিয়ে আমার মাথায় যেন আসমান ভেঙ্গে পরল। একদিন পর স্বজনদের মাধ্যমে হারানো টাকা পুলিশের জিম্মায় আছে জানতে পারি। এই টাকা পেয়ে যারা পুলিশের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন তাদের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ। এ টাকা দিয়ে আমি আমার মায়ের চিকিৎসা করতে পারব। বাকি টাকা উদ্ধার হলে ঋণের টাকাও পরিশোধ করতে পারব।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ বলেন, হারানো টাকা উদ্ধার করে মনিরুল ইসলামকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। ব্যাগে আরো কিছু টাকা ছিল বলে তিনি জানিয়েছেন। বাকি টাকা উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি