
আলোকিত কন্ঠ ডেস্কঃ পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ১৫ দিনের মাথায় পাকিস্তানে প্রত্যাঘাত হেনেছে ভারত। অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাকিস্তানে, বিশেষত পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গিঘাঁটিগুলিকে নিশানা করা হয়েছে। ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, মধ্যরাতে পাক জঙ্গিঘাঁটি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান এই হামলায় আট জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করে নিয়েছে। সীমান্তে গোলাগুলি চলছে এখনও। কিন্তু কেন এই নামকরণ? প্রত্যাঘাতের নামে কেন ‘সিঁদুর’ রাখা হল?
সেনা সূত্রের খবর, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে সায় দিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই নামেই পহেলগাঁওয়ের ঘটনার যোগ্য জবাব দেওয়া যাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর যে ভাবে হামলা হয়েছিল, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে তার ছায়া রয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় মূল নিশানা ছিলেন পর্যটকেরা। অভিযোগ, জঙ্গিরা ধর্মপরিচয় জিজ্ঞাসা করে বেছে বেছে গুলি করেছিলেন পর্যটকদের। মহিলা বা শিশুদের মারা হয়নি। তাঁদের চোখের সামনে খুন করা হয়েছিল পুরুষদের। কেউ হারিয়েছেন স্বামীকে, কেউ সন্তানকে বা অন্য কোনও গুরুজনকে। পহেলগাঁওয়ে নিহতদের অধিকাংশই স্ত্রী-পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন। স্ত্রীদের সামনেই তাঁদের স্বামীকে খুন করা হয়। হামলার এই ধরনের কারণে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
হিন্দু মহিলারা সাধারণত কপালে সিঁদুর পরে বিবাহের চিহ্ন বহন করেন। অভিযোগ, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিরা সেই চিহ্ন মুছে দিয়েছে। নিহতদের মধ্যে এমন অনেকেই ছিলেন, যাঁদের সদ্য বিয়ে হয়েছিল। তাঁরা মধুচন্দ্রিমায় গিয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর সদ্যবিধবা মহিলাদের করুণ ছবি সমাজমাধ্যমে ছেয়ে গিয়েছিল। বিশেষ ভাবে ভাইরাল হয়েছিল হরিয়ানার নৌসেনা আধিকারিক বিনয় নওয়ালের স্ত্রী হিমাংশী নরওয়ালের ছবি। উপত্যকার মাঝে স্বামীর নিথর দেহ আঁকড়ে তাঁকে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল। ঘটনার দিন কয়েক আগেই বিয়ে হয় তাঁদের। ওই ছবিটিই ভারতের প্রত্যাঘাতের প্রতীকী ছবি হয়ে উঠেছে, বলছেন পর্যবেক্ষকেরা।
পাকিস্তানে প্রত্যাঘাতের পরে ভারতীয় সেনার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘কিছু ক্ষণ আগে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করল। পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কাঠামোগুলিকে আঘাত করা হয়েছে। যেখান থেকে ভারতে হামলার পরিকল্পনা এবং পরিচালনা করা হয়। সবমিলিয়ে ন’টি জায়গায় প্রত্যাঘাত করা হয়েছে।’’
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার সঙ্গে যোগাযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। তারা নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছে। আমেরিকা, চিন, রাশিয়া-সহ বিভিন্ন দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনীতির মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের বার্তা দিয়েছিল। কিন্তু প্রধামন্ত্রী সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছিলেন। তার পর ১৫ দিনের মাথায় ভারত প্রত্যাঘাত করল পাকিস্তানে।
সূত্রঃ আনন্দ বাজার