
বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর দেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এটি দেশের প্রধান রপ্তানি খাত হিসেবে স্বীকৃত এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে আসছে। তবে এই সেক্টরের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যা ঠিকভাবে সমাধান না করলে ভবিষ্যতে শিল্পের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।
মুন রেডিওয়্যার্স লিমিটেড (সেতারা গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান) এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জনাব আসেফ কামাল পাশা, যিনি প্রায় এক দশক ধরে গার্মেন্টস খাতে কাজ করছেন, এই শিল্প নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেছেন। তাঁর দাদাজান, প্রয়াত এ কে এম সালাউদ্দিন ছিলেন গার্মেন্টস শিল্পের একজন পথপ্রদর্শক এবং তাঁর পিতা, জনাব আনোয়ার কামাল পাশা (মিলন), প্রায় চার দশক ধরে এই খাতে কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশের গার্মেন্টস এসোসিয়েশন (BGMEA) এর পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন এবং সিভিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান। কানাডার রাইয়ারসন ইউনিভার্সিটি থেকে কমার্স এবং বিজনেস টেকনোলজি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর দেশে ফিরে ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছেন। বর্তমানে তিনি ২০২৫-২৭ সালের BGMEA নির্বাচনে ফোরাম প্যানেলের প্রার্থী।
একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে, তিনি ‘আলোকিত কন্ঠ’ কে গার্মেন্টস সেক্টরের বিভিন্ন সমস্যা ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানিয়েছেন।
আসেফ পাশা বলেন, “বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর মধ্যে একটি। এই খাত দেশের নাম আন্তর্জাতিক বাজারে তুলে এনেছে এবং প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তবে সাফল্যের পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যেগুলো সমাধান না করলে ভবিষ্যতে আমাদের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের গার্মেন্টস সেক্টর অনেক দূর এগিয়েছে, কিন্তু সামনে আরও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। উন্নয়নের পথে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো কাটিয়ে উঠতে সঠিক নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা আবশ্যক।”
গার্মেন্টস শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আসেফ পাশা বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আমাদের পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা অনেক বেশি এবং আমাদের কর্মীরা প্রতিযোগিতামূলক দামে উচ্চমানের পণ্য সরবরাহে দক্ষ। এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা গার্মেন্টস খাতকে আরও এগিয়ে নিতে পারি। এজন্য প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব, এজন্যই আমি BGMEA নির্বাচনে প্রার্থী।”
তিনি আরও বলেন, “গার্মেন্টস সেক্টর দেশের জাতীয় আয়ের একটি বড় অংশ যোগান দেয়। এই শিল্পের মাধ্যমে শুধু অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নয়, দেশের বড় অংশের জীবনমানও উন্নত হচ্ছে। তাই আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া উচিত কর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে মনোনিবেশ করা।”
তিনি জানান, গার্মেন্টস শিল্পে চার মিলিয়নের বেশি লোক কাজ করেন, যার অধিকাংশই নারী। শিল্পে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নারীদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করা জরুরি, মনে করেন তিনি।
তাছাড়া, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রযুক্তির অভাব এবং বিদ্যুৎ খরচ বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। শিল্পের টেকসইতার জন্য সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং পরিবেশ সচেতন উৎপাদন পদ্ধতি গ্রহণ জরুরি।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গেও তিনি বলেন, ভিয়েতনাম, চীনসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলো আমাদের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের উৎপাদন খরচ কমানো, প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ানো এবং গুণগত মান বজায় রাখা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, “গার্মেন্টস খাতের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এই সুযোগ-সুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ দুটোই সঠিকভাবে মোকাবেলা করার ওপর নির্ভর করে। সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপ নিলে গার্মেন্টস সেক্টর আরও শক্তিশালী হবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারবে। এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি নিবেদিত গার্মেন্টস মন্ত্রণালয় প্রয়োজন। আমাদের ফোরাম প্যানেল BGMEA নির্বাচনে জয়লাভ করলে এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে কাজ করবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, “আজকের যুব সমাজ গার্মেন্টস সেক্টরের সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি। তাদের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী মনোভাব এবং উদ্যম সঠিকভাবে কাজে লাগালে একটি শক্তিশালী, টেকসই ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম সেক্টর গড়ে তোলা সম্ভব।”
ফোরাম প্যানেলের মাধ্যমে তিনি বলছেন, “আমরা যুব নেতৃত্বের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি, যারা শুধু শ্রমিকদের উন্নতির জন্য কাজ করবে না, বরং গার্মেন্টস খাতের ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী নেতৃত্ব তৈরি করবে। যুব নেতৃত্বের ওপর ফোকাস গার্মেন্টস খাতের দ্রুত উন্নয়নে সহায়তা করবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে।”