১২:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাশিমপুরে ভুয়া পুলিশ পরিচয়ে প্রতারনা, হ্যান্ডকাফ সহ আটক ১

  • স্টাফ রিপোটারঃ
  • প্রকাশের সময়ঃ ০৪:১৫:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
  • ২৬ বার পড়া হয়েছে

 

গাজিপুরঃ কাশিমপুর থানার সিভিল পোশাকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে গিয়ে লাল মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে, কাশিমপুর থানা পুলিশ।

মো. লাল মিয়া” — নামটি এখন আশপাশের এলাকায় আতঙ্কের নাম। বয়স ৪০ হলেও অপরাধের অভিজ্ঞতায় তিনি যেন পুরোদস্তুর এক ‘মাফিয়া’। পুলিশ পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এনায়েতপুর, রৌশন মার্কেট, জরুনসহ আশেপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিল এই ব্যক্তি। তার মূল টার্গেট ছিল মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নারীরা, যাদের তিনি ‘মাদকসম্রাজ্ঞী’ বলে আখ্যা দিতেন এবং পরবর্তীতে তাদের জিম্মি করে আদায় করতেন মাসোয়ারা।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, লাল মিয়ার রয়েছে একটি গোপন ‘টর্চার সেল’। স্থানীয়ভাবে কুখ্যাত এই নির্যাতনকেন্দ্রে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নেওয়া হতো নিরীহ মানুষদেরও — শুধুমাত্র তার চাহিদা মত টাকা না দেওয়ায়। অনেক ভুক্তভোগী ভয়ে মুখ খুলতে পারতেন না, কারণ পুলিশ পরিচয়ের আড়ালে তার ছিল অদৃশ্য প্রভাব ও ভয়ংকর প্রতিশোধের হুমকি।

সুশীল সমাজের মতে, লাল মিয়ার মতো প্রতারকেরা সমাজে মাদকের বিস্তার আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। একজন সুশীল নাগরিক বলেন, “যেখানে অপরাধ দমনকারী সেজে অপরাধই করে কেউ, তখন সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? যুবসমাজ ও কিশোর-কিশোরীরা সহজেই মাদকের নাগালে আসছে, কারণ এসব চক্রগুলোর সঙ্গে গোপনে যোগসাজশে রয়েছে এমন অসাধু লোকজন।”

এলাকাবাসীর জোর দাবি, লাল মিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং তার ‘টর্চার সেল’ এর অপতৎপরতা যেন দ্রুত বন্ধ হয়।

কাশিমপুর থানার এসআই শিবলু মিয়া (বিপি-৯৪২১২৩৮৮৯১) সঙ্গীয় ফোর্সসহ মোবাইল-৪ টিম নিয়ে নাইট ডিউটিতে কর্মরত অবস্থায় ২৯ মে রাত আনুমানিক ১টা ৩০ মিনিটে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন, সারদাগঞ্জ পুকুরপাড় এলাকায় তালতলা তিন রাস্তার মোড়ে এক ব্যক্তি পাকা রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে নিজেকে পুলিশের সদস্য পরিচয় দিচ্ছেন।

এসআই শিবলু মিয়া তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান চালান এবং পুলিশ পরিচয়দানকারী ব্যক্তি মো. লাল মিয়া (৪০), পিতা-মৃত আঃ মজিদ মিয়া, মাতা-জায়েদা খাতুন, সাং-বারেন্ডা, গাজীপুর মহানগর, গাজীপুরকে আটক করেন। তল্লাশিকালে লাল মিয়ার হেফাজত থেকে একটি পুরাতন হ্যান্ডকাপ (হাতকড়া) উদ্ধার করা হয়, যা সে পুলিশ পরিচয় দেয়ার জন্য ব্যবহার করে আসছিল।

রাত ১টা ৪৫ মিনিটে হাতকড়াটি জব্দ করা হয় এবং অভিযুক্তকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে এসআই শিবলু মিয়া বাদী হয়ে কাশিমপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২৭, তারিখ: ২৯/০৫/২০২৫)। মামলাটি ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ১৭০ ও ১৭১ ধারায় রুজু করা হয়েছে, যা সরকারি কর্মচারীর ভুয়া পরিচয় প্রদান এবং তার ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কিত।
আজ দুপুরে লাল মিয়াকে কাশিমপুর থানা থেকে মামলা রজু করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। এসময় সাংবাদিকরা ভিডিও ধারণ করলে গাড়িতে ওঠার সময় লাল মিয়া সাংবাদিক আরমানকে হুমকি প্রদান করে। ।

কাশিমপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মনিরুজ্জামান জানান, “এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। আমরা জনগণকে অনুরোধ করছি, এ ধরনের সন্দেহজনক ব্যক্তির সম্পর্কে সাথে সাথে পুলিশকে অবহিত করতে।”

আসামিকে আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে কাশিমপুর থানা পুলিশ।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

প্রধান উপদেষ্টার সাথে জাপানের প্রধান মন্ত্রীর বৈঠক, ৬ সমঝোতা স্মারক

কাশিমপুরে ভুয়া পুলিশ পরিচয়ে প্রতারনা, হ্যান্ডকাফ সহ আটক ১

প্রকাশের সময়ঃ ০৪:১৫:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

 

গাজিপুরঃ কাশিমপুর থানার সিভিল পোশাকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে গিয়ে লাল মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে, কাশিমপুর থানা পুলিশ।

মো. লাল মিয়া” — নামটি এখন আশপাশের এলাকায় আতঙ্কের নাম। বয়স ৪০ হলেও অপরাধের অভিজ্ঞতায় তিনি যেন পুরোদস্তুর এক ‘মাফিয়া’। পুলিশ পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এনায়েতপুর, রৌশন মার্কেট, জরুনসহ আশেপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিল এই ব্যক্তি। তার মূল টার্গেট ছিল মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নারীরা, যাদের তিনি ‘মাদকসম্রাজ্ঞী’ বলে আখ্যা দিতেন এবং পরবর্তীতে তাদের জিম্মি করে আদায় করতেন মাসোয়ারা।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, লাল মিয়ার রয়েছে একটি গোপন ‘টর্চার সেল’। স্থানীয়ভাবে কুখ্যাত এই নির্যাতনকেন্দ্রে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নেওয়া হতো নিরীহ মানুষদেরও — শুধুমাত্র তার চাহিদা মত টাকা না দেওয়ায়। অনেক ভুক্তভোগী ভয়ে মুখ খুলতে পারতেন না, কারণ পুলিশ পরিচয়ের আড়ালে তার ছিল অদৃশ্য প্রভাব ও ভয়ংকর প্রতিশোধের হুমকি।

সুশীল সমাজের মতে, লাল মিয়ার মতো প্রতারকেরা সমাজে মাদকের বিস্তার আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। একজন সুশীল নাগরিক বলেন, “যেখানে অপরাধ দমনকারী সেজে অপরাধই করে কেউ, তখন সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? যুবসমাজ ও কিশোর-কিশোরীরা সহজেই মাদকের নাগালে আসছে, কারণ এসব চক্রগুলোর সঙ্গে গোপনে যোগসাজশে রয়েছে এমন অসাধু লোকজন।”

এলাকাবাসীর জোর দাবি, লাল মিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং তার ‘টর্চার সেল’ এর অপতৎপরতা যেন দ্রুত বন্ধ হয়।

কাশিমপুর থানার এসআই শিবলু মিয়া (বিপি-৯৪২১২৩৮৮৯১) সঙ্গীয় ফোর্সসহ মোবাইল-৪ টিম নিয়ে নাইট ডিউটিতে কর্মরত অবস্থায় ২৯ মে রাত আনুমানিক ১টা ৩০ মিনিটে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন, সারদাগঞ্জ পুকুরপাড় এলাকায় তালতলা তিন রাস্তার মোড়ে এক ব্যক্তি পাকা রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে নিজেকে পুলিশের সদস্য পরিচয় দিচ্ছেন।

এসআই শিবলু মিয়া তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান চালান এবং পুলিশ পরিচয়দানকারী ব্যক্তি মো. লাল মিয়া (৪০), পিতা-মৃত আঃ মজিদ মিয়া, মাতা-জায়েদা খাতুন, সাং-বারেন্ডা, গাজীপুর মহানগর, গাজীপুরকে আটক করেন। তল্লাশিকালে লাল মিয়ার হেফাজত থেকে একটি পুরাতন হ্যান্ডকাপ (হাতকড়া) উদ্ধার করা হয়, যা সে পুলিশ পরিচয় দেয়ার জন্য ব্যবহার করে আসছিল।

রাত ১টা ৪৫ মিনিটে হাতকড়াটি জব্দ করা হয় এবং অভিযুক্তকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে এসআই শিবলু মিয়া বাদী হয়ে কাশিমপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২৭, তারিখ: ২৯/০৫/২০২৫)। মামলাটি ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ১৭০ ও ১৭১ ধারায় রুজু করা হয়েছে, যা সরকারি কর্মচারীর ভুয়া পরিচয় প্রদান এবং তার ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কিত।
আজ দুপুরে লাল মিয়াকে কাশিমপুর থানা থেকে মামলা রজু করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। এসময় সাংবাদিকরা ভিডিও ধারণ করলে গাড়িতে ওঠার সময় লাল মিয়া সাংবাদিক আরমানকে হুমকি প্রদান করে। ।

কাশিমপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মনিরুজ্জামান জানান, “এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। আমরা জনগণকে অনুরোধ করছি, এ ধরনের সন্দেহজনক ব্যক্তির সম্পর্কে সাথে সাথে পুলিশকে অবহিত করতে।”

আসামিকে আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে কাশিমপুর থানা পুলিশ।