
প্রারম্ভ:- হজ্জ আরবি শব্দ, যার অর্থ নিয়ত করা, দর্শন করা, সংকল্প করা, সন্ধান করা, সাক্ষাৎ করা, ইচ্ছা করা বা প্রতিজ্ঞা করা সহ কোনো মহৎ কাজের ইচ্ছা করা। শরিয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ফরজ আমলটি পালনার্থে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য ও সন্তোষ লাভের আশায় হজ্জের নির্ধারিত সময়-সীমার ভেতরে নির্দিষ্ট আমল সম্পাদনের জন্য পবিত্র ‘বাইতুল্লাহ’ তথা কা’বা ঘর জেয়ারত করাকে হজ্জ বলে।
★কোরআনের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত…
আল্লাহ তা‘আলা সূরা আলে ইমরান এর ৯৭ নং আয়াতে ইরশাদ করেন,
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ
আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ করা ঐ ব্যক্তির উপর ফরয করা হ’ল, যার এখানে আসার সামর্থ্য রয়েছে। আর যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করে সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহ জগদ্বাসী থেকে ‘মুখাপেক্ষীহীন’।
🔘এটিই হজ্জ ফরয হওয়ার মূল দলীল।
💠তাফসীরে ইবনু কাছীর ২/৮১, অত্র আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
সূরা বাক্বারাহ ১৯৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ
‘আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরাহ পূর্ণ কর। কিন্তু যদি তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হও, তাহ’লে যা সহজলভ্য হয়, তাই কুরবানী কর’।
🔘এ আয়াতটি হজ্জ ফরয হওয়ার পাশাপাশি ওমরাহ ফরয হওয়ারও দাবী রাখে, যে ব্যাপারে অধিকাংশ ছাহাবী ও ওলামায়ে কেরাম অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
💠তাফসীরে ইবনু কাছীর ১/৫৩০-৫৩১, অত্র আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
★হাদিসের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত…
আবুদাউদ শরিফের ১৭২১ নং হাদিসে এবং ইবনু মাজাহ শরিফের ২৮৮৬ নং হাদিসে এসেছে…
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ الأَقْرَعَ بْنَ حَابِسٍ سَأَلَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ! الْحَجُّ فِىْ كُلِّ سَنَةٍ أَوْ مَرَّةً وَاحِدَةً قَالَ : بَلْ مَرَّةً وَاحِدَةً فَمَنْ زَادَ فَهُوَ تَطَوُّعٌ-
ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আকরা‘ বিন হাবেস নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! হজ্জ কি প্রতি বছর ফরয না জীবনে একবারই ফরয? তিনি বললেন, না বরং হজ্জ জীবনে একবার ফরয। যে অধিক করবে তা তার জন্য নফল হবে’।
বুখারী শরিফের ১৫২১ নং হাদিসে এবং মুসলিম শরিফের ১৩৫০ নং হাদিসে এসেছে…
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : مَنْ حَجَّ لِلَّهِ، فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَمَا وَلَدَتْهُ أُمُّهُ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করেছে। যার মধ্যে সে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কার্য করেনি, সে হজ্জ হ’তে ফিরবে সেদিনের ন্যায় (নিষ্পাপ অবস্থায়) যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিলেন’।
বুখারী শরিফের ১৭৭৩ নং এবং মুসলিম শরিফের ১৩৪৯ নং হাদিসে এসেছে…
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক ওমরাহ অপর ওমরাহ পর্যন্ত সময়ের (ছগীরা গুনাহের) কাফফারা স্বরূপ। আর জান্নাতই হ’ল কবুল হজ্জের একমাত্র প্রতিদান’।
নাসাঈ শরিফের ২৬২৫ নং ‘ছহীহুল জামে’ ৭১১২ নং এবং
ছহীহ আত-তারগীব ১১০৯ নং মিশকাত শরিফের ২৫৩৭ নং হাদিসে এসেছে…
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : وَفْدُ اللهِ ثَلَاثَةٌ: الْغَازِيْ، وَالْحَاجُّ، وَالْمُعْتَمِرُ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর মেহমান হ’ল তিনটি দল- আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধকারী, হজ্জকারী ও ওমরাহ্কারী’।
★আসুন আমরা জানবো হজ্জের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি কী কী…
হজ্জের ফরজ ৩টি
১. ইহরাম বাঁধা।
২. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা
৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা।
হজ্জের ওয়াজিব সাতটি…
১. আরাফা থেকে মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফা নামের স্থানে ১০ জিলহজ ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কিছু সময় অবস্থান করা
২. সাফা ও মারওয়া সায়ি করা বা দৌড়ানো
৩. রমিয়ে জিমার বা ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ জামারায় শয়তানকে পাথর মারা
৪. তামাত্তু ও কিরান হজ্জে দমে শোকর করা
৫. মাথার চুল মুড়িয়ে বা কেটে ইহরাম সমাপ্ত করা
৬. বিদায়ী তাওয়াফ করা
৭. মদিনা শরিফ রওজাতুন নবী (সা.) জিয়ারত করা।
[আসান ফিকাহ, ইউসুফ ইসলাহি, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৫১]
★পরিশেষে বলবো…
হজ্জ একটি ইবাদত, যা আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও বিশেষ মর্যাদা লাভ করা যায়। তাই প্রত্যেকের হজ্জ পালন করা উচিত। আয়েশা (রাঃ) হজ্জের বিধান জানার পর কখনো হজ্জ ত্যাগ করেননি। হজ্জের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে এর কার্যাবলী সম্পাদন করে বাড়ি ফিরা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে পৃথক পৃথক ফযীলত ও মর্যাদা রয়েছে।
সুতরাং আমাদের উচিত হজ্জ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি সম্পন্ন করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে এর গুরুত্ব ও ফযীলত বুঝে তদানুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন- আমীন!