
নারায়ণগঞ্জঃ গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ৩০টি এলাকায় প্রায় ৫০হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। রূপ নিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতার অপরিকল্পিতভাবে সেচ প্রকল্প নির্মাণ এবং পানি নিষ্কাশনের খালগুলো বেদখলে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার তারাবো, বরপা, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল, মধ্যপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, বৌবাজার, বা´োর্চা, খালপাড়, ইসলামবাগ, আমলাবো, কালী, আমলাবো মুসলিমপাড়া, ডুড়–রদিয়া, গোলাকান্দাইল নতুন বাজার, কান্দাপাড়া, বলাইখাঁ, বিজয়নগর, মদিনানগর, তারাবো পৌরসভার তেঁতলাবো, শান্তিনগর, বাগানবাড়ি, পশ্চিম কান্দাপাড়া, উত্তর মাসাবো, যাত্রামুড়া, রূপসী ও ভুলতা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, সোনাবো, পাঁচাইখা ও ইসলামপুরসহ আশপাশের এলাকায় এখন জলাবদ্ধতা। এতে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কারো কারো বাড়ির উঠোনেই পানি। কারো বাড়িতে হাঁটু থেকে কোমর সমান পরিমাণ। অনেকের বসত ঘরে ৩-৪ ফুট পানি। রাস্তা ঘাট তলিয়ে গেছে। গবাদি পশু অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। বাড়িতে পানি উঠায় কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বাঁশের মাচার ওপর বসবাস করছেন। কয়েকটি শিল্প কারখানায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে গেছে। সেসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। এছাড়া শিল্প কারখানার নির্গত ক্যামিকেল ও দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানিতে দূষণ হয়ে রোগাক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। নারী ও শিশুরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ঢাকা- সিলেট মহাসড়কের সংস্কার কাজের বর্জ্য ফেলে পানি নিষ্কাশনের খাল বন্ধ করে দেওয়ায় তারাবো আল-ফালাহ জামে মসজিদ ও কবরস্থানেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তাতে মসজিদে নামাজ পড়া যাচ্ছে না ও কবরস্থানেও লাশ দাফন করা যাচ্ছে না। তারবো আল-ফালাহ জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা খোরশেদ আলম বলেন,বহু আবেদন ও নিবেদন করেও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
নাগেরবাগ এলাকার পারভেজ আহমেদ বলেন, ‘একদিকে বিধিনিষেধ অপরদিকে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় অতি কষ্টে চলছে নিম্নআয়ের মানুষের। শিল্প কারখানার নির্গত বর্জ্যে পানি নিষ্কাশন খালগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্প কারখানার নির্গত গরম পানি জলাবদ্ধতায় মিশে গেছে। তাতে জলাবদ্ধতার পানি কুচকুচে কালো রঙ ধারণ করেছে। এ পানিতে হাঁটাচলা করতে গিয়ে মানুষ চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পানির কীট-পতঙ্গসহ মাছ মরে যাচ্ছে। আশপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
ইসলামবাগ এলাকার গৃহিণী নাজমা বেগম বলেন, আমাদের বাড়ি ঘরে হাঁটু সমান পানি উঠেছে। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। চুলায় আগুন জ্বালাতে পারি না। বিশুদ্ধ পানি নেই। সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে বাড়ির অনেক ভাড়াটিয়া এ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।
গোলাকান্দাইল এলাকার শিক্ষক রতন লাল বলেন, রূপগঞ্জ শিল্পাঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। সে কারণে জমির দাম বেশি।
তুলনামূলকভাবে নিচু জমির দাম কম। তাই অনেকেই নিচু অঞ্চলে কম দামে জমি ক্রয় করে ঘর বাড়ি নির্মাণ করছেন। আর সে কারণেই নির্মিত ঘর বাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
আমলাব মুসলিম পাড়া এলাকার হানিফ মিয়া বলেন, ১৪-১৫ বছর ধরে এখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাদের বাঁচতে হচ্ছে। বানিয়াদী এলাকায় স্লোইচগেট থাকলেও ওখানকার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা সময়মত মেশিন চালু না রাখায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পাম্পের দায়িত্বে থাকা অফিসারদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো:সাইফুল ইসলাম বলেন, রূপগঞ্জের বিভিন্ন জায়গার সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনের কাজ চলছে। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।