১০:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আশুলিয়ার শিমুলিয়ায় ভূমিদস্যু আবুল হোসেনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

 

সাভারঃ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নে শতবর্ষী শ্মশানের রাস্তা উন্মুক্তকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ উঠেছে। হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘বিএনপি নেতা’ পরিচয়ধারী আবুল হোসেন। হামলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের এক যুবকসহ কমপক্ষে চারজন গুরুতর আহত হন। আহত ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতেই আবুল হোসেনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তাদের উপর হামলা করে।

স্থানীয়রা জানান, ২০ জুন (শুক্রবার) বিকেল ৪টায় শিমুলিয়ার শত বছরের পুরনো শ্মশানঘাটের একমাত্র চলাচলের রাস্তা অন্যায় ভাবে দেয়াল দিয়ে বন্ধ করে দেয় আবুল হোসেন।এতে বিক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় এলাকাবাসী। পরবর্তীতে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাভার উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের দৃষ্টি গোছরে পড়লে তিনি এলাকাবাসীকে ডেকে নিয়ে তাদের কথা শুনে অভিযোগ গ্রহণ করেন। পরে তদন্ত করে রাস্তা উন্মুক্ত করার জন্য ওই ওয়ার্ডের মেম্বারকে নির্দেশ প্রদান করেন। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মানববন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধন শেষে ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ ও চেয়ারম্যানের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে দেয়াল অপসারণ করে রাস্তাটি উন্মুক্ত করা হয়।

কিন্তু এ ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সন্ত্রাসী আবুল হোসেন তার বাহিনী নিয়ে শিমুলিয়া বাজারে হানা দেয়। পুলিশকে আগেই ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আনেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসআই মজিবর ও সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের সামনে দেশীয় অস্ত্রসহ ৩০-৩৫ জনের একটি দল হামলা চালায়।

হামলায় গুরুতর আহত হন অজিত (৩০), শফিকুল ইসলাম শফিক (৩২), তারা মিয়া (৪৬) ও এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। এরপর পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

শিমুলিয়া বাজারের স্থানীয়দের অভিযোগ, কথিত বিএনপি নেতা সন্ত্রাসী আবুল হোসেন বহুদিন ধরে বিএনপি নেতা পরিচয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি, জমি দখল, সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতনের মতো অপরাধে জড়িত। একাধিক মামলার পরও প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। এবার তিনি শ্মশানের রাস্তা দখল করে আশেপাশের কয়েক হেক্টর কৃষিজমি ও ধর্মীয় স্থানের প্রবেশপথও নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

এক ভুক্তভোগী বলেন, “এই রাস্তা দিয়েই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মৃতদেহ দাহ করতে যান। এটা বন্ধ করে তারা শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে নয়, মানবাধিকারে সরাসরি আঘাত করেছে।

শিমুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। পুলিশ যদি আমাদের রক্ষা না করে, তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?

স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ বলছে, এই ঘটনা একক কোনো বিচ্ছিন্ন হামলা নয়। বরং এটি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পুষ্ট একটি দখলদার চক্রের দৃষ্টান্তমূলক প্রকাশ, যার পেছনে আছে প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়া। শ্মশানের মতো ধর্মীয় স্থানে রাস্তা দখল ও পুলিশ উপস্থিতিতে হামলা—এমন ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইজিপি’র সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু

আশুলিয়ার শিমুলিয়ায় ভূমিদস্যু আবুল হোসেনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

প্রকাশের সময়ঃ ০৩:৪৮:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

 

সাভারঃ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নে শতবর্ষী শ্মশানের রাস্তা উন্মুক্তকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ উঠেছে। হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘বিএনপি নেতা’ পরিচয়ধারী আবুল হোসেন। হামলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের এক যুবকসহ কমপক্ষে চারজন গুরুতর আহত হন। আহত ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতেই আবুল হোসেনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তাদের উপর হামলা করে।

স্থানীয়রা জানান, ২০ জুন (শুক্রবার) বিকেল ৪টায় শিমুলিয়ার শত বছরের পুরনো শ্মশানঘাটের একমাত্র চলাচলের রাস্তা অন্যায় ভাবে দেয়াল দিয়ে বন্ধ করে দেয় আবুল হোসেন।এতে বিক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় এলাকাবাসী। পরবর্তীতে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাভার উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের দৃষ্টি গোছরে পড়লে তিনি এলাকাবাসীকে ডেকে নিয়ে তাদের কথা শুনে অভিযোগ গ্রহণ করেন। পরে তদন্ত করে রাস্তা উন্মুক্ত করার জন্য ওই ওয়ার্ডের মেম্বারকে নির্দেশ প্রদান করেন। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মানববন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধন শেষে ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ ও চেয়ারম্যানের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে দেয়াল অপসারণ করে রাস্তাটি উন্মুক্ত করা হয়।

কিন্তু এ ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সন্ত্রাসী আবুল হোসেন তার বাহিনী নিয়ে শিমুলিয়া বাজারে হানা দেয়। পুলিশকে আগেই ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আনেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসআই মজিবর ও সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের সামনে দেশীয় অস্ত্রসহ ৩০-৩৫ জনের একটি দল হামলা চালায়।

হামলায় গুরুতর আহত হন অজিত (৩০), শফিকুল ইসলাম শফিক (৩২), তারা মিয়া (৪৬) ও এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। এরপর পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

শিমুলিয়া বাজারের স্থানীয়দের অভিযোগ, কথিত বিএনপি নেতা সন্ত্রাসী আবুল হোসেন বহুদিন ধরে বিএনপি নেতা পরিচয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি, জমি দখল, সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতনের মতো অপরাধে জড়িত। একাধিক মামলার পরও প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। এবার তিনি শ্মশানের রাস্তা দখল করে আশেপাশের কয়েক হেক্টর কৃষিজমি ও ধর্মীয় স্থানের প্রবেশপথও নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

এক ভুক্তভোগী বলেন, “এই রাস্তা দিয়েই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মৃতদেহ দাহ করতে যান। এটা বন্ধ করে তারা শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে নয়, মানবাধিকারে সরাসরি আঘাত করেছে।

শিমুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। পুলিশ যদি আমাদের রক্ষা না করে, তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?

স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ বলছে, এই ঘটনা একক কোনো বিচ্ছিন্ন হামলা নয়। বরং এটি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পুষ্ট একটি দখলদার চক্রের দৃষ্টান্তমূলক প্রকাশ, যার পেছনে আছে প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়া। শ্মশানের মতো ধর্মীয় স্থানে রাস্তা দখল ও পুলিশ উপস্থিতিতে হামলা—এমন ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইজিপি’র সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।