সাভারঃ ২০২৪ সালের আওয়ামী সরকার পতনের এক দফার দাবীতে ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলন সফল করতে ছাত্রদল নেতা ফয়সাল (২৬) আন্দোলনে অংশ নেয় এবং ৩৬টি ছররা গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়।
শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে ডাক্তার ১৫টি গুলি অপারেশন করে উঠাতে সক্ষম হলেও বাকি ২১টি গুলি রয়ে যায়। এই ২১টি গুলি শরীরের বিভিন্ন অংশে চলাচল করলে শুরু হয় অমানুষিক যন্ত্রণা। এই অমানুষিক যন্ত্রণা নিয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন ফয়সাল। তবে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন বলে জানান চিকিৎসক।
ঢাকা জেলার সাভার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের নামা গেন্ডা মোল্লা মার্কেট এলাকার পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি মো: ফজলুল হক ফালানের ছেলে আহমেদ ফয়সাল। বর্তমানে তিনি সাভার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, সারা দেশসহ রাজধানী ও সাভারে ৫ই আগস্টে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনে অংশ নেন ছাত্রদল নেতা আহমেদ ফয়সাল। ১ ঘন্টার ব্যবধানে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ৩৬টি ছোড়া গুলি বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তার সহযোগীরা তাকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ছাত্রদল করার কারণে আওয়ামী সরকারের মামলা ও হামলারও শিকার হয়েছে এই ছাত্রদল নেতা। এমনও কি তাকে পরপর ৩ বার হতে হয়েছে কারাবরণ। এখানেই তিনি ক্ষ্যন্ত নন, শরীরে ২১টি ছররা গুলির অমানুষিক যন্ত্রণা নিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে এই ছাত্রদল নেতাকে। দলের জন্য জীবন দিতে হলেও দিবেন, তবুও পিছু হটবেন না।
আহত ছাত্রদল নেতা আহমেদ ফয়সাল জানান, শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে আন্দোলনটি গড়ায় সরকার পতনের দাবিতে। ওই আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং পুলিশ নির্বিচারে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালাতে থাকে। ৫ই আগস্ট তিনি যখন সাভার থানা স্টান্ড এলাকায় যান সেমসয়ে মুক্তির মোড় এলাকা থেকে পুলিশ বাহিনী রাবার বুলেট, টিয়ারসেল, ছররা গুলি করতে থাকে। এসময় আইলেন টপকে দৌড় দিলে একাধিক ছররা গুলি আমার শরীরে বিদ্ধ হয়। এমসয় প্রাণ যায় অনেকের। আমিও নিজেকে আর থামাতে পারিনি। কিন্তু মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে ছররা গুলিতে আমার শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। আমি মনে করেছিলাম, এই বুঝি আমার ওপারে যাওয়ার ডাক পড়েছে।
তিনি আরও জানান, অজ্ঞান হয়ে পড়লে আমাকে অন্য আন্দোলনকারীরা উদ্ধার করে সাভার স্পেশালিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান।সেখানে চিকিৎসকরা তখন কেবল অপারেশন করে ১৫টি গুলিই শরীর থেকে বের করা যায়। চিকিৎসার পর এখনো শরীরের বামপাশের পা থেকে কাঁধ পর্যন্ত অন্তত ২১টি গুলি রয়ে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন ব্যথার ওষুধ খেয়ে নাকি থাকতে হবে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া মো: সামিদুল নামে ফয়সালের এক সহযোদ্ধা জানায়, আমরা যখন ফয়সালের সাথে আন্দোলনে যাই। এসময়ে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী একাধারে গুলি ছুড়তে থাকে, ওই গুলিতে ফয়সাল গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করতে গেলে সন্ত্রাসীরা রাম দও দিয়ে আমার পায়ে কোপ দেয়। এসময়ে আমি দৌড় দিলে সেই কোপ রাম দায়ের ওল্টো পাশ আমার পায়ে গিয়ে লাগে। এতে আমি গুরুতর আহত হই, তবে ঠিকভাবে কোপ লাগলে, আমার পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। আমি ঘটনাস্থল থেকে ফয়সালকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। যদি আমার কোপ লাগতো, তাহলে হয়তো ফয়সালকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে পারতাম না। তখন কি যে হতো মহান আল্লাহই ভালো জানেন। ওই দিনটির কথা আজও মনে পড়লে আমার শরীর শিহরে ওঠে।
এদিকে, ফয়সালের বাবা মো: ফজলুল হক ফালান বলেন, আন্দোলনে অংশ নিয়ে আজ আমার ছেলের এই দূরাবস্থা। এখনো আমার ছেলের শরীরে গুলি রয়েছে। সেই যন্ত্রণায় সে ছটফট করে। ব্যথার ওষুধ খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছে। আমি আর কতদিন তার পরিবার চালাব ? আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, আমার ছেলের উন্নত চিকিৎসা ও তার পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
এ বিষয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বকর সরকার বলেন, ছাত্রজনতার আন্দোলনে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাদের জন্য সরকারি বরাদ্দ এরই মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও যদি কোনো সরকারি সহায়তা আসে, সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ ওমর ফারুক। প্রকাশক কর্তৃক বি,এস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবী সার্কুলার রোড , ঢাকা- ১২০৩ থেকে মুদ্রিত ও ২ আর কে মিশন রোড (৫ম তলা) থেকে প্রকাশিত।
© All rights reserved © 2017 Alokito Kantho