সাভারঃ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও একাধিক জিডির তোয়াক্কা না করে আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া এলাকায় জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে তানজিলা টেক্সটাইল লিমিটেডের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানিটির জেনারেল ম্যানেজার আজাদের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী সীমানা প্রাচীর ভেঙে বৈধ মালিক বাংজিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেডের জমিতে জবরদখল চালায়।
বাংজিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের দাবি, তারা ২০১৩ ও ২০১৫ সালে যথাক্রমে দলিল নং ৮৫৬৯ ও ১৪৫০৯-এর মাধ্যমে ইমান আলী ও অনিল চন্দ্র গংয়ের কাছ থেকে ২৫.৭৫ শতাংশ জমি বৈধভাবে ক্রয় করে। সম্পত্তি রেকর্ডভুক্ত, নামজারি ও খাজনা পরিশোধিত। তবু দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটি দখলচেষ্টা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে দাবি করা হয়।
প্রজেক্ট ম্যানেজার রেজাউল করিম রাজু অভিযোগ করে বলেন, তানজিলা টেক্সটাইল কোনো কোম্পানি নয়, এটি একটি সুসংগঠিত ভূমিদস্যু চক্র। আমাদের প্রহরীকে মারধর, সাইনবোর্ড ভাঙচুর, প্রাণনাশের হুমকি—এসব কিছু করেছে আজাদের সন্ত্রাসী বাহিনী।
৬ জুলাই ২০২৫ তারিখে আজাদ নেতৃত্বাধীন প্রায় ৬০-৭০ জনের একটি দল সীমানা প্রাচীর ভেঙে জমি দখলের চেষ্টা, বালি দিয়ে ভরাট এবং পাইলিংয়ের কাজ শুরু করে। বাধা দিলে বাংজিনের কর্মকর্তাকে হুমকি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটি ২০২৫ সালে কোনো অনুমতি ছাড়াই ৩৩ কেভি ভোল্টেজের একটি বিদ্যুৎ লাইন উক্ত জমির উপর দিয়ে টেনে নেয়। এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর জেনারেল ম্যানেজার বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ নিয়ে আশুলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরিও হয়েছে (জিডি নং: ১৩৪১ ও ১৮০৪)। সর্বশেষ ১০ জুলাই ২০২৫ তারিখে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পারভেজ চৌধুরীর আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারায় একটি মামলা (মামলা নং: ১৯৬/২৫) দায়ের করা হয়।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন:
মনিরুজ্জামান শিমুল – ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তানজিলা টেক্সটাইল লিমিটেড,মোঃ আজাদ – জেনারেল ম্যানেজার, মোঃ হাফিজুর রহমান – ম্যানেজার, মোঃ রবিউল আলম রবি, স্থানীয় বাসিন্দা, মোঃ সমরাজ আল মামুন , মোঃ আক্তারুজ্জামান লস্কর জেনারেল ম্যানেজার, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানায়, তানজিলা টেক্সটাইলের নামে একাধিক জমি এভাবেই জবরদখল করে নেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটি এখন ‘ভূমিদস্যু’ নামে পরিচিত। আগে যেসব জমি ভরাট করতেন আজাদ, এখন তা করছেন তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে।
৩০ জুন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস্ ও ট্রাফিক, ঢাকা জেলা উত্তর) আরাফাতুল ইসলামের পক্ষ থেকে উভয় পক্ষকে নোটিশ করা হলেও বিবাদীরা হাজির হয়নি বলে জানা গেছে।
আশুলিয়া থানার এসআই মোঃ সাইফুল্লাহ আকন্দ জানান, আদালতের নির্দেশ পেয়েই আমরা ১০ জুলাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিই। কিন্তু একাধিকবার নিষেধ করার পরও তারা নির্দেশনা মানেনি। বিষয়টি আদালত অবমাননার শামিল। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মোঃ আক্তারুজ্জামান লস্কর বলেন, কারো আপত্তি থাকলে জমির ওপর দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাবে না। আপত্তির বিষয়টি সংযোগের পরে জানতে পেরেছি। জমির মালিক অফিসিয়াল দরখাস্ত দিলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংজিন কর্তৃপক্ষের দাবি আদালতের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর এবং দখলকারী ও তাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক প্রশাসন। অন্যথায় তারা আইনের শরণাপন্ন হয়ে আরও কঠোর আন্দোলনে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে তানজিলা টেক্সটাইল লিমিটেড কতৃপক্ষের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ফোন না ধরায় কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, আমরা আদালতকে প্রতিবেদন দিব যে তারা আদালতের আদেশ মানছেন না। ১৮৮ ধারায় আমরা ব্যবস্থা নেব।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ ওমর ফারুক। প্রকাশক কর্তৃক বি,এস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবী সার্কুলার রোড , ঢাকা- ১২০৩ থেকে মুদ্রিত ও ২ আর কে মিশন রোড (৫ম তলা) থেকে প্রকাশিত।
© All rights reserved © 2017 Alokito Kantho