০২:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকার শহরে সড়কের মহামারি ব্যাটারি চালিত রিকশা

 

ঢাকাঃরাজধানীর এমন কোনো রাস্তা নেই যে, ব্যাটারিচালিত রিকশা দখল করে রাখেনি। দেখে মনে হবে এটিই ঢাকার প্রধান পরিবহন। ব্যস্ততম সব সড়কেই যানজটের মূল কারণ তিন চাকার এই যান। ব্যাটারিচালিত রিকশা ট্রাফিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে ফেলছে। সড়কে মহামারি রূপ নিয়েছে নিষিদ্ধ এসব ব্যাটারি রিকশা। এসব নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। এমনকি ঢাকাসহ সারা দেশে কী পরিমাণ ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যানও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থার নেই। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনার ৩৬ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যাটারিচালিত রিকশা দায়ী।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এমন একটি যান ঢাকা শহরে চলার কোনো কারণ দেখি না। ব্যাটারি রিকশা ঢাকার মতো বড় শহরে চলার অনুমতি দেওয়া ঠিক হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি না দিলেও একটা মৌন সম্মতি কর্তৃপক্ষের রয়েছে, তা না হলে তো এসব রিকশা চলতে পারত না।

শুরুটা হয় চাঁদার জোরে: অনুমোদনহীন এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা মূলত চাঁদা দিয়ে চলাচল শুরু করে। এলাকাভেদে প্রতিটি রিকশাকে মাসে চাঁদা দিতে হয় এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। অবৈধ এই চাঁদা আদায়ের বৈধতা তৈরিতে চালু করা হয় ‘কার্ড সিস্টেম’। চাঁদার এই টাকা পুলিশ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা এবং শ্রমিক নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নেন।

একটি অসমর্থিত সূত্র বলছে, রাজধানীতে

একটি নির্দিষ্ট নিরাপদ মডেলে রূপান্তর করতে হবে। বৈদ্যুতিক মোটরযান নিবন্ধন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালায় এমন বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নীতিমালার তৃতীয় অধ্যায়ের ১২-এর ৮ ধারায় বলা হচ্ছে, বিদ্যমান অনিরাপদ ইলেকট্রিক মোটরযান কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিরাপদ মডেল অনুসরণ করে রূপান্তর করতে হবে। অন্যথায় চলাচল করতে পারবে না।

অবৈধ যানের নির্মাণ থেমে নেই: ব্যাটারিচালিত রিকশার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এই অবৈধ বাহনটি নির্মাণ ও সংযোজন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকা, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছোট ছোট ওয়ার্কশপে ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি ও রূপান্তর করা হচ্ছে।​

কামরাঙ্গীরচর এলাকার একটি কারখানার কারিগর জয়লান মিয়া (ছদ্মনাম) জানান, ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ করে একটি রিকশা তৈরি করা যায়। চাহিদা বেশি থাকায় রিকশার কাঠামো আগে থেকেই তৈরি রাখা হয়। অর্ডার পেলে ইঞ্জিন বসিয়ে দেওয়া হয়।

রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধে ওয়ার্কশপ ও চার্জিং পয়েন্ট বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আবার চলতি অর্থবছরে রিকশায় ব্যবহৃত ব্যাটারির ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। যেন ব্যাটারিচালিত রিকশাকে নিরুৎসাহিত করা যায়। তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

জাবি অ্যাডভেঞ্চার সোসাইটির নতুন কমিটি ঘোষণা জাবি প্রতিনিধি

ঢাকার শহরে সড়কের মহামারি ব্যাটারি চালিত রিকশা

প্রকাশের সময়ঃ ১০:৩১:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

 

ঢাকাঃরাজধানীর এমন কোনো রাস্তা নেই যে, ব্যাটারিচালিত রিকশা দখল করে রাখেনি। দেখে মনে হবে এটিই ঢাকার প্রধান পরিবহন। ব্যস্ততম সব সড়কেই যানজটের মূল কারণ তিন চাকার এই যান। ব্যাটারিচালিত রিকশা ট্রাফিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে ফেলছে। সড়কে মহামারি রূপ নিয়েছে নিষিদ্ধ এসব ব্যাটারি রিকশা। এসব নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। এমনকি ঢাকাসহ সারা দেশে কী পরিমাণ ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যানও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থার নেই। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনার ৩৬ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যাটারিচালিত রিকশা দায়ী।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এমন একটি যান ঢাকা শহরে চলার কোনো কারণ দেখি না। ব্যাটারি রিকশা ঢাকার মতো বড় শহরে চলার অনুমতি দেওয়া ঠিক হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি না দিলেও একটা মৌন সম্মতি কর্তৃপক্ষের রয়েছে, তা না হলে তো এসব রিকশা চলতে পারত না।

শুরুটা হয় চাঁদার জোরে: অনুমোদনহীন এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা মূলত চাঁদা দিয়ে চলাচল শুরু করে। এলাকাভেদে প্রতিটি রিকশাকে মাসে চাঁদা দিতে হয় এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। অবৈধ এই চাঁদা আদায়ের বৈধতা তৈরিতে চালু করা হয় ‘কার্ড সিস্টেম’। চাঁদার এই টাকা পুলিশ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা এবং শ্রমিক নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নেন।

একটি অসমর্থিত সূত্র বলছে, রাজধানীতে

একটি নির্দিষ্ট নিরাপদ মডেলে রূপান্তর করতে হবে। বৈদ্যুতিক মোটরযান নিবন্ধন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালায় এমন বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নীতিমালার তৃতীয় অধ্যায়ের ১২-এর ৮ ধারায় বলা হচ্ছে, বিদ্যমান অনিরাপদ ইলেকট্রিক মোটরযান কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিরাপদ মডেল অনুসরণ করে রূপান্তর করতে হবে। অন্যথায় চলাচল করতে পারবে না।

অবৈধ যানের নির্মাণ থেমে নেই: ব্যাটারিচালিত রিকশার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এই অবৈধ বাহনটি নির্মাণ ও সংযোজন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকা, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছোট ছোট ওয়ার্কশপে ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি ও রূপান্তর করা হচ্ছে।​

কামরাঙ্গীরচর এলাকার একটি কারখানার কারিগর জয়লান মিয়া (ছদ্মনাম) জানান, ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ করে একটি রিকশা তৈরি করা যায়। চাহিদা বেশি থাকায় রিকশার কাঠামো আগে থেকেই তৈরি রাখা হয়। অর্ডার পেলে ইঞ্জিন বসিয়ে দেওয়া হয়।

রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধে ওয়ার্কশপ ও চার্জিং পয়েন্ট বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আবার চলতি অর্থবছরে রিকশায় ব্যবহৃত ব্যাটারির ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। যেন ব্যাটারিচালিত রিকশাকে নিরুৎসাহিত করা যায়। তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না।