০১:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাবিতে জুলাই নারী দিবস পালিত, দায়সারা ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

  • জাবি প্রতিনিধিঃ
  • প্রকাশের সময়ঃ ০৯:৫০:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
  • ৪৭ বার পড়া হয়েছে

 

জাবিঃ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের সাহসী অংশগ্রহণ স্মরণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই উইমেন্স ডে পালিত হয়েছে। কর্মসূচিটি কোনোরকম দায়সারাভাবে আয়োজন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ সোমবার দুপুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে নতুন কলা ভবন এলাকা থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে সমাবেশ করেন নারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসী।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি স্মরণ করেন এবং একইসঙ্গে অনুষ্ঠানটির আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সমালোচনা করেন বক্তারা।

সমাবেশে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিয়া জামান নিকি বলেন, জুলাইয়ে মেয়েদের অবদানের একটি আয়োজন এতো কষ্ট (দাঁড়িয়ে) করে আমাদের শোনার কথা ছিলনা। কারণ আমি বিশ্বাস করি জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েরা শুধু জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলনের পথ দেখায়নি বরং সারা বাংলাদেশের আন্দোলনের পথ দেখিয়েছে। কারণ যখন বাংলাদেশের সবাই রুদ্ধ হয়ে গেছে, ছাত্রলীগের আক্রমণের পর সবাই থেমে গেছে তখন জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েরা হল থেকে বের হয়ে উপাচার্যের বাসভবনে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গেছে। আমরা দেখেছি, মেয়েরা হল থেকে বটি নিয়ে বের হয়েছে, শুকনা মরিচের গুড়া নিয়ে বের হয়েছে, এটা ছিল জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েদের অবদান। মেয়েরা হল থেকে তাদের বন্ধুদের জন্য রান্না করে নিয়ে গেছে, হল থেকে টুথপেষ্ট নিয়ে গেছে যাতে টিয়ারশেল লাগলে চোখ দিয়ে পানি বের হলে সেটা দিয়ে সাহায্য করতে পারে। তো এখানে (সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে) কয়েকজন মিলে চুপিচুপি, কোনোরকম আয়োজন ছাড়া, অনেকে জানেইনা এখানে একটা আজকে মেয়েদের আয়োজন হচ্ছে, এরকম জুলাই আসলে আমরা চাইনি৷ আমরা চেয়েছিলাম সমমর্যাদাপূর্ন একটা অবস্থা যেখানে আমরা ছেলেদের সমমর্যাদায় দাঁড়াব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহের আফরোজ শাওলী বলেন, আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করবো আপনারা ঢাল হয়ে আসুন, কারণ এখানে নাটক হচ্ছে, এখানে সার্কাস হচ্ছে। এই সার্কাস এর নাম হচ্ছে নারী দিবস উদযাপন। আমাদের মুখের উপর এই প্রসাশন এটা ছুড়ে মারছে। আপনারা জানেন আমরা নারী রা এই জুলাই তে কি কি দিয়েছি, কিন্তু আপনারা অনেক কিছু জানেন না, আপনারা জানেন না অনেক মা এই জুলাইতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছে, কারণ সে তার ছেলের লাশ শনাক্ত করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, আপনারা জুলাই এর পর কি করেছেন? আপনারা পদ ভাগাভাগি করেছেন। কিছু ছাত্র আর শিক্ষক মিলে পদ ভাগাভাগি করেছেন। আপনারা কিউ বিএনপিপন্থী, কেউ সফট আওয়ামীলী আবার কেউ জামায়াতপন্থী চেষ্টা করেছেন কিভাবে পদ নেওয়া যায় কিন্তু আপনারা একটিবারও চিন্তা করেননি যারা রাস্তায় নেমেছেন, যারা জুলাইকে ধারণ করে। আপনারা পারেননি সেই স্প্রিটকে বাঁচিয়ে রাখতে। আপনারা চান শুধু প্রমোশন। আপনারা দেখাতে চান আপনারা চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারছেন না। আপনারা জানেন না নারীরা কি কি ফেস করে এখানে আসছে, আরো কি কি ফেস করতে হবে। কাল এই জুলাই আবার নেমে আসবে, আবার নারীরা অগ্রণী ভুমিকা পালন করবে। আজকে আমি আহত হয়েছি কিন্তু আমার নাম নেই অথচ আমাকে সবাই দেখেছে। তারা এমন এমন মানুষের নাম রেখেছে যারা জুলাইতে না আহত হয়েছে, না কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমি এই প্রশাসন এবং রাষ্ট্র থেকে শুধু চেষ্টা না করা পেয়েছি। জুলাই এর এই সময়ে এসে একটি কথাই বলতে চাই এই রাষ্ট্র যতদিন থাকবে ততদিন আমরা সাধারণ মানুষ বারাবার নিপিড়ীত হবো এবং আমাদের মধ্যে বিভাজন টানা হবে।বকারণ এই রাষ্ট্র, এই প্রসাশন শুধু চায় আমাদের উপর ক্ষমতা প্রদর্শন করা। প্রত্যেকটা নারী যে স্প্রিরিটকে ধারণ করে সেটাই জুলাই এর স্প্রিরিট এর অর্ন্তনিহিত জিনিস। প্রত্যেকটা নারী যে জীবন ধারণ করে, সেটাই জুলাই, সেটাই একাত্তর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, তাড়াহুড়ো করে কোনো রকম করে, এই ধরনের একটা অনুষ্ঠান করায় আমার নারী শিক্ষার্থীরা যে সমালোচনা করেছে আমি সেটা গ্রহণ করে নিলাম। একইসঙ্গে আমি মনে করি, এধরণের প্রোগ্রাম করে আমরা শেষ করি তাহলে ২৪ এর যে অর্জন সেটা শেষ হয়ে যাবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের যে অবদান এবং সারাদেশে সেটা যে প্রভাব বিস্তার করেছে তা সসম্মানে স্মরণ করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সবচাইতে সম্ভাব্যপর বড় প্রোগ্রাম করার পরিকল্পনা গ্রহণ করব। আমরা খুব ভালো করেই জানি, কিভাবে আমাদের নারীরা এবং শিশুরা সেদিন পথ দেখিয়েছে।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

ফরিদপুরের মধুখালীতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে ২৫ আসামি গ্রেপ্তার,

জাবিতে জুলাই নারী দিবস পালিত, দায়সারা ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

প্রকাশের সময়ঃ ০৯:৫০:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

 

জাবিঃ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের সাহসী অংশগ্রহণ স্মরণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই উইমেন্স ডে পালিত হয়েছে। কর্মসূচিটি কোনোরকম দায়সারাভাবে আয়োজন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ সোমবার দুপুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে নতুন কলা ভবন এলাকা থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে সমাবেশ করেন নারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসী।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি স্মরণ করেন এবং একইসঙ্গে অনুষ্ঠানটির আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সমালোচনা করেন বক্তারা।

সমাবেশে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিয়া জামান নিকি বলেন, জুলাইয়ে মেয়েদের অবদানের একটি আয়োজন এতো কষ্ট (দাঁড়িয়ে) করে আমাদের শোনার কথা ছিলনা। কারণ আমি বিশ্বাস করি জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েরা শুধু জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলনের পথ দেখায়নি বরং সারা বাংলাদেশের আন্দোলনের পথ দেখিয়েছে। কারণ যখন বাংলাদেশের সবাই রুদ্ধ হয়ে গেছে, ছাত্রলীগের আক্রমণের পর সবাই থেমে গেছে তখন জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েরা হল থেকে বের হয়ে উপাচার্যের বাসভবনে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গেছে। আমরা দেখেছি, মেয়েরা হল থেকে বটি নিয়ে বের হয়েছে, শুকনা মরিচের গুড়া নিয়ে বের হয়েছে, এটা ছিল জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েদের অবদান। মেয়েরা হল থেকে তাদের বন্ধুদের জন্য রান্না করে নিয়ে গেছে, হল থেকে টুথপেষ্ট নিয়ে গেছে যাতে টিয়ারশেল লাগলে চোখ দিয়ে পানি বের হলে সেটা দিয়ে সাহায্য করতে পারে। তো এখানে (সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে) কয়েকজন মিলে চুপিচুপি, কোনোরকম আয়োজন ছাড়া, অনেকে জানেইনা এখানে একটা আজকে মেয়েদের আয়োজন হচ্ছে, এরকম জুলাই আসলে আমরা চাইনি৷ আমরা চেয়েছিলাম সমমর্যাদাপূর্ন একটা অবস্থা যেখানে আমরা ছেলেদের সমমর্যাদায় দাঁড়াব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহের আফরোজ শাওলী বলেন, আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করবো আপনারা ঢাল হয়ে আসুন, কারণ এখানে নাটক হচ্ছে, এখানে সার্কাস হচ্ছে। এই সার্কাস এর নাম হচ্ছে নারী দিবস উদযাপন। আমাদের মুখের উপর এই প্রসাশন এটা ছুড়ে মারছে। আপনারা জানেন আমরা নারী রা এই জুলাই তে কি কি দিয়েছি, কিন্তু আপনারা অনেক কিছু জানেন না, আপনারা জানেন না অনেক মা এই জুলাইতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছে, কারণ সে তার ছেলের লাশ শনাক্ত করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, আপনারা জুলাই এর পর কি করেছেন? আপনারা পদ ভাগাভাগি করেছেন। কিছু ছাত্র আর শিক্ষক মিলে পদ ভাগাভাগি করেছেন। আপনারা কিউ বিএনপিপন্থী, কেউ সফট আওয়ামীলী আবার কেউ জামায়াতপন্থী চেষ্টা করেছেন কিভাবে পদ নেওয়া যায় কিন্তু আপনারা একটিবারও চিন্তা করেননি যারা রাস্তায় নেমেছেন, যারা জুলাইকে ধারণ করে। আপনারা পারেননি সেই স্প্রিটকে বাঁচিয়ে রাখতে। আপনারা চান শুধু প্রমোশন। আপনারা দেখাতে চান আপনারা চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারছেন না। আপনারা জানেন না নারীরা কি কি ফেস করে এখানে আসছে, আরো কি কি ফেস করতে হবে। কাল এই জুলাই আবার নেমে আসবে, আবার নারীরা অগ্রণী ভুমিকা পালন করবে। আজকে আমি আহত হয়েছি কিন্তু আমার নাম নেই অথচ আমাকে সবাই দেখেছে। তারা এমন এমন মানুষের নাম রেখেছে যারা জুলাইতে না আহত হয়েছে, না কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমি এই প্রশাসন এবং রাষ্ট্র থেকে শুধু চেষ্টা না করা পেয়েছি। জুলাই এর এই সময়ে এসে একটি কথাই বলতে চাই এই রাষ্ট্র যতদিন থাকবে ততদিন আমরা সাধারণ মানুষ বারাবার নিপিড়ীত হবো এবং আমাদের মধ্যে বিভাজন টানা হবে।বকারণ এই রাষ্ট্র, এই প্রসাশন শুধু চায় আমাদের উপর ক্ষমতা প্রদর্শন করা। প্রত্যেকটা নারী যে স্প্রিরিটকে ধারণ করে সেটাই জুলাই এর স্প্রিরিট এর অর্ন্তনিহিত জিনিস। প্রত্যেকটা নারী যে জীবন ধারণ করে, সেটাই জুলাই, সেটাই একাত্তর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, তাড়াহুড়ো করে কোনো রকম করে, এই ধরনের একটা অনুষ্ঠান করায় আমার নারী শিক্ষার্থীরা যে সমালোচনা করেছে আমি সেটা গ্রহণ করে নিলাম। একইসঙ্গে আমি মনে করি, এধরণের প্রোগ্রাম করে আমরা শেষ করি তাহলে ২৪ এর যে অর্জন সেটা শেষ হয়ে যাবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের যে অবদান এবং সারাদেশে সেটা যে প্রভাব বিস্তার করেছে তা সসম্মানে স্মরণ করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সবচাইতে সম্ভাব্যপর বড় প্রোগ্রাম করার পরিকল্পনা গ্রহণ করব। আমরা খুব ভালো করেই জানি, কিভাবে আমাদের নারীরা এবং শিশুরা সেদিন পথ দেখিয়েছে।