০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মানবহত্যা মহাপাপ

ঢাকাঃ প্রিয় পাঠকবৃন্দ, মহাবিশ্বের এক ও অদ্বিতীয় অধিপতি মহান আল্লাহ তা’আলার দরবারে লাখো-কোটি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি যিনি আমাদেরকে মানুষ বানিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।

আমরা সৌভাগ্যবান যে আমরা মানুষ হয়ে জন্মেছি মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআনুল কারীমের মহান আল্লাহ পাক এরশাদ করেন-নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি,আমি তাদেরকে স্থলে ও জ্বলে চলাচলের বাহন দান করেছি তাদেরকে উত্তম জীবনওকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক শ্রেষ্ঠবস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (বনি ইসরাইল, আয়াত ৭০) আল্লাহ তাআলা আদম সন্তানকে বিভিন্ন দিক দিয়ে এমন সব বৈশিষ্ট্য দান করেছেন, যেগুলো অন্যান্য সৃষ্টি জীবের মধ্যে নেই। সুশ্রী চেহারা সুষম দেহ সুষম প্রকৃতি এগুলো মানুষকে দান করা হয়েছে। যা অন্য কোন জীবের মধ্যে নেই। এছাড়া বুদ্ধি ও চেতনায় মানুষকে বিশেষ স্বতন্ত্র দান করা হয়েছে। আল্লাহ পাক মানুষকে শ্রেষ্ঠ বস্তুর সংমিশ্রনে বিভিন্ন শিল্প-দ্রব্য প্রস্তুত করার শক্তি দিয়েছেন। সেগুলো মানুষের বসবাস চলাফেরায় সাহায্য পোশাক পরিচ্ছদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শুধু তাই নয় বাকশক্তি ও পরস্পরিক বোঝাপড়ার যে নৈপুণ্য মানুষ লাভ করেছে, তা অন্য কোন প্রাণীর মধ্যে নেই। ইঙ্গিত এর মাধ্যমে মনের কথা অন্যকে বলে দেওয়া, লেখা ও চিঠির মাধ্যমে গোপনভেদ অর্জন পর্যন্ত পৌঁছানো এসব মানুষেরই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এখানেই শেষ নয় হাতের আঙ্গুলি দ্বারা আহার করাও মানুষের বিশেষ গুণ। মানুষ ব্যতীত সব জীব জন্তু মুখে আহার্য গ্রহণ করে। বিভিন্ন জিনিসের সংমিশ্রনে খাদ্যবস্তুকে সুস্বাদু করা ও মানুষের কাজ। অনন্য সব প্রাণী একক বস্ত আহার করে। বিবেক বুদ্ধি ও চেতনাশক্তি মানুষের সর্ব প্রধান শ্রেষ্ঠত্ব।

* মানুষ্যত্বহীন মানুষ পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট: কিন্তু যারা মানুষের গুণাবলী হারিয়ে ফেলে, শুধু জন্মগত মানুষ হয়েই বেঁচে থাকে, তারা ফেরেশতাদের চাইতে উত্তম হওয়া তো দূরের কথা,আসল লক্ষ্য সাফল্য ও যুক্তির দিক দিয়ে জন্তু-জানোয়ারের চাইতে অধম। এদের সম্পর্কে কোরআনের ফয়সালা হল-আর অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষকে। তাদের রয়েছে অন্তর তা দিয়ে তারা বোঝে না,তাদের রয়েছে চোখ তা দিয়ে তারা দেখে না, তাদের রয়েছে কান তা দিয়ে তারা শোনে না, তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত বরং এর চেয়েও নিকৃষ্ট, তারাই হচ্ছে গাফেল। (আরাফ আয়াত-১৭৯) কতিপয় মানুষ সৃষ্টির সেরা থেকে নেমে জন্তু-জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে গেছে। কি আশ্চর্য নিজের মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে হত্যা করে। একটি হত্যার ঘটনা নিয়ে যখন বিবেকবান মানুষের হৃদয় ব্যতীত হয় এবং মিডিয়ায় লেখালেখি হয়, তার কোন কুলকিনারা না হতেই আরো হত্যার ঘটনা ঘটে। এ থেকে এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, অপরাধীরা এখন আর আইনকে তোয়াক্কা করে না। অপরাধীরা এতটাই বেপরোয়া যে, তাদের আক্রমণ থেকে গর্ভের শিশু নিরাপদ নয়। দশটা কুকুর মিলে একটা কুকুরকে হত্যা করলে সেটা মেনে নেওয়া যায়, কারণ ওরা পশু ওদের স্বভাব হিংস্র ।কিন্তু দশ জন মানুষ মিলে একজন মানুষকে হত্যা করলে সেটা মেনে নেওয়া যায় না, কারণ মানুষ সৃষ্টির সেরা, মানুষের হৃদয়ে আছে মায়া মমতা এবং স্নেহ ভালোবাসা। তথাপি মানুষের ঘরে জন্মগ্রহণ করা যে প্রাণীগুলো মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে পৈচাসিক ঘটনা ঘটায়, তাদের কি মানুষ বলা যায়? সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মিটফোর্ডের একটি ঘটনা যা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে আঘাত করেছে, এমনিভাবে ময়মনসিংহে মা সহ দুই সন্তানকে জবেহ করে হত্যা করা হয়েছে যেগুলো মানুষের হৃদয়ে আঘাত করেছে। পবিত্র কোরআনে এজন্য বলা হয়েছে -তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং এর চেয়েও নিকৃষ্টতর।

* একজন মানুষ হত্যা করা মানে পুরো জাতিকে হত্যা করা:-অন্যায় ভাবে কোন একজন মানুষকে হত্যা করা পুরো জাতিকে হত্যা করার মতো অপরাধ। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন-এ কারণে আমি বনি ইসরাইলদের ওপর এই হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা জমিনে ফাঁসার সৃষ্টি করা ছাড়া (মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার যোগ্য অপরাধ ব্যতীত, অন্যায় ভাবে) যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করলো। আর যে তাকে রক্ষা করলো সে যেন সব মানুষকে রক্ষা কর। আর অবশ্যই তাদের নিকট আমার রসুলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও এরপর জমিনে তাদের অনেকে অবশ্যই সীমালংঘনকারী। (মায়েদা আয়াত-৩২)

* জুলুম করা হারাম:-সমাজের বিভিন্ন জায়গায় মনের অজান্তে ছোট বড় অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ মানুষের উপরে জুলুম করেই চলছে, জুলুম কেয়ামতের দিন ভীষণ অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-সেদিন জালেমদের ওজোর আপত্তি কোন উপকারে আসবে না। তাদের জন্য থাকবে অভিশাপ এবং তাদের জন্য থাকবে নিকৃষ্ট গৃহ। (মুমিন আয়াত-৫২) আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন-জালিমদের জন্য কোন বন্ধু নেই এবং কোন সুপারিশকারী ও নেই যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে। (মুমিন আয়াত ১৮) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা: বর্ণনা করেছেন রাসুল সা: এরশাদ করেছেন-জুলুম কেয়ামতের দিন জুলুম কারীর জন্য অন্ধকার রূপ ধারণ করবে। (বুখারি হাদিস ২৩৮৩)

* অন্যায় ভাবে হত্যা করা হারাম:-মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন দরিদ্রতার কারণে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। আমি তোমাদেরকে রিযিক দিই এবং তাদেরও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না, প্রকাশ্য হোক বা গোপনে। আর অবৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না যা আল্লাহ হারাম। এগুলো আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে তোমরা অনুধাবন কর। (আনআম আয়াত ১৫১)

* তিনটি কারণ ছাড়া কোন মানুষকে হত্যা করা জায়েজ নয়। ১-বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও ব্যভিচারে লিপ্ত হলে। ২-অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করলে তার কিসাস বা বদলা হিসেবে। ৩-সত্য ধর্ম ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে গেলে। বিনা কারণে মুসলমানকে হত্যা করা যেমন হারাম,তেমনি ভাবে এমন কোন অমুসলিমকে হত্যা করাও হারাম, যে কোনো ইসলামী রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন মান্য করে বসবাস করে কিংবা যার সাথে মুসলমানের চুক্তি থাকে।

* হত্যাকারীর ঠিকানা জাহান্নাম:-ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মানুষকে অন্যায় ভাবে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম। আল্লাহ তাআলা বলেন-যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আর আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হবেন, তাকে লানত করবেন এবং তার জন্য ভয়াবহ শাস্তির প্রস্তুত করে রাখবেন।

* সর্বপ্রথম হত্যার বিচার হবে:-মানবতার মুক্তির দিশারী মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন-কেয়ামতের দিবসে মানুষের মাঝে সর্বপ্রথম হত্যার বিচার করা হবে ।(বুখারী হাদিস ৬২৮৪) যারা অন্যায় ভাবে মানুষ হত্যা করে তাদের কি নিজের মৃত্যুর ভয় নেই? নাকি ভেবে নিয়েছে তারা কখনো মরবে না? ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুনিয়ার আদালত থেকে হয়তো মুক্তি পাওয়া যাবে কিন্তু পরকালে আল্লাহর আদালতে কি হবে? খুণীর হাত পা শয়ং খুনের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে সাক্ষী দিবে। আল্লাহ তাআলা বলেন আজ আমি তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেব। তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে যা তারা অর্জন করত ।(ইয়াসিন আয়াত-৬৫)

* দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিকল্প নেই:-মানুষ যখন অমানুষ হয়ে যায় তখন নীতি কথা শুনে কাজ হয় না. বরং কঠিন শাস্তি কার্যকর করতে হয়। ওই সব নরপশুর বেলায়ও তাই করতে হবে। অপরাধীরা যে দলের যে মতের যে ধর্মের যে বর্ণের হোক না কেন, প্রকৃত অপরাধীদের সনাক্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা অতি জরুরী। কাজেই ন্যায় বিচার এবং সঠিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। মানবিকতার দাবি নিয়ে জনগণকে গর্জে উঠতে হবে। সত্য ও সঠিক তথ্য প্রকাশের মিডিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে, এভাবেই সমাজ থেকে অন্যায় জুলুম নির্মূল হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ

* মুফতি আলাউদ্দীন আল আজাদ , খতিব- কোনাবাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ,গাজীপুর।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

দেবহাটা জলবদ্ধতা নিরাসনে অবৈধ নেট,পাটা, অপসারণ করলেন নির্বাহী কর্মকর্তা

মানবহত্যা মহাপাপ

প্রকাশের সময়ঃ ০৯:২০:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

ঢাকাঃ প্রিয় পাঠকবৃন্দ, মহাবিশ্বের এক ও অদ্বিতীয় অধিপতি মহান আল্লাহ তা’আলার দরবারে লাখো-কোটি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি যিনি আমাদেরকে মানুষ বানিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।

আমরা সৌভাগ্যবান যে আমরা মানুষ হয়ে জন্মেছি মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআনুল কারীমের মহান আল্লাহ পাক এরশাদ করেন-নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি,আমি তাদেরকে স্থলে ও জ্বলে চলাচলের বাহন দান করেছি তাদেরকে উত্তম জীবনওকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক শ্রেষ্ঠবস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (বনি ইসরাইল, আয়াত ৭০) আল্লাহ তাআলা আদম সন্তানকে বিভিন্ন দিক দিয়ে এমন সব বৈশিষ্ট্য দান করেছেন, যেগুলো অন্যান্য সৃষ্টি জীবের মধ্যে নেই। সুশ্রী চেহারা সুষম দেহ সুষম প্রকৃতি এগুলো মানুষকে দান করা হয়েছে। যা অন্য কোন জীবের মধ্যে নেই। এছাড়া বুদ্ধি ও চেতনায় মানুষকে বিশেষ স্বতন্ত্র দান করা হয়েছে। আল্লাহ পাক মানুষকে শ্রেষ্ঠ বস্তুর সংমিশ্রনে বিভিন্ন শিল্প-দ্রব্য প্রস্তুত করার শক্তি দিয়েছেন। সেগুলো মানুষের বসবাস চলাফেরায় সাহায্য পোশাক পরিচ্ছদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শুধু তাই নয় বাকশক্তি ও পরস্পরিক বোঝাপড়ার যে নৈপুণ্য মানুষ লাভ করেছে, তা অন্য কোন প্রাণীর মধ্যে নেই। ইঙ্গিত এর মাধ্যমে মনের কথা অন্যকে বলে দেওয়া, লেখা ও চিঠির মাধ্যমে গোপনভেদ অর্জন পর্যন্ত পৌঁছানো এসব মানুষেরই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এখানেই শেষ নয় হাতের আঙ্গুলি দ্বারা আহার করাও মানুষের বিশেষ গুণ। মানুষ ব্যতীত সব জীব জন্তু মুখে আহার্য গ্রহণ করে। বিভিন্ন জিনিসের সংমিশ্রনে খাদ্যবস্তুকে সুস্বাদু করা ও মানুষের কাজ। অনন্য সব প্রাণী একক বস্ত আহার করে। বিবেক বুদ্ধি ও চেতনাশক্তি মানুষের সর্ব প্রধান শ্রেষ্ঠত্ব।

* মানুষ্যত্বহীন মানুষ পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট: কিন্তু যারা মানুষের গুণাবলী হারিয়ে ফেলে, শুধু জন্মগত মানুষ হয়েই বেঁচে থাকে, তারা ফেরেশতাদের চাইতে উত্তম হওয়া তো দূরের কথা,আসল লক্ষ্য সাফল্য ও যুক্তির দিক দিয়ে জন্তু-জানোয়ারের চাইতে অধম। এদের সম্পর্কে কোরআনের ফয়সালা হল-আর অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষকে। তাদের রয়েছে অন্তর তা দিয়ে তারা বোঝে না,তাদের রয়েছে চোখ তা দিয়ে তারা দেখে না, তাদের রয়েছে কান তা দিয়ে তারা শোনে না, তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত বরং এর চেয়েও নিকৃষ্ট, তারাই হচ্ছে গাফেল। (আরাফ আয়াত-১৭৯) কতিপয় মানুষ সৃষ্টির সেরা থেকে নেমে জন্তু-জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে গেছে। কি আশ্চর্য নিজের মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে হত্যা করে। একটি হত্যার ঘটনা নিয়ে যখন বিবেকবান মানুষের হৃদয় ব্যতীত হয় এবং মিডিয়ায় লেখালেখি হয়, তার কোন কুলকিনারা না হতেই আরো হত্যার ঘটনা ঘটে। এ থেকে এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, অপরাধীরা এখন আর আইনকে তোয়াক্কা করে না। অপরাধীরা এতটাই বেপরোয়া যে, তাদের আক্রমণ থেকে গর্ভের শিশু নিরাপদ নয়। দশটা কুকুর মিলে একটা কুকুরকে হত্যা করলে সেটা মেনে নেওয়া যায়, কারণ ওরা পশু ওদের স্বভাব হিংস্র ।কিন্তু দশ জন মানুষ মিলে একজন মানুষকে হত্যা করলে সেটা মেনে নেওয়া যায় না, কারণ মানুষ সৃষ্টির সেরা, মানুষের হৃদয়ে আছে মায়া মমতা এবং স্নেহ ভালোবাসা। তথাপি মানুষের ঘরে জন্মগ্রহণ করা যে প্রাণীগুলো মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে পৈচাসিক ঘটনা ঘটায়, তাদের কি মানুষ বলা যায়? সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মিটফোর্ডের একটি ঘটনা যা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে আঘাত করেছে, এমনিভাবে ময়মনসিংহে মা সহ দুই সন্তানকে জবেহ করে হত্যা করা হয়েছে যেগুলো মানুষের হৃদয়ে আঘাত করেছে। পবিত্র কোরআনে এজন্য বলা হয়েছে -তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং এর চেয়েও নিকৃষ্টতর।

* একজন মানুষ হত্যা করা মানে পুরো জাতিকে হত্যা করা:-অন্যায় ভাবে কোন একজন মানুষকে হত্যা করা পুরো জাতিকে হত্যা করার মতো অপরাধ। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন-এ কারণে আমি বনি ইসরাইলদের ওপর এই হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা জমিনে ফাঁসার সৃষ্টি করা ছাড়া (মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার যোগ্য অপরাধ ব্যতীত, অন্যায় ভাবে) যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করলো। আর যে তাকে রক্ষা করলো সে যেন সব মানুষকে রক্ষা কর। আর অবশ্যই তাদের নিকট আমার রসুলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও এরপর জমিনে তাদের অনেকে অবশ্যই সীমালংঘনকারী। (মায়েদা আয়াত-৩২)

* জুলুম করা হারাম:-সমাজের বিভিন্ন জায়গায় মনের অজান্তে ছোট বড় অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ মানুষের উপরে জুলুম করেই চলছে, জুলুম কেয়ামতের দিন ভীষণ অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-সেদিন জালেমদের ওজোর আপত্তি কোন উপকারে আসবে না। তাদের জন্য থাকবে অভিশাপ এবং তাদের জন্য থাকবে নিকৃষ্ট গৃহ। (মুমিন আয়াত-৫২) আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন-জালিমদের জন্য কোন বন্ধু নেই এবং কোন সুপারিশকারী ও নেই যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে। (মুমিন আয়াত ১৮) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা: বর্ণনা করেছেন রাসুল সা: এরশাদ করেছেন-জুলুম কেয়ামতের দিন জুলুম কারীর জন্য অন্ধকার রূপ ধারণ করবে। (বুখারি হাদিস ২৩৮৩)

* অন্যায় ভাবে হত্যা করা হারাম:-মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন দরিদ্রতার কারণে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। আমি তোমাদেরকে রিযিক দিই এবং তাদেরও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না, প্রকাশ্য হোক বা গোপনে। আর অবৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না যা আল্লাহ হারাম। এগুলো আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে তোমরা অনুধাবন কর। (আনআম আয়াত ১৫১)

* তিনটি কারণ ছাড়া কোন মানুষকে হত্যা করা জায়েজ নয়। ১-বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও ব্যভিচারে লিপ্ত হলে। ২-অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করলে তার কিসাস বা বদলা হিসেবে। ৩-সত্য ধর্ম ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে গেলে। বিনা কারণে মুসলমানকে হত্যা করা যেমন হারাম,তেমনি ভাবে এমন কোন অমুসলিমকে হত্যা করাও হারাম, যে কোনো ইসলামী রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন মান্য করে বসবাস করে কিংবা যার সাথে মুসলমানের চুক্তি থাকে।

* হত্যাকারীর ঠিকানা জাহান্নাম:-ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মানুষকে অন্যায় ভাবে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম। আল্লাহ তাআলা বলেন-যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আর আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হবেন, তাকে লানত করবেন এবং তার জন্য ভয়াবহ শাস্তির প্রস্তুত করে রাখবেন।

* সর্বপ্রথম হত্যার বিচার হবে:-মানবতার মুক্তির দিশারী মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন-কেয়ামতের দিবসে মানুষের মাঝে সর্বপ্রথম হত্যার বিচার করা হবে ।(বুখারী হাদিস ৬২৮৪) যারা অন্যায় ভাবে মানুষ হত্যা করে তাদের কি নিজের মৃত্যুর ভয় নেই? নাকি ভেবে নিয়েছে তারা কখনো মরবে না? ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুনিয়ার আদালত থেকে হয়তো মুক্তি পাওয়া যাবে কিন্তু পরকালে আল্লাহর আদালতে কি হবে? খুণীর হাত পা শয়ং খুনের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে সাক্ষী দিবে। আল্লাহ তাআলা বলেন আজ আমি তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেব। তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে যা তারা অর্জন করত ।(ইয়াসিন আয়াত-৬৫)

* দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিকল্প নেই:-মানুষ যখন অমানুষ হয়ে যায় তখন নীতি কথা শুনে কাজ হয় না. বরং কঠিন শাস্তি কার্যকর করতে হয়। ওই সব নরপশুর বেলায়ও তাই করতে হবে। অপরাধীরা যে দলের যে মতের যে ধর্মের যে বর্ণের হোক না কেন, প্রকৃত অপরাধীদের সনাক্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা অতি জরুরী। কাজেই ন্যায় বিচার এবং সঠিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। মানবিকতার দাবি নিয়ে জনগণকে গর্জে উঠতে হবে। সত্য ও সঠিক তথ্য প্রকাশের মিডিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে, এভাবেই সমাজ থেকে অন্যায় জুলুম নির্মূল হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ

* মুফতি আলাউদ্দীন আল আজাদ , খতিব- কোনাবাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ,গাজীপুর।