০৯:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আগুনে পুড়ে মৃতরা যে কারণে শহীদের মর্যাদা লাভ করেন

 

✍️মাওলানা শেখ মিলাদ হোসাইন সিদ্দিকীঃ“রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে আঘাত হানে। এ ঘটনায় বহু কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের পরিবার-পরিজনের মর্মবেদনা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে ইসলামে এমন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।

★শাহাদাতের মর্যাদা…

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে শহীদ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
সুনানে
ইবনে মাজাহ ২৮০৩ নং হাদিসে এসেছে…

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَابِرِ بْنِ عَتِيكٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّهُ مَرِضَ فَأَتَاهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَعُودُهُ فَقَالَ قَائِلٌ مِنْ أَهْلِهِ إِنْ كُنَّا لَنَرْجُو أَنْ تَكُونَ وَفَاتُهُ قَتْلَ شَهَادَةٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ شُهَدَاءَ أُمَّتِي إِذًا لَقَلِيلٌ الْقَتْلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ شَهَادَةٌ وَالْمَطْعُونُ شَهَادَةٌ وَالْمَرْأَةُ تَمُوتُ بِجُمْعٍ شَهَادَةٌ – يَعْنِي الْحَامِلَ – وَالْغَرِقُ وَالْحَرِقُ وَالْمَجْنُوبُ – يَعْنِي ذَاتَ الْجَنْبِ – شَهَادَةٌ

‏জাবির ইবনে আতীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে আসেন। জাবির (রাঃ) এর পরিবারের কেউ বললো, আমরা আশা করতাম যে, সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তাহলে আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারীতে নিহত হলে শহীদ, যে মহিলা গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয়রোগে মৃত্যুবরণকারী শহীদ।

তবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের মতো এ রকম দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের গোসল ছাড়া সমাহিত করা হবে না। আগুনে পুড়ে এবং অন্যান্য দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের স্বাভাবিক নিয়মে গোসল করানো হবে, তাদের কাফন, জানাজা ও দাফনও স্বাভাবিক নিয়মেই করতে হবে।

আগুনে পুড়ে এবং উল্লিখিত রোগ ও দুর্ঘটনাগুলোর কারণে মৃত্যু হলে শহীদের মর্যাদা লাভ করার কারণ হলো, এসব মৃত্যু অত্যন্ত কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক, এই যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করে তাদেরকে শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

★ইমাম নববি (রহ.) বলেন, আলেমরা বলেছেন, এই ধরনের মৃত্যুকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ও দয়া থেকে; কারণ এই মৃত্যুগুলো তীব্র কষ্টে ও যন্ত্রণার। (শরহু মুসলিম লিননববি: ১৩/৬৩)

ইবনুত তীন (রহ.) বলেন, এগুলো অনেক কষ্টের মৃত্যু। আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির ওপর অনুগ্রহ করে এগুলোকে তাদের জন্য গুনাহ মাফ ও সওয়াব বৃদ্ধির মাধ্যম বনিয়েছেন এবং এর মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শহীদের মর্যাদায় উন্নীত করবেন। (ফাতহুল বারি: ৬/৪৪)

★পরিশেষে বলবো…
আল্লাহ তাআলা বিমান দুর্ঘটনা ও আগুনে নিহত সকল মুসলিম ভাই-বোনকে শহীদের মর্যাদা দান করুন। আহতদের দ্রুত আরোগ্য দান করুন। তাদের পরিবার-পরিজনকে ধৈর্য ধারণের তাওফিক দিন এবং উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

কালিগঞ্জে মৎস্যঘের জবরদখল ও লুটপাটের প্রতিকার দাবি

আগুনে পুড়ে মৃতরা যে কারণে শহীদের মর্যাদা লাভ করেন

প্রকাশের সময়ঃ ০১:২০:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

 

✍️মাওলানা শেখ মিলাদ হোসাইন সিদ্দিকীঃ“রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে আঘাত হানে। এ ঘটনায় বহু কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের পরিবার-পরিজনের মর্মবেদনা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে ইসলামে এমন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।

★শাহাদাতের মর্যাদা…

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে শহীদ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
সুনানে
ইবনে মাজাহ ২৮০৩ নং হাদিসে এসেছে…

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَابِرِ بْنِ عَتِيكٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّهُ مَرِضَ فَأَتَاهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَعُودُهُ فَقَالَ قَائِلٌ مِنْ أَهْلِهِ إِنْ كُنَّا لَنَرْجُو أَنْ تَكُونَ وَفَاتُهُ قَتْلَ شَهَادَةٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ شُهَدَاءَ أُمَّتِي إِذًا لَقَلِيلٌ الْقَتْلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ شَهَادَةٌ وَالْمَطْعُونُ شَهَادَةٌ وَالْمَرْأَةُ تَمُوتُ بِجُمْعٍ شَهَادَةٌ – يَعْنِي الْحَامِلَ – وَالْغَرِقُ وَالْحَرِقُ وَالْمَجْنُوبُ – يَعْنِي ذَاتَ الْجَنْبِ – شَهَادَةٌ

‏জাবির ইবনে আতীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে আসেন। জাবির (রাঃ) এর পরিবারের কেউ বললো, আমরা আশা করতাম যে, সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তাহলে আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারীতে নিহত হলে শহীদ, যে মহিলা গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয়রোগে মৃত্যুবরণকারী শহীদ।

তবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের মতো এ রকম দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের গোসল ছাড়া সমাহিত করা হবে না। আগুনে পুড়ে এবং অন্যান্য দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের স্বাভাবিক নিয়মে গোসল করানো হবে, তাদের কাফন, জানাজা ও দাফনও স্বাভাবিক নিয়মেই করতে হবে।

আগুনে পুড়ে এবং উল্লিখিত রোগ ও দুর্ঘটনাগুলোর কারণে মৃত্যু হলে শহীদের মর্যাদা লাভ করার কারণ হলো, এসব মৃত্যু অত্যন্ত কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক, এই যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করে তাদেরকে শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

★ইমাম নববি (রহ.) বলেন, আলেমরা বলেছেন, এই ধরনের মৃত্যুকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ও দয়া থেকে; কারণ এই মৃত্যুগুলো তীব্র কষ্টে ও যন্ত্রণার। (শরহু মুসলিম লিননববি: ১৩/৬৩)

ইবনুত তীন (রহ.) বলেন, এগুলো অনেক কষ্টের মৃত্যু। আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির ওপর অনুগ্রহ করে এগুলোকে তাদের জন্য গুনাহ মাফ ও সওয়াব বৃদ্ধির মাধ্যম বনিয়েছেন এবং এর মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শহীদের মর্যাদায় উন্নীত করবেন। (ফাতহুল বারি: ৬/৪৪)

★পরিশেষে বলবো…
আল্লাহ তাআলা বিমান দুর্ঘটনা ও আগুনে নিহত সকল মুসলিম ভাই-বোনকে শহীদের মর্যাদা দান করুন। আহতদের দ্রুত আরোগ্য দান করুন। তাদের পরিবার-পরিজনকে ধৈর্য ধারণের তাওফিক দিন এবং উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন।