০৬:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আশ্চর্য একটি ঘটনা

মুফতি আলাউদ্দীন আল আজাদঃ হযরত ইকরিমা ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণনা করেন, ইয়ামেনে ইয়া’লা নামে একজন লোক ছিল। সে ছিল মুশরিক তার গতর ঢাকার মতো একটি চাদর ছাড়া দুনিয়াতে আর কিছুই ছিল না। সে দিনের বেলায় গাছের ছায়ায় রাতের বেলায় পাথরের পাশে কুকুরের গর্ত করে থাকার ন্যায় থাকতো।
অতপর সে শুনতে পেল প্রিয় নবী আগমন করেছেন। তখন সে ছিল যুবক। কখনো এখানে থাকতো কখনো ওখানে থাকতো। সে রাসুল সা. এর দরবারে এসে ইসলাম গ্রহণ করে সুফফার অধিবাসীদের সাথে থাকতে লাগলো। সে তাদের সাথে কয়েকটি খেজুর বা যবের এক টুকরো রুটি খেয়ে দিন রাত  কাটাতো। সে নবী সা. এর দরবার থেকে কোথাও যেত না। সে পবিত্র কোরআনের চারটি সূরা শিখে নিয়েছে। সে নবীকে বলতে শুনেছে,সে কোরআন পেয়েছে কোরআন পাওয়ার পর তার কোন দরিদ্রতা নেই। সে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত পেয়েছে। তার থেকে বড় ধনাঢ্য কেউ নেই।
অতঃপর তিনি বললেন হে আল্লাহর রসূল সা. আমাকে বিয়ে করিয়ে দিন। রাসূল সা. বললেন اعندك مال (তোমার কাছে কোন মাল আছে) তিনি বলেন আমার কোরআনের চারটি সূরা মুখস্ত আছে। আর যার কাছে ওহীর জ্ঞান এবং আল্লাহর কালাম রয়েছে সে ধনী।
রসুল সা. বললেন صدقت فانطلق الى بني سلامه (তুমি সত্য বলেছ, তুমি বনি সালামা গোত্রে যাও) বোনী সালামা আনসারদের একটি শাখা গোত্রের নাম। واستخار الله فاول جاريه تستقبلك فهي زوجتك (এবং তুমি আল্লাহর কাছে কল্যাণের প্রার্থনা করতে থাকো তাদের যে কন্যা সর্বপ্রথম তোমার সাথে সাক্ষাত করবে সেই তোমার স্ত্রী ) অতঃপর সে চলতে লাগলো কিন্তু তিনি জানতেন না কোন দিকে যাবেন, হঠাৎ তার সুন্দর একটি মেয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়। সে জিজ্ঞেস করল হে মেয়ে এটা কোন গোত্র মেয়েটি বললো,এটা বনী সালামা গোত্র। যুবক তখন আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে তাকে বলল তুমি আমার স্ত্রী আমার কাছে আসো। মেয়েটি বলল তুমি তো মস্ত বড় বোকা। সে বলল না আমি বোকা নই আমাকে রসূল সা. এরকম বলেছে। মেয়েটি বলল তোমাকে আল্লাহর রসূল সা. যদি এমন বলে থাকে তাহলে তা আমার জন্য অপরিহার্য। আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার আনুগত্য করবো। তবে যতক্ষণ না আমি তা রাসুল এর মুখে শুনবো ততক্ষণ আমি তোমার কথা মানতে পারি না। অতঃপর যুবক ও মেয়েটি রসুল সা. এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
পথে মেয়েটির পিতা ও ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হলে তারা বললো তোমরা কোথায় যাচ্ছ উত্তরে মেয়েটি বলল এ যুবকের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তার ধারণা আমি নাকি তার স্ত্রী। আমি তার এ কথা প্রত্যাখ্যান করি, তখন সে বলল রসূল সা. নাকি তাকে এরূপ বলেছেন। অতএব আমি তার সাথে আল্লাহর রাসূলের দরবারে যাচ্ছি। আমি স্বয়ং তার পবিত্র মুখ থেকে কথাটা শুনবো। তার আনুগত্য করা আমাদের জন্য অপরিহার্য।
অতঃপর সকলে রসূল সা. এর দরবারে উপস্থিত হলেন। মেয়েটির পিতা রসুল সা. এর সাথে কথোপকথন করলেন। তিনি বললেন হে আল্লাহর রসূল এ অপরিচিত যুবক নিশ্চিতভাবে বলছে আমার মেয়ের সাথে যে আচরণ করেছে এর জন্য আপনি নাকি তাকে অনুমতি দিয়েছেন। তখন রসুল সা. বললেন –
نعم فزوجه ابنتك على اسم الله وبركته
(তুমি তোমার মেয়েকে তার সাথে আল্লাহর নামে ও আল্লাহর নামের বরকতে বিয়ে দিয়ে দাও) লোকটি বলে আমি তাই করছি তখন তিনি রসূল সা. ও সাহাবায়ে কেরামের উপস্থিতিতে তার মেয়েকে সে যুবকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। রসুল সা. বলেন –
لك اوقيتان  ولزوجتك اوقيتان
 (তোমার জন্য দু আওকিয়া আর তোমার স্বামীর জন্য দু আওকিয়া আউন্স) তখন যুবক বলল হে আল্লাহর রসূল সা. আমার আউকিয়া স্ত্রীকে দিয়ে দিলাম। রসূল সা. কন্যার সম্মতিতে পিতাকে বললেন। মেয়েকে আজই যুবকের জন্য প্রস্তুত করে দাও। কন্যার পিতা বললেন আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা শোনা, আনুগত্য করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। অতঃপর যুবক রসুলের কাছে এলে তিনি তাকে তার স্ত্রীর কাছে যেতে বললেন। অতঃপর সে যুবক তার ঘরে আসলো সাজসজ্জা পণ্য বিছানায় গেল সে বিছানায় চাদর বিছানো পেল। তার স্ত্রী পাশে বসা ছিল চেরাগ বাতি জ্বলছিল তার জন্য খাবার প্রস্তুত রাখা ছিল। সে যখন এসব দেখতে পেল তখন দ্রুত বিছানায় গিয়ে দু’রাকাত শুকরিয়া নামাজ আদায় করল। অতঃপর আবার দাঁড়ালো এবং আরো দুই রাকাত নামাজ আদায় করল। অতঃপর সে আরশের দিকে মাথা উঠিয়ে আল্লাহর হামদ ছানা পাঠ করলো আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করলো। এবং সে যা পেয়েছে সেগুলোর জন্য আল্লাহর হামদ সানা ও শুকরিয়া আদায় করল। এভাবে নামাজ আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় রাত অতিবাহিত করে দিল। অতঃপর সে মসজিদে চলে গেল রসূল সা. এর সাথে ফজর জোহর আসর মাগরিব এশার নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরে এলো। ঘরে এসে যখন স্ত্রী ও তার জন্য প্রস্তুতকৃত নেয়ামত রাজি দেখতে পেল সে আবার মসজিদে চলে গেল।প্রথম রাতের ন্যায় সারারাত নামাজ ও আল্লাহর কৃতজ্ঞতা কাটিয়ে দেয়। প্রতি দু’রাকাত নামাজের মাঝে আল্লাহর হামদ সানা ও শুকরিয়া আদায় করে এভাবে প্রভাত হল। রসুলের সাথে পূর্বের ন্যায় ফজর থেকে এশা পর্যন্ত নামাজ আদায় করল। এভাবে তার তিন রাত অতিবাহিত হলো। চতুর্থ রাতে কন্যার সম্মানিত পিতা খোঁজখবর নিতে মেয়ের কামরা এলো। তিনি মেয়েকে তার স্বামীর অবস্থা জিজ্ঞাসা করল তুমি স্বামীকে কেমন পেয়েছ? তার সাথে তোমার আচরণ কেমন হয়েছে? মেয়ে বলল আমার স্বামী কেমন আমি বলতে পারব না,আমি তাকে শুধু একজন নামাজী হিসেবেই জানি সে গোটা রাত নামাজ পড়ে নামাজের ফাঁকে ফাঁকে আল্লাহর হামদ ছানা পাঠ করে। তখন মেয়ের বাবা রাসুলের দরবারে হাজির হয়ে প্রিয় নবী কে ঘটনা খুলে বললেন। রাসুল সা. বললেন
  ما منعك من اهلك
(তোমার স্ত্রীর কাছে যেতে কিসে তোমাকে বাধা প্রদান করেছে ) তখন যুবক বলল- হে আল্লাহর রসূল সা. আমার পূর্বের অবস্থা স্মরণ হয়ে গেছে। আমি ইয়ামানী একজন মুশরিক ছিলাম একটি পাথর ছাড়া আমার কোন ঘরবাড়ি ছিল না। আমি পাথরটির গর্তে রাত কাটাতাম দিনের বেলায় রাস্তার পাশে থাকা গাছের ছায়ায় দিন কাটাতাম। আল্লাহ তাআলা আমাকে ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে হেদায়েত দান করেছেন। পবিত্র কোরআনের চারটি সূরা শিক্ষা দিয়েছেন সেই সূরাগুলো দ্বারা আল্লাহ তায়ালা আমার অন্তর দৃষ্টি খুলে দিয়েছেন। আমার হৃদয়ে আলোকিত করেছেন। অতঃপর আমি এ মেয়েকে বিবাহ করি। তার বিছানা রূপ লাবণ্য দেখতে পাই। অথচ আমি ইতিপূর্বে এমন কোন বিছানা দেখিনি আমি ঝলমলে বাতি দেখতে পেয়েছি। আমি পবিত্র কোরআনের যে চারটি সূরার একটি সূরা নিয়ে চিন্তা ফিকির করি এ কারণে আল্লাহ আমাকে তার ও তার আশপাশে যা আছে তা থেকে বিমুক করে দেন। রসুল সা. বললেন
واي صورة هي
সে সূরা কোনটি সে বলল তা হল
الهاكم التكاثر، حتى صرتم المقابر، كلا سوف تعلمون،ثم كلا سوف تعلمون،
অতঃপর সে কান্নায় ভেঙে পড়লো রসুল সা. এবং উপস্থিত সাহাবায়ে কেরামও কাঁদেন। অতঃপর সে যাওয়ার সময় বলল হে আল্লাহর রাসূল আপনার বিশেষ দোয়া আমাকে অন্তর্ভুক্ত করুন। রসূল সা. তার জন্য দোয়া করলেন
اللهم اغفر له الكثير، واشكره على اليسير، واغنيه برحمتك
হে আল্লাহ তুমি তাকে অধিক ক্ষমা করো, তাকে সাধারন নেয়ামতের ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী বানিয়ে দাও। তোমার রহম দ্বারা তাকে অমুখাপেক্ষী করে দাও। অতঃপর যে জামাত রসুলের নিকট সর্বপ্রথম এলো তারা এসে নবী কে সংবাদ দিয়েছে এ যুবকটি মৃত্যুবরণ করেছে। তখন রসুল সা. বললেন-
 لا اذا فرغتم من غسله اخبرني اله الا الله
আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তার গোসল দেওয়া শেষ হলে তোমরা আমাকে সংবাদ দিবে। অতঃপর প্রিয় নবী কে সংবাদ দেওয়া হল তিনি বললেন- আমি তার জান্নাতি হওয়ার সুসংবাদ দিচ্ছি। অতঃপর তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি তার সাথে কোন বাসনা পূরণ করতে পেরেছো স্ত্রী বলল না। আপনাকে যে সত্তা সত্য নিয়ে প্রেরণ করেছেন তার শপথ করে বলছি আমি তার মধ্যে কোন কামনা বাস নাই দেখতে পাইনি।
মুফতি আলাউদ্দীন আল আজাদ শ্যামনগরী
খতিব-কোনাবাড়ী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, গাজীপুর।
Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

শিবালয়ের মাচাইন মাঠে উত্তরা ও শিবালয় এসএসসি ৯৮ ব্যাচের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত

আশ্চর্য একটি ঘটনা

প্রকাশের সময়ঃ ০৫:২৫:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
মুফতি আলাউদ্দীন আল আজাদঃ হযরত ইকরিমা ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণনা করেন, ইয়ামেনে ইয়া’লা নামে একজন লোক ছিল। সে ছিল মুশরিক তার গতর ঢাকার মতো একটি চাদর ছাড়া দুনিয়াতে আর কিছুই ছিল না। সে দিনের বেলায় গাছের ছায়ায় রাতের বেলায় পাথরের পাশে কুকুরের গর্ত করে থাকার ন্যায় থাকতো।
অতপর সে শুনতে পেল প্রিয় নবী আগমন করেছেন। তখন সে ছিল যুবক। কখনো এখানে থাকতো কখনো ওখানে থাকতো। সে রাসুল সা. এর দরবারে এসে ইসলাম গ্রহণ করে সুফফার অধিবাসীদের সাথে থাকতে লাগলো। সে তাদের সাথে কয়েকটি খেজুর বা যবের এক টুকরো রুটি খেয়ে দিন রাত  কাটাতো। সে নবী সা. এর দরবার থেকে কোথাও যেত না। সে পবিত্র কোরআনের চারটি সূরা শিখে নিয়েছে। সে নবীকে বলতে শুনেছে,সে কোরআন পেয়েছে কোরআন পাওয়ার পর তার কোন দরিদ্রতা নেই। সে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত পেয়েছে। তার থেকে বড় ধনাঢ্য কেউ নেই।
অতঃপর তিনি বললেন হে আল্লাহর রসূল সা. আমাকে বিয়ে করিয়ে দিন। রাসূল সা. বললেন اعندك مال (তোমার কাছে কোন মাল আছে) তিনি বলেন আমার কোরআনের চারটি সূরা মুখস্ত আছে। আর যার কাছে ওহীর জ্ঞান এবং আল্লাহর কালাম রয়েছে সে ধনী।
রসুল সা. বললেন صدقت فانطلق الى بني سلامه (তুমি সত্য বলেছ, তুমি বনি সালামা গোত্রে যাও) বোনী সালামা আনসারদের একটি শাখা গোত্রের নাম। واستخار الله فاول جاريه تستقبلك فهي زوجتك (এবং তুমি আল্লাহর কাছে কল্যাণের প্রার্থনা করতে থাকো তাদের যে কন্যা সর্বপ্রথম তোমার সাথে সাক্ষাত করবে সেই তোমার স্ত্রী ) অতঃপর সে চলতে লাগলো কিন্তু তিনি জানতেন না কোন দিকে যাবেন, হঠাৎ তার সুন্দর একটি মেয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়। সে জিজ্ঞেস করল হে মেয়ে এটা কোন গোত্র মেয়েটি বললো,এটা বনী সালামা গোত্র। যুবক তখন আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে তাকে বলল তুমি আমার স্ত্রী আমার কাছে আসো। মেয়েটি বলল তুমি তো মস্ত বড় বোকা। সে বলল না আমি বোকা নই আমাকে রসূল সা. এরকম বলেছে। মেয়েটি বলল তোমাকে আল্লাহর রসূল সা. যদি এমন বলে থাকে তাহলে তা আমার জন্য অপরিহার্য। আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার আনুগত্য করবো। তবে যতক্ষণ না আমি তা রাসুল এর মুখে শুনবো ততক্ষণ আমি তোমার কথা মানতে পারি না। অতঃপর যুবক ও মেয়েটি রসুল সা. এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
পথে মেয়েটির পিতা ও ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হলে তারা বললো তোমরা কোথায় যাচ্ছ উত্তরে মেয়েটি বলল এ যুবকের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তার ধারণা আমি নাকি তার স্ত্রী। আমি তার এ কথা প্রত্যাখ্যান করি, তখন সে বলল রসূল সা. নাকি তাকে এরূপ বলেছেন। অতএব আমি তার সাথে আল্লাহর রাসূলের দরবারে যাচ্ছি। আমি স্বয়ং তার পবিত্র মুখ থেকে কথাটা শুনবো। তার আনুগত্য করা আমাদের জন্য অপরিহার্য।
অতঃপর সকলে রসূল সা. এর দরবারে উপস্থিত হলেন। মেয়েটির পিতা রসুল সা. এর সাথে কথোপকথন করলেন। তিনি বললেন হে আল্লাহর রসূল এ অপরিচিত যুবক নিশ্চিতভাবে বলছে আমার মেয়ের সাথে যে আচরণ করেছে এর জন্য আপনি নাকি তাকে অনুমতি দিয়েছেন। তখন রসুল সা. বললেন –
نعم فزوجه ابنتك على اسم الله وبركته
(তুমি তোমার মেয়েকে তার সাথে আল্লাহর নামে ও আল্লাহর নামের বরকতে বিয়ে দিয়ে দাও) লোকটি বলে আমি তাই করছি তখন তিনি রসূল সা. ও সাহাবায়ে কেরামের উপস্থিতিতে তার মেয়েকে সে যুবকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। রসুল সা. বলেন –
لك اوقيتان  ولزوجتك اوقيتان
 (তোমার জন্য দু আওকিয়া আর তোমার স্বামীর জন্য দু আওকিয়া আউন্স) তখন যুবক বলল হে আল্লাহর রসূল সা. আমার আউকিয়া স্ত্রীকে দিয়ে দিলাম। রসূল সা. কন্যার সম্মতিতে পিতাকে বললেন। মেয়েকে আজই যুবকের জন্য প্রস্তুত করে দাও। কন্যার পিতা বললেন আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা শোনা, আনুগত্য করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। অতঃপর যুবক রসুলের কাছে এলে তিনি তাকে তার স্ত্রীর কাছে যেতে বললেন। অতঃপর সে যুবক তার ঘরে আসলো সাজসজ্জা পণ্য বিছানায় গেল সে বিছানায় চাদর বিছানো পেল। তার স্ত্রী পাশে বসা ছিল চেরাগ বাতি জ্বলছিল তার জন্য খাবার প্রস্তুত রাখা ছিল। সে যখন এসব দেখতে পেল তখন দ্রুত বিছানায় গিয়ে দু’রাকাত শুকরিয়া নামাজ আদায় করল। অতঃপর আবার দাঁড়ালো এবং আরো দুই রাকাত নামাজ আদায় করল। অতঃপর সে আরশের দিকে মাথা উঠিয়ে আল্লাহর হামদ ছানা পাঠ করলো আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করলো। এবং সে যা পেয়েছে সেগুলোর জন্য আল্লাহর হামদ সানা ও শুকরিয়া আদায় করল। এভাবে নামাজ আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় রাত অতিবাহিত করে দিল। অতঃপর সে মসজিদে চলে গেল রসূল সা. এর সাথে ফজর জোহর আসর মাগরিব এশার নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরে এলো। ঘরে এসে যখন স্ত্রী ও তার জন্য প্রস্তুতকৃত নেয়ামত রাজি দেখতে পেল সে আবার মসজিদে চলে গেল।প্রথম রাতের ন্যায় সারারাত নামাজ ও আল্লাহর কৃতজ্ঞতা কাটিয়ে দেয়। প্রতি দু’রাকাত নামাজের মাঝে আল্লাহর হামদ সানা ও শুকরিয়া আদায় করে এভাবে প্রভাত হল। রসুলের সাথে পূর্বের ন্যায় ফজর থেকে এশা পর্যন্ত নামাজ আদায় করল। এভাবে তার তিন রাত অতিবাহিত হলো। চতুর্থ রাতে কন্যার সম্মানিত পিতা খোঁজখবর নিতে মেয়ের কামরা এলো। তিনি মেয়েকে তার স্বামীর অবস্থা জিজ্ঞাসা করল তুমি স্বামীকে কেমন পেয়েছ? তার সাথে তোমার আচরণ কেমন হয়েছে? মেয়ে বলল আমার স্বামী কেমন আমি বলতে পারব না,আমি তাকে শুধু একজন নামাজী হিসেবেই জানি সে গোটা রাত নামাজ পড়ে নামাজের ফাঁকে ফাঁকে আল্লাহর হামদ ছানা পাঠ করে। তখন মেয়ের বাবা রাসুলের দরবারে হাজির হয়ে প্রিয় নবী কে ঘটনা খুলে বললেন। রাসুল সা. বললেন
  ما منعك من اهلك
(তোমার স্ত্রীর কাছে যেতে কিসে তোমাকে বাধা প্রদান করেছে ) তখন যুবক বলল- হে আল্লাহর রসূল সা. আমার পূর্বের অবস্থা স্মরণ হয়ে গেছে। আমি ইয়ামানী একজন মুশরিক ছিলাম একটি পাথর ছাড়া আমার কোন ঘরবাড়ি ছিল না। আমি পাথরটির গর্তে রাত কাটাতাম দিনের বেলায় রাস্তার পাশে থাকা গাছের ছায়ায় দিন কাটাতাম। আল্লাহ তাআলা আমাকে ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে হেদায়েত দান করেছেন। পবিত্র কোরআনের চারটি সূরা শিক্ষা দিয়েছেন সেই সূরাগুলো দ্বারা আল্লাহ তায়ালা আমার অন্তর দৃষ্টি খুলে দিয়েছেন। আমার হৃদয়ে আলোকিত করেছেন। অতঃপর আমি এ মেয়েকে বিবাহ করি। তার বিছানা রূপ লাবণ্য দেখতে পাই। অথচ আমি ইতিপূর্বে এমন কোন বিছানা দেখিনি আমি ঝলমলে বাতি দেখতে পেয়েছি। আমি পবিত্র কোরআনের যে চারটি সূরার একটি সূরা নিয়ে চিন্তা ফিকির করি এ কারণে আল্লাহ আমাকে তার ও তার আশপাশে যা আছে তা থেকে বিমুক করে দেন। রসুল সা. বললেন
واي صورة هي
সে সূরা কোনটি সে বলল তা হল
الهاكم التكاثر، حتى صرتم المقابر، كلا سوف تعلمون،ثم كلا سوف تعلمون،
অতঃপর সে কান্নায় ভেঙে পড়লো রসুল সা. এবং উপস্থিত সাহাবায়ে কেরামও কাঁদেন। অতঃপর সে যাওয়ার সময় বলল হে আল্লাহর রাসূল আপনার বিশেষ দোয়া আমাকে অন্তর্ভুক্ত করুন। রসূল সা. তার জন্য দোয়া করলেন
اللهم اغفر له الكثير، واشكره على اليسير، واغنيه برحمتك
হে আল্লাহ তুমি তাকে অধিক ক্ষমা করো, তাকে সাধারন নেয়ামতের ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী বানিয়ে দাও। তোমার রহম দ্বারা তাকে অমুখাপেক্ষী করে দাও। অতঃপর যে জামাত রসুলের নিকট সর্বপ্রথম এলো তারা এসে নবী কে সংবাদ দিয়েছে এ যুবকটি মৃত্যুবরণ করেছে। তখন রসুল সা. বললেন-
 لا اذا فرغتم من غسله اخبرني اله الا الله
আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তার গোসল দেওয়া শেষ হলে তোমরা আমাকে সংবাদ দিবে। অতঃপর প্রিয় নবী কে সংবাদ দেওয়া হল তিনি বললেন- আমি তার জান্নাতি হওয়ার সুসংবাদ দিচ্ছি। অতঃপর তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি তার সাথে কোন বাসনা পূরণ করতে পেরেছো স্ত্রী বলল না। আপনাকে যে সত্তা সত্য নিয়ে প্রেরণ করেছেন তার শপথ করে বলছি আমি তার মধ্যে কোন কামনা বাস নাই দেখতে পাইনি।
মুফতি আলাউদ্দীন আল আজাদ শ্যামনগরী
খতিব-কোনাবাড়ী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, গাজীপুর।