০১:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শাতিমে রাসুল এর বিধান:

 

✍️মাওলানা শেখ মিলাদ হোসাইন সিদ্দিকীঃ★প্রারম্ভ:- মুরতাদ ও

শাতিমরা নবিজির সময় থেকে প্রায় সব যুগেই ছিল। কেউ প্রকাশ্যে বলার সাহস পেয়েছে, কেউবা পায়নি। যতদিন ইসলামি শাসন ছিল, ততদিন কোনো মুরতাদ বা শাতিম উল্লম্ফলন ও উন্মাদ নৃত্য করার সুযোগ পায়নি। বরং সাহসের অভাবে ঘোমটার নিচে নেচেছে। মুরতাদ ও শাতিমের ব্যাপারে শরিয়ত বরাবরই জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে।

★কোরআনের আলোকে শাতিমে রাসুলের বিধান:-

সূরা মায়েদার ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِنْ خِلَافٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآَخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ

যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে দুশমনিতে লিপ্ত হয় এবং পৃথিবীতে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টির পাঁয়তারা করে, তাদের শাস্তি কেবল মৃত্যুদন্ড, শূলিবিদ্ধ করে হত্যা কিংবা হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা অথবা নির্বাসিত করা (কারাগারে নিক্ষেপ করা)। এ তো হল তাদের পার্থিব অপমান। আর পরকালেও তাদের জন্য অপেক্ষা করছে মর্মন্তুদ শাস্তি।

🔷 আয়াতে বিভিন্ন প্রকার ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টিকারী মুহারিবের এবং তাদের অপরাধের ধরন ও মাত্রাভেদে বিভিন্ন শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর মুহারিব ও মুফসিদ (বিপর্যয় সৃষ্টিকারী) এর মাঝে সবচে’ মারাত্মক হল যারা দ্রোহের ঘোষণা দিয়ে ইসলাম ত্যাগ করে, ইসলামের অবমাননা করে মুসলিম পরিচয় দিয়ে মুমিনদেরকে তাদের ঈমানের ব্যাপারে সন্দিহান করে-ফেলার মতো দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়। উল্লিখিত আয়াতে أَنْ يُقَتَّلُوا শব্দে সর্বপ্রথম এ ধরনের মুহারিব এবং নিরপরাধ মানুষকে হত্যাকারীর শাস্তি মৃত্যুদন্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

★হাদিসের আলোকে শাতিমে রাসুল এর বিধান:-

বুখারী শরিফ এর ৬৯২২ নং হাদিসে এসেছে-

عَنْ عِكْرِمَةَ قَالَ أُتِيَ عَلِيٌّ بِزَنَادِقَةٍ فَأَحْرَقَهُمْ فَبَلَغَ ذَلِكَ ابْنَ عَبَّاسٍ فَقَالَ لَوْ كُنْتُ أَنَا لَمْ أُحْرِقْهُمْ لِنَهْيِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ تُعَذِّبُوا بِعَذَابِ اللهِ وَلَقَتَلْتُهُمْ لِقَوْلِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ

ইকরিমাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আলী (রাঃ)-এর কাছে একদল যিনদীককে (নাস্তিক ও ধর্মত্যাগীকে) আনা হল। তিনি তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন। এ ঘটনা ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, আমি কিন্তু তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলতাম না। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিষেধাজ্ঞা আছে যে, তোমরা আল্লাহর শাস্তি দ্বারা শাস্তি দিও না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। কারণ, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ আছে, যে কেউ তার দ্বীন বদলে ফেলে তাকে তোমরা হত্যা কর।

🔷সূত্র:
জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪৫৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৩৫১, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৮৭১।

★ইজমায়ে উলামায়ে উম্মাত:-

(১) হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব ফতোয়ায়ে শামীতে উল্লেখ করা হয়েছে—

قال ابو بكر بن المنذر اجمع عوام اهل العلم علي من سب النبي صلي الله عليه وسلم يقتل وممن قال ذالك مالك بن انس والليث واحمد واسحاق وهو مذهب الشافعي

হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ আলেম আবু বকর ইবনে মুনজির (রহ) বলেন, “এ ব্যপারে সকল উলামায়ে কেরাম একমত যে, যে ব্যক্তি নবী (স.)-কে কটাক্ষ করবে বা গালি দিবে তাকে হত্যা করতে হবে।

(২) শাফেয়ি মাজহাবের ফতোয়া-

قال الخطابي لا اعلم احدا من المسلمين اختلف في وجوب قتله

শাফেয়ি মাজহাবের প্রসিদ্ধ ফকিহ ইমাম খাত্তাবি (রহ.) বলেন, “নবী (স.)-এর গালিদাতাকে হত্যা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত আছে বলে আমার জানা নেই ৷” (আস সারেমুল মাসলুল: ১:৯ পৃষ্ঠা)

(৩) মালেকি মাজহাবের ফতোয়া-

ومن سب الله او رسوله او غيره من الانبياء عليهم السلام قتل حدا ولا تسقطه التوبة

যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসুল (স.)-কে কিংবা অন্য কোনো নবীকে গালি দেয় তবে ইসলামের বিধান অনুযায়ী তাকে হত্যা করা হবে। তওবার কারণে তার হত্যার বিধান রহিত হবে না ৷ ( আজ জাখিরা ফি ফিকহিল মালেকি: ১১: ৩০ পৃষ্ঠা)

৪) হাম্বলি মাজহাবের ফতোয়া-

وقد نص احد علي ذلك في مواضع متعددة قال حنبل سمعت ابا عبد الله يقول كل من شتم النبي صلي الله عليه وسلم او تنقصه مسلما كان او كافرا فعليه القتل واري ان يقتل ولا يستتاب

ইমান আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ) একাধিক স্থানে একথা ব্যক্ত করেছেন যে, যে ব্যক্তি নবী (স.)-কে গালি দেবে অথবা মানহানী করবে, তাকে অবশ্যই হত্যা করা হবে ৷ চাই সে মুসলিম হোক বা কাফের। আমি মনে করি, তাকে তাওবার সুযোগ না দিয়ে হত্যা করা হোক৷ ( আস সারেমুল মাসলুল ১:১০ পৃষ্ঠা)

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

শাতিমে রাসুল এর বিধান:

প্রকাশের সময়ঃ ০৮:১৫:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

 

✍️মাওলানা শেখ মিলাদ হোসাইন সিদ্দিকীঃ★প্রারম্ভ:- মুরতাদ ও

শাতিমরা নবিজির সময় থেকে প্রায় সব যুগেই ছিল। কেউ প্রকাশ্যে বলার সাহস পেয়েছে, কেউবা পায়নি। যতদিন ইসলামি শাসন ছিল, ততদিন কোনো মুরতাদ বা শাতিম উল্লম্ফলন ও উন্মাদ নৃত্য করার সুযোগ পায়নি। বরং সাহসের অভাবে ঘোমটার নিচে নেচেছে। মুরতাদ ও শাতিমের ব্যাপারে শরিয়ত বরাবরই জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে।

★কোরআনের আলোকে শাতিমে রাসুলের বিধান:-

সূরা মায়েদার ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِنْ خِلَافٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآَخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ

যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে দুশমনিতে লিপ্ত হয় এবং পৃথিবীতে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টির পাঁয়তারা করে, তাদের শাস্তি কেবল মৃত্যুদন্ড, শূলিবিদ্ধ করে হত্যা কিংবা হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা অথবা নির্বাসিত করা (কারাগারে নিক্ষেপ করা)। এ তো হল তাদের পার্থিব অপমান। আর পরকালেও তাদের জন্য অপেক্ষা করছে মর্মন্তুদ শাস্তি।

🔷 আয়াতে বিভিন্ন প্রকার ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টিকারী মুহারিবের এবং তাদের অপরাধের ধরন ও মাত্রাভেদে বিভিন্ন শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর মুহারিব ও মুফসিদ (বিপর্যয় সৃষ্টিকারী) এর মাঝে সবচে’ মারাত্মক হল যারা দ্রোহের ঘোষণা দিয়ে ইসলাম ত্যাগ করে, ইসলামের অবমাননা করে মুসলিম পরিচয় দিয়ে মুমিনদেরকে তাদের ঈমানের ব্যাপারে সন্দিহান করে-ফেলার মতো দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়। উল্লিখিত আয়াতে أَنْ يُقَتَّلُوا শব্দে সর্বপ্রথম এ ধরনের মুহারিব এবং নিরপরাধ মানুষকে হত্যাকারীর শাস্তি মৃত্যুদন্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

★হাদিসের আলোকে শাতিমে রাসুল এর বিধান:-

বুখারী শরিফ এর ৬৯২২ নং হাদিসে এসেছে-

عَنْ عِكْرِمَةَ قَالَ أُتِيَ عَلِيٌّ بِزَنَادِقَةٍ فَأَحْرَقَهُمْ فَبَلَغَ ذَلِكَ ابْنَ عَبَّاسٍ فَقَالَ لَوْ كُنْتُ أَنَا لَمْ أُحْرِقْهُمْ لِنَهْيِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ تُعَذِّبُوا بِعَذَابِ اللهِ وَلَقَتَلْتُهُمْ لِقَوْلِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ

ইকরিমাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আলী (রাঃ)-এর কাছে একদল যিনদীককে (নাস্তিক ও ধর্মত্যাগীকে) আনা হল। তিনি তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন। এ ঘটনা ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, আমি কিন্তু তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলতাম না। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিষেধাজ্ঞা আছে যে, তোমরা আল্লাহর শাস্তি দ্বারা শাস্তি দিও না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। কারণ, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ আছে, যে কেউ তার দ্বীন বদলে ফেলে তাকে তোমরা হত্যা কর।

🔷সূত্র:
জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪৫৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৩৫১, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৮৭১।

★ইজমায়ে উলামায়ে উম্মাত:-

(১) হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব ফতোয়ায়ে শামীতে উল্লেখ করা হয়েছে—

قال ابو بكر بن المنذر اجمع عوام اهل العلم علي من سب النبي صلي الله عليه وسلم يقتل وممن قال ذالك مالك بن انس والليث واحمد واسحاق وهو مذهب الشافعي

হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ আলেম আবু বকর ইবনে মুনজির (রহ) বলেন, “এ ব্যপারে সকল উলামায়ে কেরাম একমত যে, যে ব্যক্তি নবী (স.)-কে কটাক্ষ করবে বা গালি দিবে তাকে হত্যা করতে হবে।

(২) শাফেয়ি মাজহাবের ফতোয়া-

قال الخطابي لا اعلم احدا من المسلمين اختلف في وجوب قتله

শাফেয়ি মাজহাবের প্রসিদ্ধ ফকিহ ইমাম খাত্তাবি (রহ.) বলেন, “নবী (স.)-এর গালিদাতাকে হত্যা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত আছে বলে আমার জানা নেই ৷” (আস সারেমুল মাসলুল: ১:৯ পৃষ্ঠা)

(৩) মালেকি মাজহাবের ফতোয়া-

ومن سب الله او رسوله او غيره من الانبياء عليهم السلام قتل حدا ولا تسقطه التوبة

যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসুল (স.)-কে কিংবা অন্য কোনো নবীকে গালি দেয় তবে ইসলামের বিধান অনুযায়ী তাকে হত্যা করা হবে। তওবার কারণে তার হত্যার বিধান রহিত হবে না ৷ ( আজ জাখিরা ফি ফিকহিল মালেকি: ১১: ৩০ পৃষ্ঠা)

৪) হাম্বলি মাজহাবের ফতোয়া-

وقد نص احد علي ذلك في مواضع متعددة قال حنبل سمعت ابا عبد الله يقول كل من شتم النبي صلي الله عليه وسلم او تنقصه مسلما كان او كافرا فعليه القتل واري ان يقتل ولا يستتاب

ইমান আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ) একাধিক স্থানে একথা ব্যক্ত করেছেন যে, যে ব্যক্তি নবী (স.)-কে গালি দেবে অথবা মানহানী করবে, তাকে অবশ্যই হত্যা করা হবে ৷ চাই সে মুসলিম হোক বা কাফের। আমি মনে করি, তাকে তাওবার সুযোগ না দিয়ে হত্যা করা হোক৷ ( আস সারেমুল মাসলুল ১:১০ পৃষ্ঠা)